ভ্রমণ পিপাসুদের টানছে রৌমারি বিল

দিন দিন জনপ্রিয় হয় উঠছে রৌমারি বিল। শহরের বিষাক্ত আবহাওয়া ছেড়ে মুক্ত বাতাসে প্রাণ ভরে নি:শ্বাস নিতে রৌমারি বিলের প্রাণে ছুটে যেতে চায় মন। প্রতিবছর বর্ষা-শরৎকালে রৌমারি বিল হয়ে উঠে পূর্ণ যৌবনা। এ সময় বিলের সৌন্দর্য বেড়ে যায় দ্বিগুণ। তাই এ মৌসুমে উত্তম সময় এমন স্থান ভ্রমণের। যারা ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য অন্যতম এক দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠছে রৌমারী বিল।

রৌমারি বিলটি জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ঝাউগড়া ইউপির শেখ সাদীতে অবস্থিত। শত বছরের পুরোনো এ বিলের পূর্ব নাম ছিলো রৌমারি টুপকার চর বিল। কালের আবর্তে আজ রৌমারি বিল হিসেবেই বেশ পরিচয় ঘটছে নতুন করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, এ বিলের দুই ধারে থৈথৈ করছে পানি। আর মাঝ বরাবর চলে গেছে পিচঢালা-আধাপাকা সড়ক। আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। পড়ন্ত বিকেলে বিলের মাঝখান দিয়ে চলা সড়কপথটি যেন ব্যস্ত হয়ে ওঠেছে দর্শনার্থীদের আনাগোনায়। সড়কপথে হাঁটতে হাঁটতে অনেকেই বিলের খোলা হাওয়া গায়ে লাগান। এছাড়াও মোটরসাইকেলে চড়ে বিলের দুই ধারের সৌন্দর্য উপভোগ করাটাও বেশ রোমাঞ্চকর।

যাতায়াত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো থাকায় বহু দূরদূরান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসুরা বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন। বর্ষা মৌসুম চলে যাওয়ায় দর্শনার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমে গেলেও ছুটিরদিনে মানুষের উপচে পড়া ভিড় জমে বিলে মুক্ত আকাশে মুক্ত হাওয়ায়।

চাইলে ছুটির দিন আপনিও পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন এই বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। জামালপুর সদর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এ বিল। জামালপুর সদর থেকে সিএনজি কিংবা অটোরিকশায় হাজিপুর বাজার। তারপর অটোরিকশা কিংবা ভ্যানযোগে রৌমারি বিলে সহজেই যাওয়া যায়। এতে খরচ হবে মাত্র ৪০থেকে ৪৫ টাকা। বিলের বুকে নৌকা নিয়েও ঘুরতে পারবেন। সড়কের পাশেই নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়। নৌকা ভ্রমণের খরচও বেশ কম।

বিলে ঘুরতে গেলে দর্শনীয় স্থানের মধ্যে গান্ধী আশ্রমও রয়েছে। গান্ধী আশ্রম এ বিলের পাশেই অবস্থিত। নৌকা কিংবা সড়কপথে মাত্র ১০-১৫ মিনিট সময় লাগবে গান্ধী আশ্রমে পৌঁছাতে।

স্থানীয় বাসিন্দা ইউনুস আলী জানান, রৌমারি বিল শত বছরের পুরাতন একটি বিল। এ বিলের পূর্ব নাম ছিলো রৌমারি টুপকার চর বিল। এই বিলে শীতের সময় বহু অতিথি পাখি আসতো। যা এখন আর দেখা যায় না। চৈত্র-পৌষ-মাঘ মাসে বহু মাছ পাওয়া যেতো। বহু দূর দূরান্ত থেকে মানুষজন এসে মাছ শিকার করতো।

কথা হয় বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা সাইফুল ও রহমত নামে দুজন ভ্রমণপিপাসুর সঙ্গে। তারা জানান, গত দুই বছর আগেও এই জায়গাটি এমন ছিলো না। শুধু পায়ে হেঁটে অথবা সাইকেল দিয়ে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাতায়াত করা যেতো। কিন্তু জায়গাটি আমূল পরিবর্তন হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ চৌধুরী ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হিল্লোল সরকারের কল্যাণে তারা তাদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে এই জায়গাটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছেন।

ইউএনও মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, মূলত এই কাজটি জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানেই হচ্ছে। আমরা শুধু দেখভাল করে যাচ্ছি। তবে এই জায়গাটির অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে জায়গাটিকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এরইমধ্যে এ বিলের নকশা প্রস্তুতসহ সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেছেন, নৈসর্গিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঠিক রেখে মেলান্দহের (টুপকারচর) রৌমারি বিলে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে ৷ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ, চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ছানোয়ার হোসেন ছানুসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তথ্য-ডেইলি বাংলাদেশ

আজকের বাজার/আখনূর রহমান