রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার বিচার শেষ পর্যায়ে

দীর্ঘ ২১ বছর আগে রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করা হয়। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে বিচারাধীন। এরই মধ্যে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ, আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন শেষ হয়েছে। এছাড়া এ মামলার আংশিক যুক্তিতর্ক উপস্থাপনও হয়েছে। তবে সম্পূর্ণ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলেই আদালত এ মামলার রায়ের জন্য দিন ধার্য করবেন। অর্থাৎ আরেকটি ধাপ শেষ হলেই ২১ বছরের প্রতীক্ষার অবসান হবে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গত ১০ এপ্রিল এ মামলাটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ধার্য ছিল। ঐ দিন এক আসামির পক্ষে তার আইনজীবী এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে পুনরায় জেরা করার আবেদন করেন। কিন্তু আদালত আবেদনটি নামঞ্জুর করেন। এরপর ওই আইনজীবী বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানান। উচ্চ আদালতে যাবেন বলে আদালতকে জানান। এজন্য সময় আবেদন করেন ওই আইনজীবী। আদালত সময় আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ২০ এপ্রিল যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন।

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল (বাংলা ১৪০৮ সনের ১ বৈশাখ) ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় প্রাণ হারান ১০ জন। ঐ ঘটনার পর রমনা থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) কবির হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফ আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রুহুল আমিন হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মুফতি হান্নানসহ ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন- মাওলানা আকবর হোসাইন, মুফতি আব্দুল হাই (পলাতক), হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর (পলাতক), মাওলানা আবু বকর, মুফতি শফিকুর রহমান (পলাতক), মাওলানা তাজউদ্দিন (পলাতক) ও আরিফ হাসান সুমন। মৃত্যুদণ্ড ছাড়াও তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির, হাফেজ ইয়াহিয়া, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আব্দুর রউফ ও মাওলানা শাহাদাৎ উল্লাহ জুয়েল। ৩০২/৩৪ ধারায় তাদের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন মামলার অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। বিচার চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে আদালত এ মামলায় ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে ৫৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে মাওলানা আকবর হোসেন, আব্দুল হান্নান, আরিফ হোসেন, শাহাদাত হোসেন, সাব্বির, শেখ ফরিদ, আব্দুর রউফ, ইয়াহিয়া, আবু বকর ও আবু তাহের কারাগারে রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউর আবু আব্দুল্লাহ ভূইয়া বলেন, এ মামলার আসামিরা একাধিক মামলায় জড়িত থাকায় অনেকটায় বিচার বিলম্বিত হয়েছে। তাছাড়া করোনাভাইরাসও বিচারের বাধা সৃষ্টির অন্যতম কারণ। তারপরও মামলাটির বিচার যেন দ্রুত শেষ হয় আমরা রাষ্ট্রপক্ষ চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রায় শেষ পর্যায়ে মামলাটি চলেও এসেছে। যুক্তিতর্ক শেষ হলে আদালত রায় ঘোষণা করবেন।

এ পর্যায়ে আসামিপক্ষ কালক্ষেপণের সময় একটা বিষয় নিয়ে বিচারের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন। তারা উচ্চ আদালতে যাবেন। দেখা যাক, উচ্চ আদালত থেকে কী আদেশ আসে। উচ্চ আদালত আমাদের পক্ষে আদেশ দিলে দ্রুতই মামলাটির বিচার শেষ হয়ে যাবে। আর আমরা আশা করছি, রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, একই ঘটনায় দুই বার বিচার হচ্ছে। এ কারণে সময়ও বেশি লাগছে। দীর্ঘদিন ধরে বিনা বিচারে কারাগারে থাকা কারও জন্যই কাম্য নয়। আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে বিনা বিচারে কারাগারে আছেন। বিচার শেষ হয়ে গেলে একটা না একটা কিছু তো হতো। আশা করি, মামলাটির বিচার দ্রুত শেষ হবে। আসামিরা ন্যায়বিচার পাবেন।

উল্লেখ্য, অভিযুক্ত মুফতি আব্দুল হান্নানের ফাঁসি ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল রাতে কার্যকর হয়েছে। সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। অন্যদিকে মাওলানা তাজউদ্দিন, শকিকুর রহমান, আবদুল হাই ও জাহাঙ্গীর আলম বদর এখনও পলাতক। খবর-ডেইলি বাংলাদেশ

আজকের বাজার/আখনূর রহমান