ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রলার ডুবিতে নিহত ২১ জনের মধ্যে ১৮ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে

জেলার বিজয়নগর উপজেলার লইসকা বিলে শুক্রবার বিকেলে যাত্রীবোঝাই ট্রলারের সঙ্গে বালুবোঝাই অপর একটি ট্রলারের সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে নিহত ১৮ জনের পরিচয় জানা গেছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শনিবার সকালেও পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকেলে জেলার বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ঘাট থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে ট্রলারটি সদর উপজেলার আনন্দবাজার ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথিমধ্যে লইসকা বিল এলাকায় বিপরীত দিকে থেকে আসা একটি বালুবোঝাই ট্রলারের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে যাত্রীবোঝাই ট্রলারটি ডুবে যায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান আজ জানান, ট্রলার ডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশ নারী ও শিশুর মরদেহ রয়েছে। উদ্ধার অভিযান চলমান রয়েছে।
নিহতদের মধ্যে ১৮ জনের নাম পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলারসাদেকপুর ইউনিয়নের চিলোকূট গ্রামের আবদুল্লাহর কন্যা তাকুয়া (৮), বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের জহিরুল হক ভূইয়ার ছেলে আরিফ বিল্লাহ ওরফে মামুন ভূইয়া (২০), একই ইউনিয়নের গেরারগাঁও গ্রামের মালু মিয়ার স্ত্রী মঞ্জু বেগম (৬০), একই গ্রামের জজ মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম(৪০), তার কন্যা মুন্নী বেগম (৬), একই ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামের আবদুর রাজ্জাক ওরফে মন মিয়ার স্ত্রী মিনারা বেগম, চম্পকনগর ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামের পরিমল বিশ্বাসের স্ত্রী অঞ্জনা বিশ্বাস (৩০), তার কন্যা ত্রিদিবা বিশ্বাস (আড়াই বছর), একই ইউনিয়নের গেরারগাঁওয়ের আবদুল হাসেমের স্ত্রী কমলা বেগম ওরফে রওশন আরা, চম্পকনগর ইউনিয়নের কামাল মিয়ার মেয়ে মাহিদা আক্তার (৫), পত্তন ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামের আব্দুল বারীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৫৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার দক্ষিণ পৈরতলার আবু সাঈদের স্ত্রী মোমেনা বেগম (৫৫), পৌর এলাকার উত্তর পৈরতলার ফারুক মিয়ার স্ত্রী কাজলা বেগম, পৌর এলাকার দাতিয়ারা গ্রামের হাজী মোবাশ্বের মিয়ার মেয়ে তাসফিয়া মীম (১২), সদর উপজেলার সাদেকপুর গ্রামের মুরাদ হোসেনের ছেলে তানভীর (৮), একই ইউনিয়নের গাছতলা গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে সাজিম (৭), সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামের জারু মিয়ার মেয়ে শারমীন (১৮), ময়মনসিংহ জেলার খোকন মিয়ার স্ত্রী ঝর্ণা বেগম (৫৫)।
এদিকে শনাক্ত করে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চলছে মরদেহ শনাক্তের কাজ। সেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোজাম্মেল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর দপ্তর) আবু সাঈদ, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রশান্ত কুমার বৈদ্যসহ সরকারি কর্মকর্তারা রয়েছেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন জানান, কিছু মরদেহ ঘটনাস্থলে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জেলা সদর হাসপাতালেও বেশকিছু মরদেহ নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের স্বজনরা মরদেহ শনাক্ত করতে এখানে এসেছেন। শনাক্ত করে মরদেহ হস্তান্তর করা হচ্ছে।
ট্রলার ডুবির ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা খাঁন। তিনি বলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিনকে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনদিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া নিহতদের প্রত্যকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে।