শীতে পায়ের পরিচর্যা

শীতে আমাদের যতই প্রিয় হোক না কেন, ত্বকের জন্যে মোটেও বিশেষ সুবিধের নয়। আসলে শীতকালের বাতাসে ময়শ্চার কম থাকে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে আমাদের ত্বকে। রু আবহাওয়ায় আমাদের ত্বকের ময়শ্চার ব্যলান্স নষ্ট হয়ে যায়। ময়শ্চারের অভাবে ত্বক রু হয়ে পড়ে। আর সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয় পায়ের। রু খসখসে পায়ের ত্বক তো সবারই মূল সমস্যা। অনেকেরই আবার বছরের এইসময়টাতে পা ফাটার সমস্যা দেখা দেয়। সারাবছর পায়ের যতœ নিলেও, এসময় কিন্তু বাড়তি নজর দেওয়া প্রয়োজন। তাই শীতের শুরু থেকেই শুরু করে দিন পায়ের যথাযথ পরিচর্যা। আর এর জন্যে বিশাল আয়োজনের প্রয়োজন নেই। বাড়িতেই সামান্য কয়েকটা জিনিস থাকলেই হবে। রোজ নিয়ম মেনে স্লানের সময় অয়েল মাসাজ করুন, লোশন লাগান। আর সপ্তাহে একদিন একটু সময় বার করে ফুট স্ক্রাবার, মাস্ক ট্রাই করুন। মাসে একবার সাঁলতে গিয়ে ফুট স্পা করাতে পারলেই যথেষ্ট। দেখবেন, এই শীতে পা তো ফাটবেই না বরং আপনার পা হয়ে উঠবে পরিষ্কার, সুন্দর, মোলায়েম।

পায়ের যতœ স্নানের আগে

স্নানের আগে একটু সময় বের করে পায়ে তেল মাসাজ করুন। তেল মাসাজ করলে পায়ের ত্বকে ময়শ্চার ব্যালান্স ঠিক থাকবে, ত্বক নরমও থাকবে। মাসাজের জন্য তিল তেল ব্যবহার করতে পারলে ভাল হয়। বাড়িতে তিল তেল না থাকলে চিন্তার কিছু নেই। আমন্ড অয়েল বা অলিভ অয়েলও ব্যবহার করতে পারেন। না হলে নারকেল তেল তো আমাদের সবার বাড়িতেই থাকে, তাও চলবে। শীতের সময় ত্বক কোমল রাখতে সরষের তেল ভাল কাজ করে। তবে যে তেলই ব্যবহার করুন না কেন মাসাজ করার আগে একটু গরম করে নেবেন। তেল পায়ে ও গোড়ালিতে ভাল করে মাসাজ করুন। ১০ মিনিট অপো করে তারপর স্নান করুন। ত্বকের রুভাব দূর হবে ত্বক নরম ও কোমল হবে। ছুটির দিনে মানে যেদিন হাতে একটু বেশি সময় থাকবে সেদিন, বেসনের সঙ্গে অল্প দই, মধু, হলুদবাটা মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করতে পারেন। পায়ে ও গোড়ালিতে এই পেস্ট লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখুন। তারপর স্নানের সময় ভিজে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে সার্কুলার মুভমেন্টে ঘষে ধুয়ে ফেলুন। বেসনের এই মিশ্রণ ভাল কেনজারের কাজ করবে। আর হলুদের মধ্যে অ্যান্টিসেপটিক উপাদান রয়েছে। তাই ফাটা গোড়ালিতে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা কম হবে, মধু ময়শ্চারাইজ়ারের কাজ করবে। পা ও গোড়ালির ত্বক কোমল হবে, সহজে ফাটবে না।

স্নানের সময়

স্নানের সময় মাইল্ড গ্লিসারিন সাবান বা শাওয়ার জেল ব্যবহার করতে পারেন। আর স্নানের সময় পা বিশেষ করে গোড়ালি লুফা বা পিউমিস স্টোন দিয়ে ভাল করে ঘষে পরিষ্কার করবেন।

স্নানের পরে

স্নানের পরে ভিজে পায়ে আমন্ড অয়েল ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে পায়ের পাতায় ও গোড়ালিতে মাসাজ করুন। অথবা বডি লোশন বা ক্রিম লাগিয়ে নিন। ত্বক ভিজে থাকতে থাকতেই ক্রিম লাগান। কারণ, ভিজে ত্বকে ক্রিম বা লোশন সহজে অ্যাবজ়র্ব হয়। ফলে ত্বকের ময়শ্চার ব্যালেন্স বজায় থাকবে। ত্বকের ময়শ্চার বজায় থাকবে। সহজে পা ফাটবে না। এছাড়াও ভিটামিন ই সমৃদ্ধ ফুট লোশনও গোড়ালিতে মাসাজ করতে পারেন। পায়ের রুভাব কমানোর জন্যে ৫০ মিলি গোলাপ জলের সঙ্গে ১ চা-চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে লাগান। আধঘণ্টা পর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। উপকার পাবেন।

রাতে শুতে যাওয়ার আগে

রাতে শুতে যাওয়ার আগে ঈষদুষ্ণ জলে ১৫- ২০ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখুন। গরম জলের সংস্পর্শে পায়ে জমে থাকা ধুলোময়লা সহজে পরিষ্কার হয়ে যাবে। পা পরিষ্কার করার পর ভিটামিন ই-সমৃদ্ধ ফুট লোশন বা ভাল ময়শ্চারাইজ়ার ক্রিম দিয়ে পা ও গোড়ালি হালকা হাতে সার্কুলার মুভমেন্টে কিছুণ মাসাজ করুন। ত্বক নরম হবে। শুতে যাওয়ার আগে ভিজে তুলো দিয়ে অতিরিক্ত ক্রিম মুছে ফেলুন। যদি পা ফাটার সমস্যা থাকে তাহলে ক্রিমের বদলে পেট্রোলিয়াম জেলির সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে পা ফাটার ওপর লাগাতে পারেন। রোজ যদি সময় না পান, তাহলে সপ্তাহে দু’তিন দিনও যদিএইভাবে পায়ের যতœ নিতে পারেন ভাল হয়।

বাড়িতে পেডিকিওর

পা সুন্দর রাখতে ও ফাটা গোড়ালির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সপ্তাহে অন্তত একদিন পেডিকিওর করতে পারেন। স্যালঁতে পেডিকিওর করাতে পারেন। তবে হাতে বেশি সময় না থাকেল বাড়িতেও খুব সহজেই পেডিকিওর করতে পারেন। সময় লাগবে মোটে ২০ মিনিট। তবে সালঁতে গিয়ে পেডিকিওর করালে যতটা আরাম পাবেন বাড়িতে ততটা পাবেন না, কিন্তু একইরকম ফল পাবেন। প্রথমে ঈষদুষ্ণ গরম জলে সামান্য শ্যাম্পু ও নুন মিশিয়ে নিন। এই জলে ১০ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখুন। তারপর স্ক্রাবার বা পিউমিস স্টোন দিয়ে গোড়ালি ও পায়ের পাতা ভাল করে ঘষে নিন। এতে পায়ের ত্বকের মরা কোষ দূর হয়ে যাবে। তবে মেটাল স্ক্রাবার ব্যবহার করবেন না। পা পরিষ্কার করে জল দিয়ে ভাল করে ধুয়ে তোয়ালে দিয়ে শুকনো করে মুছে নিন। সবশেষে ফুট ক্রিম লাগিয়ে হালকা হাতে কিছুণ মাসাজ করুন।

কোমল মাখনমসৃণ পা পেতে সপ্তাহে দু’তিন একটু সময় বের করে ফুট স্কাবার, মাস্কস লোশন ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো যে কোনও ভাল কসমেটিক্সের দোকানেই কিনতে পাবেন। না হলে বাড়িতেও তৈরি করে নিতে পারেন। ফুট স্ক্রাবার তৈরির জন্য দু’-তিন চা-চামচ চালেরগুঁড়ির সঙ্গে এক টেবলচামচ মধু ও অ্যাপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে একটা ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। গোড়ালি ও পায়ের পাতায় লাগিয়ে হালকা হাতে কিছুণ ঘষুন। কিছুণ রেখে ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে ভাল করে পা ধুয়ে নিন। এতে গোড়ালিতে জমে থাকা ধুলোময়লা ও নোংরা চলে যাবে।গোড়ালি যদি খুব ফাটা হয় বা পায়ের ত্বক খুব রু হলে এই মিশ্রণে সামান্য অলিভ অয়েল বা আমন্ড অয়েলও মেশাতে পারেন। পা ফাটার সমস্যায় এই মিশ্রণ অবর্থ। ফুট মাস্ক তৈরির জন্য একটা পাকা কলা ভাল করে চটকে নিয়ে এতে সামান্য নারকেল তেল ও দুধের সর মিশিয়ে পায়ে ও গোড়ালিতে ভাল করে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট পর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কলা ও দুধে অনেক ভিটামিন আছে, যা গোড়ালিকে ভেতর থেকে ময়শ্চারাইজ় করবে। ফাটা গোড়ালির সমস্যার সমাধান হবে। বাড়িতে ফুট লোশন বানাতে চাইলে ৩ টেবল চামচ গোলাপ জল, ২ টেবল চামচ লেবুর রস ও ১ চা-চামচ গ্লিসারিন একসঙ্গে মিশিয়ে ফুট লোশন বানান। পায়ে ও গোড়ালিতে লাগিয়ে নিন। শুষ্ক খসখসে ত্বক নরম হয়ে যাবে, গোড়ালিও ফাটবে না।

ফুট মাসাজ

কুশনের ওপর পা রাখুন। এবার আমন্ড অয়েল ও ল্যাভেন্ডার অয়েল মিশিয়ে হালকা হাতে গোড়ালি থেকে পায়ের পাতার দিকে সার্কুলার মুভমেন্টে মাসাজ করুন।ইচ্ছে হলে মাসাজের সময় তেলের পরিবর্তে লেমন-টারমারিক ক্রিমও ব্যবহার করতে পারেন। আরাম পাবেন। শুষ্ক পায়ের জন্য ভাল ময়শ্চারাইজিং লোশন। হাতে ঘন ময়শ্চার সমৃদ্ধ ফুট ক্রিম নিয়েও মাসাজ করতে পারেন। সপ্তাহে তিনদিন ফুট মাসাজ করুন গোড়ালি নরম হবে।

ফুট স্পা

সবচেয়ে ভাল হয় শীত পড়ার আগেই যদি ভাল কোনও স্যালঁতে গিয়ে ফুট স্পা করিয়ে নিতে পারেন। কারণ, স্যালঁতে প্রফেশনালরা দ হাতে বিভিন্ন মাসাজ টেকনিকের দ্বারা গোড়ালি ও পায়ের এক্সফোলিয়েশান এবং মাসাজ করে থাকেন। ফলে পায়ের মরা কোষ ও নোংরা সহজে পরিষ্কার হয়ে যায়। এরপর ফুট মাস্কও ব্যবহার করা হয়। ফুট স্পাতে শুধুমাত্র কান্তি দূর হয় না, রক্ত সঞ্চালন ভাল করে, মাসেল টোনড করে এবং আপনাকে রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে। যদিও এগুলো সামান্য খরচাসাপে তবে নিজেকে ভাল রাখতে মাসে একবার স্যালঁতে গিয়ে একবার ফুট স্পা করিয়ে দেখতেই পারেন।
আজকের বাজার: ওএফ/ ১৪জানুয়ারি ২০১৮