ভিয়ারিয়ালকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে পথে লিভারপুল

এ্যানফিল্ডে বুধবার সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ভিয়ারিয়ালকে ২-০ গোলে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে পথে এক পা দিয়ে রেখেছে লিভারপুর। কিন্তু এই জয় সত্তেও লিভারপুল বস জার্গেন ক্লপ খেলোয়াড়দের সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানিয়েছেন।

দ্বিতীয়ার্ধে দুই মিনিটের মধ্যে দুই গোলে লিভারপুলের জয় নিশ্চিত হয়। উনাই এমেরির ভিয়ারিয়ালের অতিরিক্ত রক্ষনাত্মক কৌশলই শেষ পর্যন্ত লিভারপুলকে জয়ী হতে সহায়তা করেছে। ৫৩ মিনিটে জর্ডান হেন্ডারসনের ক্রস ডিফ্লেকটেড হয়ে পারভিন এস্তাপিনান নিজেদের জালেই বল জড়ালে এগিয়ে যায় রেডরা। এর দুই মিনিট পর সাদিও মানের গোলে ব্যবধান দ্বিগুন হবার পাশাপাশি দলের জয়ও নিশ্চিত হয়।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ ও লিগ কাপের শিরোপা জয়ের মাধ্যমে প্রথম ইংলিশ ক্লাব হিসেবে ঐতিহাসিক কোয়াড্রাপল জয়ের পথে এখনো ভালভাবেই টিকে রয়েছে রেডসরা। আগামী সপ্তাহে স্পেনের দক্ষিনাঞ্চলীয় শহরে ফিরতি লেগে জয়ের মাধ্যমে আগামী ২৮ মে প্যারিসের ফাইনাল নিশ্চিত করাই এখন লিভারপুলের সামনে মূল লক্ষ্য। আর সেটা হলে গত পাঁচ মৌসুমে তৃতীয়বারের মত ইউরোপীয়ান আসরের ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জণ করবে লিভারপুল।

কাল ম্যাচ শেষে লিভারপুল বস ক্লপ বলেছেন, ‘বিরতির পর আমরা দুই গোল দিয়েছি। এই মুহূর্তে শতভাগ নিশ্চিত হতে হলে আমাদের পুরোপুরি সতর্ক থাকতে হবে। দ্বিতীয়ার্ধে যেভাবে খেলেছি সেটাই প্রথমার্ধে খেলা উচিত ছিল। আমরা জানি যে স্পেনের মাটিতে খেলাটা খুব একটা সহজ হবে না।’

আরেক সেমিফাইনালে ইতিহাদ স্টেডিয়ামে রোমাঞ্চকর ম্যাচে ম্যানচেস্টার সিটি ৪-৩ গোলে রিয়াল মাদ্রিদকে পরাজিত করেছে। ম্যাচটিতে মাদ্রিদ পরাজিত হলেও এক মুহূর্তের জন্য ছেড়ে কথা বলেনি। আগামী সপ্তাহে স্প্যানিশ জায়ান্টদের আতিথ্য পাবে সিটিজেনরা। পরিবেশ ও ফর্ম বিবেচনায় ম্যাচটিতে জয় নিশ্চিত করতে হলে সিটিকে কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হবে।

জুভেন্টাস ও বায়ার্ন মিউনিখকে পরাজিত করে এমেরির দল সেমিফাইনালের টিকিট পেয়েছিল। কালও এমেরি লিভারপুলের বিপক্ষে ঐ একই কৌশলে দল সাজিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু ইয়েলো সাবমেরিনরা এই কৌশলে কাল মোটেই সুবিধা করতে পারেনি। ঘরের মাঠে অপ্রতিরোধ্য লিভারপুলকে টপকে যাওয়া মোটেই সহজ কাজ নয়, সেটা ভালভাবেই বুঝতে পেরেছিল ভিয়ারিয়াল। পুরো ম্যাচে তাদের প্রতিরোধ করতে করতে আক্রমনের ধার আর বাড়াতে পারেনি এমেরির শিষ্যরা। এমেরি বলেছেন, ‘২-০ গোলের জয়টা স্পষ্ট ছিল, এই ফলাফল তাদের প্রাপ্য। গোলের সংখ্যা আরো বাড়তে পারতো। কিন্তু আমাদের এখনো সময় আছে। ঘরের মাঠে আমরা যে ভিন্ন ম্যাচ খেলার যোগ্যতা রাখি তা আমি দেখাতে চাই।’

এনিয়ে এবারের মৌসুমে সর্বমোট ১৩৫ গোল করলো রেডসরা। কিন্তু কাল প্রথমার্ধে গোলশুন্য থাকাটা সত্যিই হতাশাজনক ছিল। শুরুতে মোহাম্মদ সালাহর নিখুঁত ক্রস থেকে মানের হেড জালের ঠিকানা খুঁজে পায়নি। সেনেগালিজ এই তারকার ডিফ্লেটটেড হেডটি অল্পের জন্য ক্রসবারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। এরপর লিভারপুলের বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা ভিয়ারিয়াল গোলরক্ষক জেরোনিমো রুলির দুর্দান্ত দক্ষতায় ব্যর্থ হয়েছে। বিরতির আগে আরো একটি দুর পাল্লার শটে লিভারপুল ডেডলক ভাঙ্গতে পারেনি। থিয়াগো আলচানতারার শট পোস্টে লেগে ফেরত আসে।

বিরতির পর ছয়বারের ইউরোপীয়ার চ্যাম্পিয়নরা আরো বেশী আগ্রাসী হয়ে খেলা শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় দ্রুত সফলতাও পেয়ে যায়। ভার্জিল ফন ডিকের সহায়তায় ফ্যাবিনহোর দেয়া গোল অফসাইডের কারনে বাতিল হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ৫৩ মিনিটে আর কোন ভুল করেননি হেন্ডারসন। তার ডিফ্লেকটেড শটটি শেষ পর্যন্ত রক্ষনভাগের সহায়তায় জালে প্রবেশ করলে পুরো এ্যানফিল্ডে স্বস্তি ফিরে আসে। এই গোলের স্রোতে সফরকারীরা লিভারপুলের আক্রমনের বিপরীতে আর পেরে উঠেনি। ৫৫ মিনিটে সালাহর দুর্দান্ত পাসে মানে রুলিকে পরাস্ত করলে ব্যবধান দ্বিগুন হয়। এন্ডি রবার্টসনের স্ট্রাইক আবারো অফসাইডের কারনে বাতিল হয়ে গেলে আপাতত রক্ষা পায় ভিয়ারিয়াল।

২০১৬ সালে লিভারপুলের প্রথম মৌসুমে এই এমেরির কাছে ইউরোপা লিগের শিরোপা হারিয়েছিলেন ক্লপ। ঐ সময় এমেরি সেভিয়ার কোচ ছিলেন। ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত চারটি ইউরোপা লিগের শিরোপা জয় করার কৃতিত্ব রয়েছে এমেরির। যদিও ছয় বছর পর এখন সম্পূর্ণ পরিবর্তিত লিভারপুলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ক্লপ। সেই আত্মবিশ্বাস থেকেই স্প্যানিশ দলটিকে টপকে ফাইনলে খেলার ব্যপারে লিভারপুলকেই টপ ফেবারিট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান