শেখ হাসিনার কৃষিবান্ধব নীতি বাংলাদেশকে খাদ্যে উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত করেছে: সরকারি দল

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্যরা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর কৃষি বান্ধব নীতির ফলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়েছে। গত ৯ জানুয়ারি চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করলে সরকারি দলের সদস্য আ স ম ফিরোজ তা সমর্থন করেন। গত ৯ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ ও এ বছরের প্রথম অধিবেশনের শুরুর দিন সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সংসদে ভাষণ দেন।

রাষ্ট্রপতির ভাষণে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আজ আলোচনায় অংশ নেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, সরকারি দলের এমাজ উদ্দিন প্রামানিক, এ বি তাজুল ইসলাম, মো. নুরুল আমিন, ছোট মুনির, কাজিমউদ্দিন আহমেদ, সালমা চৌধুরী, জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বিএনপির জাহিদুর রহমান। আলোচনায় অংশ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘শিক্ষা নিয়ে গড়বো দেশ শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আমরা এ মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছি।

শিক্ষা খাতে ব্যাপক উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত দশ বছরের যে উন্নয়ন হয়েছে তাকে ভিত্তি করে বর্তমানে সরকার দেশে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য কার্যক্রম চালানো হয়েছে। তিনি বর্তমান সরকার আমলে দেশে শিক্ষিতের হার শতকরা ৭৩ ভাগ উল্লেখ করে বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ দায়িত্বে আসার পর এ হার ছিল শতকরা ৪০ ভাগ। সরকারের গত প্রায় ১১ বছরের রিন্তর প্রচেষ্টায় ও যুগোপযোগি কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার ফলে এটা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, এ সরকারের আমলেই বহু কাঙ্খিত শিক্ষা নীতি প্রবর্তন করে কার্যকর করা হচ্ছে। সরকার এ শিক্ষা নীতি পর্যায়ক্রমে চালু করে ধাপে ধাপে দেশের শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তিনি জানান সমন্বিত শিক্ষা আইন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। দ্রুত এ আইনটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় আনা হবে। তিনি আরো জানান উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে এ্যাক্রিডিটেশন বোর্ডও গঠন করা হয়েছে। উচ্চ শিক্ষার জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, উচ্চ শিক্ষায় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে। এ বছর থেকে কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয় সমূহে এ পদ্ধতির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী শিক্ষা বর্ষ থেকে কারিগরি ও সাধারণ সব বিশ্ব বিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু করা হবে। এতে শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের ভোগান্তি লাগব হবে এবং নানা রকমের অনিয়ম রোধ করা সম্ভব হবে। মন্ত্রী বলেন, সরকার সাধারণ শিক্ষার চেয়ে বর্তমানে কর্মমুখী কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিচ্ছে। যেখানে ২০০৯ সালে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ছিল শতকরা ১ ভাগ্, বর্তমানে তা ১৭ ভাগে উন্নীত করা হয়েছে। ২০২০ সালে এ হার ২০ ভাগে, ৩০ সালে ৪০ এবং ৪০ সালে ৫০ ভাগে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।

তিনি কারিগরি খাতে মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাবের কথা উল্লেখ করে বলেন, এ অভাব দূর করতে এ বছরই ৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। তিনি কর্মমুখী শিক্ষা ও গবেষণার সুবিধার জন্য কেন্দ্রীয় গবেষণাগার ও উদ্ভাবনি ল্যাব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের কথাও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। এছাড়া গবেষণা খাতে বরাদ্দও বৃদ্ধি করা হচ্ছে বলে জানান। তিনি মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতে মানসম্পন্ন শিক্ষকের ওপর জোর দিয়ে বলেন, এজন্য সরকার ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলাফল হিসাবে দেশের শিক্ষার মান এখন অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক উন্নত হয়েছে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, মধ্যসত্বভোগীদের হাত থেকে রক্ষা করতে সরাসরি কৃষক পর্যায়ে ধান ক্রয় করতে আসন্ন বরো মওসুম থেকে পাইলট প্রকল্প হিসাবে একটি মোবাইল এ্যাপস চালু করা হবে। তিনি বলেন, যদিও ইতোমধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে বর্তমান আমন মওসুমে দেশের ১৬টি উপজেলা থেকে মোবাইল এ্যাপ এর মাধ্যমে সরাসরি ধান ক্রয় করা হচ্ছে। আসন্ন বরো মওসুম থেকে মোবাইল এ্যাপসের মাধ্যমে ৪৮টি জেলায় কৃষক থেকে সরাসরি ধান ক্রয়ের কার্যক্রম চলছে।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ এ অধীন সারাদেশে ৭১টি খাদ্য আদালত স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৪ জেলায় একটি করে এবং ৬টি মেট্রোপলিটন এলাকায় ৭টি আদালত রয়েছে। জনগণের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সাফল্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যকর পদক্ষেপের ফলে প্রায় ৫০ লাখ লোক ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় বিনামূল্যে চাল পাচ্ছে। এছাড়া ১০ টাকা কেজি দরে সারা দেশে চাল সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে দেশের ১শ’টি উপজেলায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পুষ্টি চাল বিতরণ করা হবে। বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বিভিন্ন খাতে ব্রাপক উন্নয়নের প্রশংসা করে বলেন, দেশে বর্তমানে বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা। বিশেষ করে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছ্ এ সমস্যা সমাধানে সরকারকে জরুরী ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে কর্মমুখী শিক্ষার ওপর অধিক জোর দিতে হবে।

তিনি মাদক, জনসংখ্য বৃদ্ধি রোধ ও সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আরো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানান। সরকারি দলের অন্য সদস্যরা বলেন, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনীতি, শিল্প ও আর্থসামাজিক খাতসহ সব ক্ষেত্রে সরকারের আমলে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। দেশে ২০০৯-১০ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সর্বাত্মক বিপ্লবের জোয়ার বইছে। তারা বলেন, এর আগের সরকারগুলোর আমলে দেশের জনগণের খাদ্যের যোগান দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা ম্যাজিকের কারণে দেশ খাদ্যে উদ্বৃত্ত। তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল সুখী সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলা গড়া এর ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার কৃষক বান্ধব নীতি গ্রহণ করায় কৃষি উৎপাদন যে কোন সময়ের তুলনায় কয়েকগুন বেড়েছে।

সরকারি দলের সদস্যরা বলেন, বর্তমান সরকারের গত ১১ বছরে দেশের সব খাতের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। দেশের মানুষ এখন খেয়ে পরে সুখে আছে। এখন আর কৃষককে সারের জন্য গুলি খেয়ে মারা যেতে হয় না। সার এখন কৃষকের ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় এখন শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। প্রতি বছরের শুরুর দিন ২ কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে বই তুলে দেয়া হচ্ছে। বিদ্যালয় গমনোপযোগি সব শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। এরাই একদিন আলোকিত মানুষ হয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। প্রধানমন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়নও নিশ্চিত করেছেন। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান