রোহিঙ্গারা ঐতিহাসিকভাবে মায়ানমারের নাগরিক

রোহিঙ্গারা ঐতিহাসিকভাবে মায়ানমারের নাগরিক বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান মায়ানমারকেই করতে হবে। মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত তিন হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

১০ সেপ্টেম্বর রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে রোহিঙ্গা বিষয়ক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

প্রমাণপত্র ছাড়া রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ঢুকতে দেয়া হবে না সেদেশের একজন কর্মকর্তার বক্তব্যের প্ররিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মায়ানমারের সিকিউরিটি কাউন্সিল সদস্য এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সদস্য বলেছেন, নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র ছাড়া কাউকেই গ্রহণ করবে না। মাহমুদ আলী বলেন আমার প্রশ্ন হচ্ছে- রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কিভাবে প্রমাণপত্র থাকবে?
মাহমুদ আলী বলেন, রোহিঙ্গারা মায়ানমারের নাগরিক। এটা ঐতিহাসিক সত্য। বিভিন্ন গবেষণা এবং ইতিহাসের পাতায় সেসব লিপিবদ্ধ আছে।’ মন্ত্রী এ সময় মায়ানমারের নাগরিক হিসেবে রোহিঙ্গাদের ঐতিহাসিক বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।

এ সময় সাংবাদিকদের ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রদূত জর্জ কোচেরি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন, এ সহিংসতায় মায়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে তিন হাজারের মতো রোহিঙ্গা মারা গেছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের সহায়তা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন।

কূটনৈতিক ব্রিফিং শেষে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জোয়েল রিফম্যান জানান, কফি আনানের নেতৃত্বে রাখাইন পরামর্শক কমিশনের রিপোর্টের বাস্তবায়ন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। সিনেটে রোহিঙ্গা বিষয়ে একটি রেজুলেশন গৃহীত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত বিবৃতি দিয়েছে।

মায়ানমার সেনাবাহিনী গত ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে গণহত্যা শুরু করলে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসা শুরু করে রোহিঙ্গারা। এরই মধ্যে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
শীর্ষ কূটনীতিকরা জানান, এ পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে এখন যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে কিভাবে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করা যায়, এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ সমস্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কূটনৈতিকদের ব্রিফিং শেষে মুসলিম দেশের কূটনীতিকদের আলাদাভাবে ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

জাতিসংঘ বলেছে, গত দুই সপ্তাহে ২ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের থাকার মতো যথেষ্ট জায়গা হচ্ছে না।
এদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা সাত লাখ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

১০ সেপ্টেম্বর রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান।

পোস্টে শাহরিয়ার আলম বলেন, মায়ানমার থেকে আসা মানুষের সংখ্যা ৭ লাখ ছাড়িয়েছে। যার মধ্যে গত ১৫ দিনে এসেছে প্রায় ৩ লাখ। শেখ হাসিনার সরকার নতুনদের মানবিক সহায়তা দেবার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। আর তাদের মায়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার জন্য অনেকদিন ধরেই কাজ করছে। কিন্তু মায়ানমারের কারণে অগ্রগতি হয়নি। তবে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে এবং তা আরও জোরদার করা হয়েছে।
গত ২৪ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে পুলিশ পোস্টে হামলা চালানো হয় বলে দাবি করে মায়ানমার সরকার। এ ঘটনায় মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অভিযানের নামে সাধারণ মানুষ হত্যা, ধর্ষণ ও বাড়িঘরে আগুনসহ নানা নির্যাতন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর থেকে প্রতিদিন বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। তবে এ সংখ্যা আরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও নাফ নদীর জলসীমানা থেকে শুরু করে স্থল সীমানা পার হয়ে নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থান নিয়েছে আরও হাজার হাজার রোহিঙ্গা।