মরগান-মালানের ব্যাটিংএ রেকর্ড গড়ে জিতলো ইংল্যান্ড

অধিনায়ক ইয়োইন মরগান ও ডেভিড মালানের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে রেকর্ড গড়ে জিতলো ইংল্যান্ড। গতরাতে সিরিজের দ্বিতীয় টি-২০তে পাকিস্তানের ছুঁড়ে দেয়া ১৯৬ রানের টার্গেট স্পর্শ করে ৫ উইকেটে ম্যাচ জিতে ইংলিশরা। রান তাড়া করে পাকিস্তানের বিপক্ষে এটিই সবচেয়ে বড় জয় স্বাগতিক ইংল্যান্ডের। মরগান ৩৩ বলে ৬৬ ও ৩৬ বলে অপরাজিত ৫৪ রান করেন মালান।

এর আগে একই ভেন্যুতেই সিরিজের প্রথম টি-২০ বৃষ্টির কারনে পরিত্যক্ত হয়েছিলো। দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং বেছে নেয় ইংল্যান্ড। ব্যাট হাতে নেমে দলকে দারুন সূচনা এনে দেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার অধিনায়ক বাবর আজম ও ফখর জামান। ৮ দশমিক ৩ ওভারে দলকে ৭২ রান উপহার দেন তারা। ২২ বলে ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৬ রান করা জামানকে শিকার করে ইংল্যান্ডকে প্রথম সাফল্য এনে দেন ইংল্যান্ডের স্পিনার আদিল রশিদ।

জামানের আউটের পর অভিজ্ঞ মোহাম্মদ হাফিজকে নিয়ে পাকিস্তানের ইনিংস গড়তে থাকেন বাবর। দলের স্কোর শতরানের কোটা পার করেন তারা। এরমধ্যে টি-২০ ক্যারিয়ারের ১৪তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান বাবর। এই সিরিজে সেঞ্চুরি করার ঘোষনা দেয়া বাবর শেষ পর্যন্ত থামেন ৫৬ রানে।

স্পিনার রশিদের দ্বিতীয় শিকার হবার আগে ৭টি চারে ৪৪ বলে নিজের ইনিংসটি সাজান বাবর। হাফিজের সাথে দ্বিতীয় উইকেটে ২৪ বলে ৪০ রান যোগ করেছিলেন বাবর।

বাবর ফিরে গেলে, পাকিস্তানের রানের চাকা দ্রুতই ঘুড়িয়েছেন দেশটির সাবেক অধিনায়ক হাফিজ। ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি মেরে ২৬ বলে টি-২০ ক্যারিয়ারের ১২তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। ইনিংসের শেষ ওভারের পঞ্চম বলে আউট হবার আগে প্রায় ১৯২ স্ট্রাইক রেটে ৩৬ বলে ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৬৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন হাফিজ। তার ব্যাটিং দৃঢ়তায় ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৯৫ রানের বড় সংগ্রহ পায় পাকিস্তান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এটিই সর্বোচ্চ দলীয় রান পাকিস্তানের। আগেরটি ছিলো ৬ উইকেটে ১৭৩ রান।

এই ইনিংস দিয়ে বিশ্বের নবম ও পাকিস্তানের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেটে নিজের ৯৩তম ম্যাচে ২হাজার রান পূর্ণ করেন হাফিজ। পাকিস্তানের পক্ষে সবার আগে ২হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন আরেক অভিজ্ঞ খেলোয়াড় ও সাবেক অধিনায়ক শোয়েব মালিক। এ ম্যাচে মালিকের ব্যাট থেকে আসে ১১ বলে ১৪ রান। ইংল্যান্ডের রশিদ ৩২ রানে ২ উইকেট নেন।

জয়ের জন্য ১৯৬ রানের বড় লক্ষ্যে শুরুটা উড়ন্তই ছিলো ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার টম ব্যাটন ও জনি বেয়ারস্টোর। পাওয়ার-প্লেতেই ৬৫ রান করেন তারা। প্রতিপক্ষের ইনিংসের সপ্তম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসেই দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে উইকেট তুলে নেন পাকিস্তানের স্পিনার শাদাব খান। দুই ওপেনারই শিকার হন তার। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৪ বলে ৪৪ রান করেন বেয়ারস্টো। প্রথম টি-২০তে ৪২ বলে ৭১ রান করা ব্যাটনের স্কোর ছিলো ১৬ বলে ২০।

দলীয় ৬৬ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে কিছৃটা হলের চাপে পড়ে ইংল্যান্ড। কিন্তু দ্রুত দলকে চাপ মুক্ত করে জয়ের পথ তৈরি করতে থাকেন মালান ও অধিনায়ক মরগান। ১২তম ওভারে শতরান ও ১৫তম ওভারে দলের স্কোর দেড়শ স্পর্শ করান মালান-মরগান জুটি। ঐ ওভারে পাকিস্তানের পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদিকে ১টি ছক্কা ও তিনটি চার মেরে টি-২০ ক্যারিয়ারে ১৪তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন মরগান।

জয় থেকে ১৮ রান দূরে থাকতে থামতে হয় মরগানকে। পাকিস্তানের পেসার হারিস রউফের শিকার হবার আগে ৩৩ বলে ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন তিনি। তৃতীয় উইকেটে মরগান-মালান জুটি ৬২ বলে ১১২ রান যোগ করেন।

মরগানের পর দ্রুতই আরও দুই উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে ফেরার আভাস দিয়েছিলেন শাদাব ও রউফ। মঈন আলিকে ১ ও স্যাম বিলিংসকে ১০ রান বিদায় দেন তারা। কিন্তু ৫ বল বাকী থাকতে ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন মালান।

চার মেরে জয় নিশ্চিত করা মালান ৩৬ বলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান। টি-২০ ক্যারিয়ারে ষষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ পান তিনি। পাকিস্তানের শাদাব ৩টি ও রউফ ২টি উইকেট নেন। ম্যাচের সেরা হয়েছেন ইংল্যান্ডের মরগান।

এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড। আগামীকাল বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় একই ভেন্যুতে হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-২০।

সংক্ষিপ্ত স্কোর (টস-ইংল্যান্ড):-

পাকিস্তান: ১৯৫/৪, ২০ ওভার (হাফিজ ৬৯, বাবর ৫৬, ফখর ৩৬, রশিদ ২/৩২)।

ইংল্যান্ড: ১৯৯/৫, ১৯.১ ওভারে (মরগান ৬৬, মালান ৫৪*, বেয়ারস্টো ৪৪, শাদাব ৩/৩৪)।

ফল: ইংল্যান্ড ৫ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচ সেরা: ইয়োইন মরগান (ইংল্যান্ড)।

সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান