সিটিং বন্ধের সিদ্ধান্তই কাল হয়েছে:বেড়েছে জনভোগান্তি

আজকেরবাজার প্রতিবেদক: রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধ করে লোকাল সার্ভিস চালু করার সিদ্ধান্তই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। তাদের দাবি সিটিং সার্ভিসের নামে বাস ভাড়া নিয়ে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে তারজন্য সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্তই দায়ী। নগরীতে সিটিং সার্ভির বন্ধের দিন থেকেই গণপরিবহণ নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন নাটক।
ব্যস্ততম রাজধানীর সড়কগুলো এখন গণপরিবহণ শূণ্য অবস্থা। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও মিলছে না বাসের দেখা। এতে সীমাহীন দূর্ভোগ আর ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ যাত্রীসহ নারী-শিশু।
প্রিতম শাহা নামে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আজকের
বাজারকে বলেন, ‘আমরা বোকা না। এমনিতেই লোকাল সার্ভিস দিয়ে
সিটিংয়ের ভাড়া নিচ্ছে, আবার বাস বন্ধ করে ভোগান্তির সৃষ্টি করছে। এভাবে আর কদিন, সরকার অনড় থাকলে, রুটি-রুজির সন্ধানে এমনিতেই রাস্তায় নামাতে হবে বাস।’
গত ৪ এপ্রিল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে বিভিন্ন রুটের পরিবহন মালিক এবং পরিবহন কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে রাজধানীর প্রায় নব্বই শতাংশ পরিবহন মালিক এবং শহর ও শহরতলী রুটের শ্রমিক কমিটির নেতাদের উপস্থিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেছিলেন, ঢাকা শহরে সিটিং-গেইটলক কিংবা স্পেশাল সার্ভিস নামে কোনো সার্ভিস চলতে পারবে না। প্রতিটি বাসকে রুট পারমিট অনুযায়ী চলতে হবে। এ সিদ্ধান্ত আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।
সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত ১৫ থেকে কার্যকর না হলেও ১৬ তারিখ থেকে শুরু হয়। আর সেই দিন থেকেই রাস্তায় গণপরিবহনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়।
রাজধানীর গণপরিবনে সিটিং সার্ভিস বন্ধে মালিকদের নেওয়া সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সিটিং সার্ভিস করা হয়েছে শুধু অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের জন্য। মালিকরাই এটা করেছিল এখন মালিকরাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আশা করি এটা কার্যকর হবে।
তবে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিলেও প্রকৃত অর্থে বাস মালিক সমিতি সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়নি বলেও জানা যায়। সরকারের নির্দেশে বাধ্য হয়ে মালিক পক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মালিক বলেন, সিটিং সার্ভিসে একজন বাস মালিকের যে লাভ হয়, লোকালে চালালে তার অর্ধেকও হয় না। তবে কেন মালিক পক্ষ এর বিরোধীতা করবেন। সরকারের চাপের মুখে মালিকরা বাধ্য হয়েছে এ সিদ্ধান্ত নিতে।
রাস্তায় গাড়ি কম থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, লোকালে গাড়ি রাস্তায় নামালে টাকা উঠে না। খরচ বেশি পরে। এর জন্যই হয়তো অনেক মালিক গাড়ি নামাচ্ছে না। মালিক পক্ষও চায় আবার সিটিং সার্ভিস চালু হক। বাসের এমন নৈরাজ্য ঠেকাতে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান মো. মশিয়ার
রহমান বলেন, ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য বন্ধ করতে আমাদের অভিযান চলমান আছে। প্রতিটি বাসে ভাড়ার তালিকা টাঙ্গিয়ে রাখা এবং সে অনুযায়ী ভাড়া আদায় করা বাধ্যতামূলক। এর ব্যত্যয় পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ রাস্তায় বাস চলাচল স্বাভাবিক করতে তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বন্ধ রাখা বাসের তালিকা করছি। জরিমানার ভয়ে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে বাস চলাচল বন্ধ রাখলে ওই বাসের রুট পারমিট বাতিল করা হবে।’
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী আজকের বাজারকে বলেন, আমরা আগেও লক্ষ্য করেছি পরিবহন সেক্টরে যখনই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয় এবং যাত্রীবান্ধব কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তখনই কতিপয় মুনাফালোভী মানুষ তা বাধাগ্রস্থ করতে উঠেপড়ে লাগে।
আজকেরবাজার:এসআর/আরআর/এলকে/১৯ এপ্রিল,২০১৭