বিশ্বনাথে ফসলের পোকা নিধনে পরিবেশবান্ধব ‘আলোক ফাঁদ’

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় পোকামাকড় নিধনের পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ‘আলোক ফাঁদ’র (লাইট ট্র্যাপ) ব্যবহার বেড়েছে। এক সময় কীটনাশক ব্যবহার করে ফসলের মাঠে পোকা মারা থেকে সরে এসে আলোক ফাঁদের মাধ্যমে ফসলের মাঠে পোকামাকড়ের উপস্থিতি যাচাই ও নিয়ন্ত্রণ করছে কৃষকরা।

স্বল্প খরচের এ কৌশল ব্যবহারে একদিকে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষককূল। অন্যদিকে, ক্ষতিকর কীটনাশক থেকে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষা পাচ্ছে। এই কারণে ফসলি জমি পোকামুক্ত করতে কীটনাশকের বিকল্প এ পদ্ধতি কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, উপজেলার আট ইউনিয়নে চলতি বছরে আমন ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১৩ হাজার পাঁচ হেক্টর ধরা হয়েছে। গেল বছরও একই লক্ষ্যমাত্রা ছিল।

এবার ফসলি খেতের ক্ষতিকারক পোকা নিধনে উপজেলার ২৪ ব্লকের সবগুলোতেই ১০টি করে ২৪০ ‘আলোক ফাঁদ’ বসানো হয়েছে। সপ্তাহে একদিন (প্রতি বুধবার) এর মাধ্যমে পোকা দমন করছেন কৃষকরা। পাশাপাশি ৮০ শতাংশ জমিতে পার্চিং পদ্ধতিও ব্যবহার করা হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, আমন ধানের আবাদি জমির ফাঁকা স্থানে আলোক ফাঁদ তৈরি করেছেন কৃষকরা। বাঁশের তিনটি খুঁটি ত্রিকোণাকার করে মাটিতে পুঁতে, খুঁটির মাথায় ঝুলিয়ে রাখা বৈদ্যুতিক বাল্ব। এর নিচে পাত্র রাখা। এতে কেউ রেখেছেন ডিটারজেন্ট মিশ্রিত কেউবা কেরোসিন মিশ্রিত পানি। অনেকে আবার হারিকেন ও সৌর বিদ্যুতের বাতি জ্বালিয়ে ফাঁদ তৈরি করেছেন।

সন্ধ্যা নামলেই খেতের আইলে ‘আলোক ফাঁদ’ আলোয় আলোকিত হয়। তখন জ্বলমলে আলোয় আকৃষ্ট হয়ে পোকামাকড় উড়ে এসে পাত্রে রাখা পানিতে পড়ে মারা যায়। এছাড়াও বেশ কযেকজন কৃষক খেতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করতে দেখা গেছে। গাছের ডাল ও বাঁশের কঞ্চি খেতে পুঁতে রেখেছেন তারা। এগুলোতে পাখিরা বসে খেতে ক্ষতিকারক পোকামাকড় সাবাড় করবে।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক জাবের আহমদ বলেন, ‘আলোক ফাঁদ ব্যবহারে স্বল্প খরচে আমরা ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় দমন করতে পারছি। এতে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি আমাদের আর্থিকভাবে সাশ্রয় হচ্ছে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায় জানান, ধানের জমিতে ক্ষতিকারক পোকামাকড়ের উপস্থিতি নির্ণয়ে আলোক ফাঁদের বিকল্প নেই। এর মাধ্যমে জমিতে কী কী ক্ষতিকর ও উপকারি পোকামাকড় রয়েছে তা শনাক্ত করে ক্ষতিকর পোকা নিধনে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। খবর-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান