মিয়ানমারের বিচার হওয়া উচিত আন্তর্জাতিক আদালতে

ক্ষমতার লোভে মানবিকতা ভুলে গেছেন সু চি। নারী সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ে এ কথা বলেন নোবেল জয়ী দুই নারী ম্যারেইড ম্যাগুয়ার ও শিরিন এবাদি। তারা বলছেন, এমন অমানবিকতার প্রতিবাদ করা উচিত পুরো বিশ্বের । মিয়ানমারের বিচার হওয়া উচিত আন্তর্জাতিক আদালতে। সম্প্রতি কক্সবাজারের উখিয়ার মধুরছড়া ক্যাম্প ঘুরে এসব কথা বলেন তারা ।

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের পর নারী সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন নোবেল বিজয়ী দুই নারী। এখানে বারবারই তাদের কণ্ঠে ফুটে উঠেছে রোহিঙ্গাদের উপর ভয়াবহ নৃশংসতার বিষয়টি।

সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, পুরো বিশ্বের কাছে এখন স্পষ্ট মিয়ানমারের অমানবিকতা। তারা আরো বলেন, মিয়ানমারকে এখন আর নিরাপদ ভাবছে না রোহিঙ্গারা। তাদের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার জন্য সেখানে নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। নোবেল বিজয়ী এ দুই নারী মনে করেন, এ নৃশংসতার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিচার হওয়া উচিৎ। রোহিঙ্গা সংকট গভীরতর হওয়ার অনেক আগেই নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির প্রতি রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী তিন নারী ।ম্যারিয়েড ম্যাগুয়ার, শিরিন এবাদি ও তাওয়াক্কল কারমান এই তিনজনই নন। আরও অনেক নোবেল বিজয়ী বিভিন্ন সময় বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে মিয়ানমারের নেত্রীর কাছে সহমর্মিতা আশা করেছিলেন। এখন বাংলাদেশ সফরে সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করে তিন নোবেল বিজয়ী নারীর আবেদন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরলেন।

নোবেলজয়ী এই তিন নারী মনে করেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যা ঘটেছে তা গণহত্যার সামিল। বাংলাদেশ থেকে ফিরেই তাঁরা মিয়ানমারে যাওয়ার জন্য ভিসার আবেদন করবেন বলেও জানিয়েছেন । রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সু চির সঙ্গে সরাসরি কথা বলেতে চান নোবেল বিজয়ী এই তিন নারী। ধর্ষণের শিকার ১০০ জন রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে কথা বলেছেন শরণার্থী শিবিরে আসা এই তিন নোবেল বিজয়ী। তাই তাঁরা বলছেন, মিয়ানমারে যা ঘটেছে, তা আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে বিচার হওয়ার যোগ্য।

তারা আরও বলেন, আমরা এ-সংক্রান্ত বিচারের দিকে শুরু থেকেই গুরুত্বারোপ করে আসছি। এ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোসহ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর তরফে যতটা চাপ এসেছে, তা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রাধান্যনির্ভর সরকারের ঘুম ভাঙানোর জন্য যথেষ্ট বলে প্রমাণিত হয়নি।

অন্যদিকে ভারত, চীন ও রাশিয়ার মতো দেশগুলো দুর্ভাগ্যজনকভাবে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা থেকে বিরত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন এই নোবেল বিজয়ীরা । বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার শরণার্থী প্রত্যাবাসন চুক্তি করলেও বাস্তবে পদ্ধতিগতভাবে রোহিঙ্গাবিরোধী রাষ্ট্রীয় নীতি এবং কালাকানুনে কোনো মৌলিক পরিবর্তন লক্ষণীয় নয়। নোবেল বিজয়ী তিন নারী বলেছেন, চিঠির পর চিঠি লিখেও তাঁরা সু চির কোনো জবাব পাননি। তবু তাঁরা হাল ছাড়বেন না। অং সান সু চির মানবাধিকার রক্ষায় একসময় বিশ্ব সম্প্রদায় সোচ্চার ছিল, তারই সতীর্থ এই তিন নোবেলজয়ী নারী । এক সময় বন্দী সু চিকে দেখতে এই তিন নোবেলজয়ীর দুজন ভিসা চেয়েও ভিসা পাননি। এবার রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার রক্ষায় তাঁদেরই ভিসার আবেদন নাকচ হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত সুচিকেই দিতে হবে। কারণ, তিনি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

নোবেল বিজয়ী তিন নারীর বাংলাদেশে ছুটে আসার ঘটনাকে অনেকেই মনে করেন ‘মানবতার প্রতি একটি মাইলফলক । নারীপক্ষের আলোচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে মানবাধিকার রক্ষায় তাঁরা বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণকে স্যালুট জানিয়েছে ।

বিশিষেজ্ঞরা মনে করেন, নোবেল বিজয়ী এই তিন নারীর বাংলাদেশ সফর রোহিঙ্গাদের পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনমত গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে সহায়তা করবে । বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে গণহত্যাকারীদের কাঠগড়ায় তুলতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব পাস হওয়া দরকার বলে ইরানের শিরিন এবাদি মন্তব্য করেছেন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, সুদানের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদ তাই করেছিল। মিয়ানমার রোম সংবিধিতে সই করেনি বলে সেখানে তাদের কারও বিচার হবে না, সেটা আসলে কোনো যুক্তির কথা নয় বলে মনে করেন এই নোবেল বিজয়ী। মিয়ানমারের গণহত্যার বিচারে ব্যর্থ হওয়ার পরিণাম বিশ্বকে আরও চরম মূল্যে দিতে হতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

আরএম