সরকারের সমালোচনা ।। সাংবাদিককে আটক করল বেলারুশ

বেলারুশ সরকার তার সমালোচনাকারী এক সাংবাদিককে আটক করতে এথেন্স থেকে ভিলনিয়াসগামী রায়ান এয়ারের একটি ফ্লাইট ঘুরিয়ে মিনস্ক নিয়ে আসে। রোববার এ ঘটনা ঘটে।
এতে বিশ্ব নেতবৃন্দের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে বেলারুশ। একে অনেকে ‘বিমান ছিনতাই’ আবার কেউ কেউ ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
বেলারুশের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, পোল্যান্ডে নির্বাসিত ২৬ বছর বয়স্ক ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক রোমান প্রোতাসেভিচকে মিনস্কে আটক করা হয়েছে। নিরাপত্তার আশংকা জানিয়ে যে ফ্লাইটটিকে ঘুরিয়ে মিনস্কে আনা হয় সে ফ্লাইটে এই সাংবাদিক ছিলেন।
বেলারুশের নেক্সটা মিডিয়া নেটওয়ার্ক বলেছে, ওই ফ্লাইটে তাদের সাবেক সম্পাদক রোমান প্রোতাসেভিচ ছিলেন, তাঁকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘন্টা পর প্রোতাসেভিচকে ছাড়াই ভিলিনিয়াসে বিমানটি অবতরনের পর এর কিছু যাত্রী জানিয়েছেন, বেলারুশের দিকে বিমানটিকে ঘুরানোর পর ওই সাংবাদিককে খুবই ভীত দেখাচ্ছিল।
এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলো। বেলারুশের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের’ অভিযোগ তুলে শাস্তি দাবি করেছে তারা। ইউরোপজুড়ে রাজনৈতিক নেতারা এরই মধ্যে এ ঘটনায় ইইউ ও ন্যাটোর হস্তক্ষেপ চেয়েছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বেলারুশ সরকারকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘নজিরবিহীন’ এই পদক্ষেপের ‘গুরুতর পরিণতি’ হবে।
এছাড়া বেলারুশের বিরোধী নেতা স্ভেতলানা টিকানোভস্কিয়াও সাংবাদিক প্রোতাসেভিচের মুক্তি দাবি করেছেন। গত বছর বেলারুশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর(৬৬) কাছে পরাজিত হন স্ভেতলানা টিকানোভস্কিয়া। ওই নির্বাচনে ব্যাপকভাবে জালিয়াতি হয় বলে অভিযোগ করে আসছেন তিনি।
লুকাশেঙ্কো ১৯৯৪ সাল থেকে বেলারুশ শাসন করে আসছেন। তিনি গত বছর আগস্টের ওই নির্বাচনের পর থেকে ভিন্নমতাবলম্বী ও সমালোচকদের ওপর ব্যাপক দমন পীড়ন চালাচ্ছেন। অনেক বিরোধী নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন অথবা স্ভেতলানা টিকানোভস্কিয়ার মতো কেউ কেউ বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
ওই নির্বাচন এবং তার পরবর্তী সময়ে বেলারুশের বিরোধীদের পক্ষে বড় ভূমিকা রেখেছিল নেক্সটা মিডিয়া। টেলিগ্রাম চ্যানেলের পাশাপাশি টুইটার ও ইউটিউবে তাদের খবর প্রকাশিত হয়।
স্ভেতলানা টিকানোভস্কিয়া জানান, লুকাশেঙ্কো সরকার রোমান প্রোতাসেভিচের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ আনার পর ২০১৯ সালে দেশ ছাড়েন তিনি। এরপর নেক্সটা মিডিয়ার মাধ্যমে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের খবর প্রকাশ করেন প্রোতাসেভিচ।
এদিকে বেলারুশ কর্তৃপক্ষ প্রোতাসেভিচকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এ কারনে তাঁর মৃত্যুদন্ড হতে পারে বলে আশংকা করছেন স্ভেতলানা টিকানোভস্কিয়া।
এছাড়া ফ্লাইটের যাত্রী ৪০ বছর বয়সী একজন লিথুনিয়ান মনিকা সিমকিনি বলেছেন, প্রোতাসেভিচ ফ্লাইট ঘুরানোর পর লোকজনের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলেছিলেন তিনি মৃত্যুদন্ডের মুখোমুখি হতে পারেন।
উল্লেখ্য, রায়ান এয়ারের এফআর ৪৯৭৮ ফ্লাইটটি রোববার গ্রিসের এথেন্স থেকে লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে যাচ্ছিল। লিথুয়ানিয়া সীমান্তে প্রবেশের অল্প কিছু আগে ফ্লাইটিকে মিনস্কে ঘুরিয়ে দেয়া হয়। বিমানে ১৭১ জন যাত্রী ছিলো বলে গ্রিস ও লিথুয়ানিয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
বেলারুশ কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার কারন দেখিয়ে ফ্লাইটটিকে ঘুরিয়ে দিলেও তল্লাশি চালিয়ে এর ভেতর কিছুই পাওয়া যায়নি।
এদিকে লিথুনিয়ার প্রেসিডেন্ট গিতানাস নুসেদা বেলারুশের এ কাজকে জঘন্য বলে মন্তব্য করেছেন। দেশটির প্রসিকিউটররা বলেছেন, বিমান ছিনতাইয়ের জন্য তারা ফৌজদারী তদন্ত শুরু করেছেন।
রায়ানএয়ারের সদর দপ্তর আয়ারল্যান্ডে। আয়ারল্যান্ড সরকার এ ঘটনাকে সম্পূর্ণ অগ্রহনযোগ্য হিসেবে উল্লেখ করেছে। ন্যাটো একে বিপদজনক হিসেবে বর্ণনা করে আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেছে।