ভালো ঘুমের জন্য মধ্যযুগের সাতটি উপায়

আধুনিক ব্যস্ত জীবনের সাথে তাল মেলাতে ভালো ঘুমের বিকল্প নেই। কিন্তু ভালো ঘুমের জন্য কি পূর্বপুরুষদের কোন সম্পর্ক আছে কিনা তা জানার চেষ্টা করেছেন ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সাশা হ্যান্ডলি। তিনি ইংল্যান্ডের মধ্যযুগের টিউডর সময়ের (১৪৮৫-১৬০৩) ঘুমের ধরণ নিয়ে গবেষণা করেছেন। সেই গবেষণায় তিনি এমন কিছু কৌশল বা ধরণ দেখতে পেয়েছেন ভালো ঘুমের জন্য যা মধ্যযুগে ইংল্যান্ডের টিউডর যুগের মানুষরা ব্যবহার করতো। এ থেকে হয়তো আধুনিক যুগের মানুষরাও ভালো ঘুমের কিছু পরামর্শ পেতে পারেন।

মোবাইল ফোন সরিয়ে রাখুন : ড. হ্যান্ডলি বলছেন, টিউডর সময়ে যদিও মোবাইল ফোন বা টেলিভিশন ছিল না, কিন্তু তারা এ সময় অন্য কোন কাজেও সময় দিতো না। কখনো কখনো বিছানায় বসে বা বিছানার পাশে তারা প্রার্থনা করতেন অথবা শুয়ে শুয়ে বই পড়তেন।
অনেক সময় নারীরা ঘুমানোর আগে সুই সুতো বা কাটা দিয়ে উলের কাপড় বুনতেন। এ ধরণের কাজ মাথাকে ঠাণ্ডা করে যা অনেকটা ধ্যানের মতো।

মধ্যরাতে একবার জেগে ওঠা: মধ্যরাতে একবার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া ভালো লণ যা টিউডর যুগেও ছিল বলে দেখতে পেয়েছেন ড. হ্যান্ডলি। তিনি বলছেন, প্রাক শিল্প যুগে মানুষজন দুইভাগে ঘুমাতো। অনেকে মধ্যরাতে ঘুম ভেঙ্গে উঠে মোমের আলোয় বই পড়তো বা চাদের আলোয় হাটাহাটি করতো। তারা হয়তো রাতে জেগে চার্চের ঘণ্টা শুনতো। সুতরাং রাত ১টা কি ২টার সময় ঘুম ভেঙ্গে খানিকণ সজাগ থাকা একেবারে খারাপ কিছু নয়।

ভালো খাবার খাওয়া: ভালো ঘুমের সঙ্গে ভালো খাবারের সম্পর্ক রয়েছে। মধ্যযুগেও টিউডোররা জানতো তাদের ভালো খাবার কি হওয়া উচিত এবং অতিরিক্ত খাবার ঘুমের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে।
ড. হ্যান্ডলি বলছেন, বিশেষ করে ঘুমের আগে খাবারের বিষয়ে তারা খুব সতর্ক ছিল। তারা এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতেন যা খানিকটা ঠাণ্ডা ধরণের। বিশেষ করে তারা অনেক শসা খেতেন।

শুধু শয়নকরে চিন্তা ঝেড়ে ফেলা: শুধুমাত্র শয়নকে ঘুমানোর চিন্তাটি আধুনিক যুগের একটি ব্যাপার। কিন্তু টিউডর যুগে পুরো বাড়িটি ঘুমানোর একটি জায়গা হিসাবে ভাবা হতো।

ড. হ্যান্ডলি বলছেন, তারা যেকোনো কইে ঘুমাতে পারতো। হযয়তো সেসব কে ঘুমানো ছাড়াও আরো অনেক কাজ হতো। নিজেদের স্বাতন্ত্র নিয়ে তাদের অত বেশি চিন্তা ছিল না। তারা হয়তো তাদের বিছানা অন্য অনেকের সঙ্গে ভাগ করে নিতেন। তাতে কখনো কখনো বিপদও ঘটতো। তবে ঘুমের জন্য একান্ত বিছানার যে ধারণা, সেটি তাদের ছিল না।

বিছানার কাছে গোবর রাখা: মধ্যযুগের ঘুমের ধরণ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ড. হান্ডলি দেখতে পেয়েছেন, তারা পোকামাকড়ের কামরড়র ব্যাপারে খুব সচেতন ছিলেন। অনেকে গোলাপের তেল শরীরে মাখিয়ে রাখতেন। আবার গ্রাম এলাকায় অনেকে বিছানার কাছে বা পায়ের দিকে গরুর শুকনো গোবর বেধে রাখতেন, যাতে পোকামাকড় তাদের শরীরে না এসে সেদিকে চলে যায়।

পরিপূর্ণ বিশ্রাম নেয়া: আধুনিক যুগের তুলনায় টিউডর যুগের মানুষরা তাদের বিশ্রামের ব্যাপারে খুবই সচেতন ছিলেন। তারা ঘুমের প্রস্তুতির জন্য অনেক সময় নিতেন। সব ধরণের কাজ থেকে আস্তে আস্তে গুটিয়ে নিতেন এবং শুধুমাত্র ঘুমের দিকেই মনোযোগ দিতেন। অনেকে ঘুমের আগে ধ্যানের মাধ্যমে মাথা থেকে সব চিন্তা সরিপয়ে দিতেন।
এখন যেমন সব যন্ত্রপাতি বন্ধ করা আর কৃত্রিম আলো থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয়া ভালো ঘুমের একটি উপায় হতে পারে।

বাচ্চাদের মতো ঘুমানো: অনেক মানুষ হয়তো রাতের বেলাতেও যখন তাদের ঘুমাতে যাওয়া উচিত, তখন অন্য কোন কাজে ব্যস্ত থাকেন। হয়তো কেউ প্রার্থনা করেন, কেউ লেখালেখি করেন বা রেস্তোরায় সময় কাটান। কিন্তু এর মাধ্যমে জীবন থেকে ঘুমের জন্য বরাদ্দ গুরুত্বপূর্ণ সময় টুকু হারিয়ে যায়। তাই ড. হ্যান্ডলি পরামর্শ দিচ্ছেন, শিশুরা যেভাবে ঘুমায়, সবার উচিত এই ঘুমের সময়টাকে সেভাবেই ব্যবহার করা।
সূত্র: বিবিসি
আজকের বাজার: ওএফ/ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮