মানবসম্পদ এখন ব্যবসার কৌশলগত অংশীদার

‘এইচ আর এখন হিউম্যান ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট থেকে আরো বদলে যাচ্ছে। এখন বলা হচেছ, এইচআর ইজ অ্যা স্ট্র্যাটেজিক বিজনেস পার্টনার। এখন এইচআর কিন্তু স্ট্র্যাটেজিক বিজনেস পার্টনার। এইচ আর বিভাগকে বিজনেস বুঝতে হবে। যেখানে যাবে, ওই বিজনেস সম্পর্কে তার ধারণাটা থাকতে হবে, তাহলেই কিন্তু সে অনেক ভালো করবে। এই কারণে ওয়ার্ল্ডের অনেক জায়গায় বলা হচ্ছে, এইচ আর- ইজ অ্যা স্ট্র্যাটেজিক বিজনেস পার্টনার। তাহলে পার্টনার মানে হলো, সে ব্যবসাটাকে বাড়িয়ে দিতে পারবে। বিজনেসের সুখে-দুখে, ভালো-মন্দে কিন্তু সে সঙ্গে থাকবে। এ কারণেই এইচ আর হলো স্ট্র্যাটেজিক বিজনেস পার্টনার। এই জায়গাগুলো, বদলগুলো কিন্তু এইচ আরে চলে আসছে। এর মধ্যে আমাদের দেশে স্বাভাবিকভাবে যে জিনিসটা এখনও পর্যন্ত আমরা হিউম্যান রিসোর্স বলছি, কিন্তু অতি শিগগিরই এটাকে আমরা হিউম্যান ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট-এ নিয়ে আসবো’ — জেএমআই গ্রুপের জি এম (এইচআর অ্যান্ড এডমিন) মোঃ আলী হোসেন বলেছেন এসব কথা। আজকের বাজার ও আজকের বাজার টেলিভিশন এবি টিভির সঙ্গে তাঁর আলাপনের সারাংশ তাাঁরই ভাষায় প্রকাশ করা হলো।

হউম্যান রিসোর্স আগে যেমন ছিল
সাধারণভাবে যদি চিন্তা করেন, বেশি দিনের কথা নয়; আগে এই জায়গাটা স্টার্ট হতো পার্সোনাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন দিয়ে,বলা হতো পার্সোনাল ডিপার্টমেন্ট। এইচ আর বলতে সেই সময়টায় কোনও প্লাটফর্ম ছিল না। এগুলো পার্সোনাল ডিপার্টমেন্টের কাজ আর কী? সেটা হচ্ছে, তার ক্যান্টিন ম্যানেজমেন্ট, তার হাউস কিপিং, তার অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ইস্যু, তারপর ট্রান্সপোর্ট ইস্যুগুলোর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি রিলেটেড ছিল। তারপর দেখা গেল, শুধু এগুলো হলে তো হবে না। মানব সম্পদ উন্নয়ন লাগবে, চাকুরেদের মধার যথাযথ ব্যবহার করার জন্য নিয়ে আসা হলো হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট। কারণ তখন তারা দেখলো যে, আসলে মানুষকে তো আপনি সবসময় নিয়ন্ত্রণ করে, মার দিয়ে, বকা দিয়ে পারবেন না। সেক্ষেত্রে আপনাকে যা করতে হবে, তাকে আসলে নার্সিং করতে হবে; যাতে আপনি তার কাছ থেকে আউটপুট পান। মানুষ যে একটা সম্পদ তখন এই বদল আসলো। তখন থেকে পুরো বিষয়টাই হলো, হিউম্যান রিসোর্স।

হিউম্যান ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট
হিউম্যান হলো রিসোর্স, তাকে আমাদের প্রোপারলি অ্যাড্রেস করতে হবে, প্রোপারলি নার্সিং করতে হবে। তাহলে আমি আউটপুট পাবো। তারপরে আস্তে আস্তে এইচ আর বদলে গিয়ে হয়েছে হিউম্যান ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট। আগে রিসোর্স বলা হতো, এখন হিউম্যানকে বলা হচ্ছে ক্যাপিটাল। তো হিউম্যান একটা ক্যাপিটাল। তাকে আপনি যত ভালভাবে ইনভেস্ট করতে পারবেন, যত ভালোভাবে এটাকে আপনি জায়গা মতো বসাতে পারবেন, যত ভালোভাবে নার্সিং করতে পারবেন, যত ভালোভাবে তাকে রাখবেন, সে ততই আপনাকে আউটপুট দিবে। এই যে হিউম্যান ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট বলা হয় এখন, ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিসহ অন্যান্য দেশ এখন আরো এগিয়ে গিয়েছে। এইচ আর বদলে গিয়ে হিউম্যান ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট হয়েছে।

স্ট্র্যাটেজিক বিজনেস পার্টনার
এখন হিউম্যান ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট থেকেও আরো বদলে যাচ্ছে। এখন বলা হচেছ, এইচ আর ইজ অ্যা স্ট্র্যাটেজিক বিজনেস পার্টনার। এখন এইচ আর কিন্তু স্ট্র্যাটেজিক বিজনেস পার্টনার। এইচ আর বিভাগকে বিজনেস বুঝতে হবে। যেখানে যাবে, ওই বিজনেস সম্পর্কে তার ধারণাটা থাকতে হবে, তাহলেই কিন্তু সে অনেক ভালো করবে। এই কারণে ওয়ার্ল্ডের অনেক জায়গায় বলা হচ্ছে, এইচ আর- ইজ অ্যা স্ট্র্যাটেজিক বিজনেস পার্টনার। তাহলে পার্টনার মানে হলো, সে ব্যবসাটাকে বাড়িয়ে দিতে পারবে। বিজনেসের সুখে-দুখে, ভালো-মন্দে কিন্তু সে সঙ্গে থাকবে। এ কারণেই এইচ আর হলো স্ট্র্যাটেজিক বিজনেস পার্টনার। এই জায়গাগুলো, বদলগুলো কিন্তু এইচ.আরে চলে আসছে। এর মধ্যে আমাদের দেশে স্বাভাবিকভাবে যে জিনিসটা এখনও পর্যন্ত আমরা হিউম্যান রিসোর্স বলছি, কিন্তু অতি শিগগিরই এটাকে আমরা হিউম্যান ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট-এ নিয়ে আসবো।

এমপ্লয়ি ডেভেলপমেন্ট
তারপরে হলো এমপ্লয়ি ডেভেলপমেন্ট। এখন আমাদের আগের যে ধারণাগুলো ছিলো, এমপ্লয়িকে ট্রেনিং দিলে সে ট্রেইন্ড-আপ হয়ে চলে যাবে। তার পেছনে এই কস্ট বা এত খরচ দিয়ে লাভ কী ? যখনই কোনো কোম্পানি অর্থনৈতিকভাবে খারাপ অবস্থায় থাকতো, তার কস্ট যদি কাটিং করতে হতো, সবার আগে ট্রেনিংয়ের যে বাজেটটা আছে সেখান থেকে কাটিং করতো। কারণ ট্রেনিংটাকে তারা মনে করছে যে, সাথে সাথে রিটার্ন পাওয়া যাচ্ছে না। বাস্তবতা হলো, যারা এই জিনিসটা করেছে, তারাই পিছিয়ে গিয়েছে। কিন্তু যারা হিউম্যান রিসোর্সকে ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে সমন্বয় করেছে, এটার ফল কিন্তু তারা পেয়েছে। আপনি যেভাবে কাজটা করবেন, আপনি যতদিন কাজটা করবেন, কোম্পানি কিন্তু লাভবান হবে। এজন্য ট্রেনিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিবর্তনগুলো আসছে। এখন অনেক জায়গায় বুঝেছেন যে, ট্রেনিং দরকার, ট্রেনিং দিতে হবে। মেধাগুলো রাখতে হবে। যারা বা যে জায়গা এটি বুঝে না, তাদের ট্রেইনড করতে হবে। এই পরিবর্তন এরইমধ্যে চলে আসছে।

কী-পারফর্মেন্স ইন্ডিকেটর
আগে এসিআর ছিলো, অ্যানুয়াল কনফিডেনশিয়াল রিপোর্ট। এটা কিন্তু এখন নেই। এখন যেটা হচ্ছে, কেপিআই বা কী পারফর্মেন্স ইন্ডিকেটর। কী কী বিষয়ের উপর ভিত্তি করে আপনাকে মূল্যায়ণ করা হয়, এই কী-পারফর্মেন্স ইন্ডিকেটর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরচেয়ে আরও বড় স্তরে যদি যান, ব্রডার সেন্সে, কেআরএ অর্থাৎ কী রেজাল্ট এরিয়া। ওটার উপর তার কেপিআই (কী পারফর্মেন্স ইন্ডিকেটর) হয়। ওটার উপর ভিত্তি করে কিন্তু তার দক্ষতার মূল্যায়ণ করা হয়। আবার এরকমও হচ্ছে যে, স্বাভাবিকভাবে আপনি জানবেন, এই কেপিআই ডিপেন্ড করছে ৩৬০ ডিগ্রি প্রসেসে, এভাবে কিন্তু এই ইভাল্যুয়েশনগুলো হয়।

৩৬০ ডিগ্রি ইভাল্যুয়েশন
স্বাভাবিকভাবে, যেটা হলো, আপনার দক্ষতার মূল্যায়ণ হচ্ছে সুপারভাইজার নির্ভর, তিনি আপনাকে কোথায় কী মার্কিং দিয়েছেন; কম কেন, বেশি কেন, তা নিয়ে বিতর্ক করতে পারবেন। আপনার সুপারভাইজার আপনাকে ইভাল্যুয়েট করবেন। আপনার সুপিরিয়র আপনাকে মূল্যায়ণ করবেন। আপনার জুনিয়রও আপনাকে ইভাল্যুয়েট করবে। আপনার বাইরের কোনও সাপ্লায়ার কেউ যদি থাকে, তাহলে সে ও তো আপনাকে ইভালুয়েট করবে। এই যে, ৩৬০ ডিগ্রি প্রসেসে কিন্তু এখন মূল্যায়ণ হচ্ছে। আগে মনে করেন, আমি সুপারভাইজার, মনে হলো, এটা দিয়ে কনফিডেনশিয়াল দেখে করে নেব। এখন কিন্তু এটা নাই, ফেস টু ফেস বসা লাগবে। এই পরিবর্তনগুলো এইচ.আরে আসছে।

স্ট্র্যাটেজিক ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট
স্ট্র্যাটেজিক ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য পরিবর্তনগুলো আসছে। কীভাবে আমার ট্যালেন্টগুলো ধরে রাখতে হবে? এই চিন্তা-ভাবনা কিন্তু অর্গানাইজেশনগুলোর ভেতরে এসেছে। ফলে এই ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্টও কিন্তু একটা ডিপার্টমেন্ট বা এই ধরনের কিছু একটা হয়ে গেছে। এবং ট্যালেন্টকে ধরে রাখার জন্য যা করা দরকার, আমরা স্বাভাবিকভাবে বলি যেটা হলো সাকসেশন প্ল্যান, না বলে এখন কিন্তু আমরা বলছি, ফিউচার লিডার ক্রিয়েটর।
এই ট্যালেন্টগুলোকে নিয়ে নার্সিং করে, ট্রেনিং দিয়ে, এক্সপোজার দিয়ে, নেটওয়ার্কিং-এ বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। এভাবে নার্সিং করা হচ্ছে। তাদের যে চাহিদা বা প্রয়োজন, সেগুলোকে পূরণ করা হচ্ছে। এই পরিবর্তনগুলো আসছে। এখন ট্যালেন্ট ধরে রাখার জন্য কোম্পানিগুলো অনেক চেষ্টাই করছে। স্যালারি হোক, ট্রেনিং হোক, তাকে এমপাওয়ারমেন্ট দিয়ে বিভিন্ন ফোরামে পাঠিয়ে, বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজিক ডিসিশন নিতে দিয়ে, ট্যালেন্টগুলোকে কিন্তু কাজে লাগাচ্ছে কোম্পানিগুলো। ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট করতে তো বড় পরিবর্তন লাগবে।

এমপ্লয়ি এনগেজমেন্ট
তারপর এমপ্লয়ি এনগেজমেন্ট। চাকুরেদের ধরে রাখতে হবে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে। বিভিন্ন ইভেন্ট ধরে চাকুরেদের যুক্ত রাখতে হবে। যেমন, মনে করেন বিভিন্ন ইনডোর গেম চালু করলেন, পিকনিক করলেন, ফুটবল-ক্রিকেটের মতো স্পোর্টস টুর্নামেন্ট করা, মাঝে মধ্যে এমপ্লয়িদের বার্থ ডে সেলিব্রেট করা, বিভিন্ন প্রোগ্রাম করে সহকর্মীদের যুক্ত রাখা। এটা হলো পিপল এনগেজমেন্ট। এগুলো বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় চলে আসছে।

সফটওয়্যার বেইজড সিস্টেম
এখন যে পরিবর্তন আসছে, পুরোপুরি সফটওয়্যার বেইজড হয়ে যাচ্ছে, ইআরপি বেইজড হয়ে আসছে এইচ আর। ইআরপি বেইজড এইচ.আর হয়ে যাওয়ার ফলে সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই পেপারলেস হয়ে যাচ্ছে। আপনি স্যালারি বলেন, এইচ আর আই এস বা হিউম্যান রিসোর্স ইনফরমেশন সিস্টেম বলেন, এগুলো কিন্তু টোটালি কম্পিউটারাইজড হয়ে যাচ্ছে।

আপনি মনে করেন, রিক্রুট করবেন। ইনফরমেশনগুলো দেওয়া, কেউ সিলেক্ট হয়েছে, তাকে তার সেই ইনফরমেশন দেওয়া, ভালো করলে তাকে কংগ্রাচুলেট করা এবং যদি সে কোয়ালিফাই না করে, তাকে রিগ্রেট লেটার সবই কিন্তু সফটওয়্যারের মাধ্যমে হয়ে যাবে।

আসছে এইচ আর কমপ্লায়েন্স
তারপর আরও কিছু বদল চলে এসেছে, এখন এইচ আরের কমপ্লায়েন্সগুলোও করতে হচ্ছে। আমরা পুরোপুরি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের উপর ডিপেন্ড করে লোকজনকে ধমকিয়ে, চাকরি থেকে বের করে দিয়ে, গালাগালি করে প্রতিষ্ঠান চালানোর চেষ্টা করি। যখনই কমপ্লায়েন্স-এর কথা আসলো যে, সে বেনিফিটগুলো পাচ্ছে কি না, তার প্রভিডেন্ট ফান্ড আছে কি না, তার লাইফ ইন্স্যুরেন্স আছে কি না, গ্রাচুইটি আছে কি না, স্যালারি স্ট্র্যাকচারটা আছে কি না। এগুলোর বিবেচনা করা হোক। তারপর যে জিনিসটা দাঁড়ালো, এই এইচ আর কমপ্লায়েন্সের ফলে আপনার একচেটিয়া কোনও রকমের কিছু করা সমভব হচ্ছেনা। মনে করেন আপনি একজনকে শুধু শুধু টার্মিনেট করে দিলেন, কোনও কারণ ছাড়াই। এখন, কমপ্লায়েন্স হওয়ার ফলে, এটা থাকলো না। যৌক্তিক কারণ না থাকলে কিন্তু আপনি জব টার্মিনেট করতে পারবেন না।

এইচ আরের চ্যালেঞ্জ
পাশাপশি অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের কথাও আমি বলতে চাই। চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে আছে ট্যালেন্টটাকে রিটেইন করা। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এই ট্যালেন্টটাকে কীভাবে পুরষ্কৃত করে তাকে রাখা যায়। এ বিষয়টিও একটি বড় বিষয়।

মোঃ আলী হোসেন
জিএম অ্যান্ড হেড অব এইচআর এন্ড এডমিন
জেএমআই গ্রুপ
(জাপান ও কোরিয়ার সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠান)

আজকের বাজার: আরআর/ ১৬ আগস্ট ২০১৭