বিতর্কিত ‘প্লেয়ার বাই চয়েজ’ থাকছেই!

দেশের ক্রিকেট অঙ্গনে কিছুদিন ধরে আলোচনা চলছে বিতর্কিত ‘প্লেয়ার বাই চয়েজ’ নিয়ে। ‘প্লেয়ার বাই চয়েজ’ হচ্ছে দেশের ক্রিকেটারদের রুটি-রুজির যোগান খ্যাত ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের বর্তমান খেলোয়াড় বাছাই পদ্ধতি।

অতীতে অবশ্য এই পদ্ধতির প্রচলন ছিল না ডিপিএলে। ২০১২-১৩ মৌসুমে হুট করেই ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিস- সিসিডিএম জানায়, ডিপিএলের খেলোয়াড় বাছাই হবে ‘প্লেয়ার বাই চয়েজ’ পদ্ধতিতে। অর্থাৎ- বেঁধে দেওয়া থাকবে খেলোয়াড়দের মূল্য এবং সেই দামেই তাকে দলভুক্ত করবে ক্লাব। সাবেক-বর্তমান ক্রিকেটারদের ক্ষোভের মুখে গত বছর সেই নিয়ম তুলে নিতে বাধ্য হয় সিসিডিএম। কিন্তু চলতি মৌসুমে আবারও সেই পুরনো প্রথা ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

বিতর্কিত এই সিদ্ধান্তে মূলত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্রিকেটাররা। উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ক্রিকেটাররা ক্লাবের সাথে কথা বলে নিজেদের দাম নির্ধারণ করতেন। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকত বেশি। কিন্তু ‘প্লেয়ার বাই চয়েজ’ পদ্ধতিতে আগে থেকেই নির্দিষ্ট দাম নির্ধারণ করে দেওয়ায় সেই সুযোগ পাচ্ছেন না ক্রিকেটাররা। তার চেয়েও বড় কথা, আগে যে পরিমাণ পারিশ্রমিক ক্রিকেটাররা পেতেন, ‘প্লেয়ার বাই চয়েজ’ পদ্ধতিতে কারও কারও ক্ষেত্রে সেটা নেমে আসছে অর্ধেকে!

তবে ক্রিকেটারদের জন্য হতাশার বিষয়, এই সিদ্ধান্তেই ডিপিএলের আগামী আসরগুলো মাঠে গড়ানোর চিন্তা করছে সিসিডিএম। অর্থাৎ উম্মুক্ত দল কিংবা খেলোয়াড় বাছাই তো হারিয়ে গেলো, সেই সাথে খেলোয়াড়দের মূল্য নির্ধারণটাও এখন থেকে করে দিবে সিসিডিএম!

সিসিডিএমের চেয়ারম্যান কাজী ইনাম আহমেদ বলেন, ‘আমরা দল বদল পদ্ধতি হিসেবে প্লেয়ার বাই চয়েজকে স্থায়ী করা যায় কিনা তা নিয়ে বিবেচনা করবো। এ নিয়ে আমরা বোর্ডের সঙ্গে কথা বলবো, আলোচনা করে দেখবো। আমার মনে হয় বার বার পরিবর্তন না করে একটি পদ্ধতি হলে বেশ ভালো হয়।’

এবার এমন খেলোয়াড়ও আছেন, গত আসরে যার মূল্য ছিল ১৫ লাখ টাকা, যা কমে এবার হয়েছে ৮ লাখ। যদিও এই প্রসঙ্গ এড়িয়ে বারবার সিসিডিএম চেয়ারম্যান তুলে ধরতে চাইলেন কিছু খেলোয়াড়ের মূল্য বাড়ার কথাটাই, ‘গ্রেডিংটা শেষবার যা হয়েছিল সেটির চেয়েও বেড়েছে। আমরা আগের বারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এবার করার চেষ্টা করেছি। এমনকি অনেক ক্রিকেটার কিন্তু আগের চেয়েও বেশি পাবে।’

ইনাম আহমেদ আরও বলেন, ‘দেখেন অনেক ক্রিকেটারই কিন্তু উন্মুক্ত পদ্ধতিতে এর চেয়ে অনেক কম টাকায় খেলে। এখন কিন্তু সেটি হচ্ছে না। যদি উদাহরণ দিয়ে বলি, গত বছরে নতুন দল খেলাঘর ক্রিকেটারদের জন্য যে খরচ করেছে এ বছর ড্রাফট হওয়ার কারণে সেটি দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। যেমন রবিউল ইসলাম রবি গতবছর পেয়েছিল ৫ লাখ টাকা। এবার গ্রেডিংয়ে আসাতে সে পাবে ৮ লাখ টাকা। আমি মনে করি এতে কোনো ক্রিকেটারই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।’

আগের পদ্ধতিতে খেলোয়াড়দের মূল্য কম হলে সেটিও তো হতো পারফরমেন্সের বিচারে। প্রশ্ন তাই উঠছেই- এখন দাম কমে যাওয়ার পেছনে কি আদৌ পারফরমেন্সকে বিবেচনা করছে বোর্ড?

এদিকে গুঞ্জন উঠেছে, আকাশচুম্বী দাম চেয়ে বসা এক ক্রিকেটারের কারণেই নাকি ‘প্লেয়ার বাই চয়েজ’ সিস্টেমে ফিরতে বাধ্য হয়েছে বিসিবি ও সিসিডিএম। জাতীয় পর্যায়ের একটি সংবাদমাধ্যমের দাবি অনুযায়ী, ঐ ক্রিকেটার চলতি আসরের জন্য নিজের মূল্য চেয়ে বসেছিলেন ৬০ লক্ষ টাকা! যদিও শেষমেশ তাকে ২৫ লক্ষ্য টাকা মূল্য বেঁধে দিয়েছে বোর্ড।

‘আইকন’ গ্রেডে ১২ ক্রিকেটারের মধ্যে পাঁচজন পারিশ্রমিক পাবেন ৩৫ লাখ টাকা করে। ২৫ লাখ টাকা করে পাবেন ঐ গ্রেডের বাকি সাতজন ক্রিকেটার। যে ক্রিকেটারের চাহিদা দমাতে বিসিবি ও সিসিডিএম ‘প্লেয়ারস বাই চয়েজ’-এর পন্থা অবলম্বন করেছে, তিনি ঐ সাত ক্রিকেটারেরই একজন। সেই তালিকায় আছেন ইমরুল কায়েস, মুস্তাফিজুর রহমান, নাসির হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, লিটন কুমার দাস, এনামুল হক বিজয় ও রুবেল হোসেন। যদিও আলাদাভাবে জানা যায়নি বিতর্কের জন্ম দেওয়া সেই ক্রিকেটারের পরিচয়।

আজকের বাজার: সালি / ১৩ জানুয়ারি ২০১৮