সুনামগঞ্জে অপরিবর্তিত রয়েছে বন্যার পরিস্থিতি

জেলায় বন্যা পরিস্থির খুব একটা উন্নতি হয়নি। গতকাল সোমবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জে সুরমার পানি বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় নদীতে ১৪সেন্টিমিটার পানি প্রবাহিত হচ্ছে তবে কোন বৃষ্টিপাত হয়নি। ছাতকে সকাল ৯ টায় সুরমা নদীতে ১৪৬ সেন্টিসমটার উপরদিয়ে প্রবাহিত হয় বৃষ্টিপাত ১০মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে । বিভিন্ন এলাকার বাসা-বাড়ি এখনও বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। জেলা সদরের সাথে প্রায় সবগুলো উপজেলার সড়ক যোগাযোগ এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গতকাল সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ আশ্রয় কেন্দ্রে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ ও সুনামগঞ্জ পৌর চেয়ারম্যান নাদের বখত।

দোয়ারাবাজার, গত ২৪ ঘন্টায় গুঁড়ি গুঁড়ি হালকা বৃষ্টিপাত হলেও ভাটিতে পানির টান না থাকায় সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। সুরমাসহ উপজেলার সকল নদ-নদীর পানি ধীরে ধীরে কমলেও হাওর, বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটের পানি মোটেই কমনি। অধিক ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের কাটাখালী বাজার, আমবাড়ি বাজারসহ বিভিন্ন গ্রামের লোকালয়ে এখনও কোমর পানি থাকায় গবাদি পশুসহ বানভাসিরা পড়েছেন চরম দুূর্ভোগে। ৮ ইউনিয়নসহ শথাধিক গ্রামের বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটে হাঁটু পানি, কোমর পানি থাকায় গবাদি পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পানিবন্দি মানুষ। উপজেলা সদরের সাথে সকল ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

সুরমা ইউনিয়নের মৎস্য খামারি আব্দুর রহিম জানান, প্রথম দফা বন্যার পানিতে ভেসে গেছে সুরমা, বগুলা ও দোয়ারা সদর ইউনিয়নের শতাধিক ঘেরের কয়েক কোটি টাকার মাছ। বুকে আশা নিয়ে আবারও অধিকাংশ ঘেরে মাছের পোনা ছাড়েন খামারিরা। কিন্তু বিধি বাম, সপ্তাহ না যেতেই আবারও দ্বিতীয় দফা বন্যায় সবকিছু ভেসে গেল। এখন আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

উপজেলা নদীভাঙন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম জানান, এবারের প্রথম দফা বন্যায় উপজেলা সদরে দুটি দোকান সুরমা নদীতে তলিয়ে যাওয়াসহ উপজেলা সদরের বিভিন্ন রাস্তা ও বাসাবাড়িতে হাটু পানি থাকাবস্থায় উপর্যুপরি দ্বিতীয় দফা বন্যায় আবারও সবকিছু পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে।

চিলাই নদী পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শিব্বির আকন্দ (সাব্বির) জানান, প্রথম দফা বন্যায় দোয়ারাবাজার-বগুলা-লক্ষ্মীপুর সড়কে মোকামের পাশে, ক্যাম্পের ঘাটের পাশে ও উত্তর আলমখালী অংশে চিলাই নদীর বেড়িবাঁধে ভাঙনে সহস্রাধিক হেক্টর উঠতি আউশ ফসল, আমনের বীজতলা ও সবজি ক্ষেত বিনষ্ট হয়েছে। ভুক্তভোগীরা অনেক ভরসা নিয়ে কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার আশায় আবারও আমনের বীজ বুনেছিলেন, দ্বিতীয় বারের বন্যায় সে আশা মুহূর্তেই ধূলিস্মাৎ হয়ে গেল। উপর্যুপরি দু’দফা বন্যায় বিধস্ত দোয়ারাবাজার উপজেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানান উপজেলাবাসী।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা জানান, বৃষ্টিপাত অপেক্ষাকৃত কম হলেও বন্যার পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুমর মাধ্যমে মনিটরিংসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। কিন্তু মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে বানভাসিদের অনেকেই সেখানে যেতে আগ্রহী নন বলে জানান। উপদ্রুত এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন, শুকনো খাবার, রান্নাকরা খাবারসহ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিং ডেকে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রণয়নের জন্য ইউপি চেয়ারম্যানদের জানানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

দক্ষিণ সুনামগঞ্জে দ্বিতীয় দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বানভাসীদের মাঝে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ সামগ্রী ও পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট পৌঁছে দিয়েছেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেবুন নাহার শাম্মী।

গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের কাদিপুর, ইসলামপুর গ্রামে এ ত্রাণ বিতরণ করা হয়। এসময় তার সাথে ছিলেন পশ্চিম পাগলা ইউপি চেয়ারম্যান মো. নুরুল হক, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী এম জমিরুল ইসলাম মমতাজ, সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক, সদস্য জামিউল ইসলাম তুরান, ইউএনও অফিসের নাজির আবু বক্কর সিদ্দিক প্রমূখ।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় বন্যার পানি কিছু কমতে শুরু করলেও কমেনি জনদুর্ভোগ। বন্যায় ঘরবাড়ি রাস্তাাঘাট হাট বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস পাড়াসহ সর্বত্রই পানিতে নিমজ্জিত। এখনও অনেক স্থানে হাঁটু পানির উপরে রয়েছে। উপজেলায় ১ম দফা বন্যার পানি কমতে না কমতেই ২য় দফা বন্যায় নিম্নঅঞ্চলের মানুষ খুবই ঝুঁকির মধ্যে জীবন যাপন করছেন। জনজীবনের পাশাপাশি গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছে অনেকেই। বন্যায় উপজেলার ৫০ হাজার মানুষ পানি বন্দি অবসন্থায় রয়েছে। ২৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২৭৩টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। বন্যায় সুনামগঞ্জ টু বিশ্বম্ভরপুর রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা সদর থেকে বিশ্বম্ভরপুর বাজার পর্যন্ত রাস্তাটির অনেক স্থানে ভেঙ্গে গেছে এবং বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর রাস্তাসহ উপজেলার অভ্যন্ত রের অনেক রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকের মৌসুমী অনেক শাক সবজি ফসল ও চারার ক্ষতি হয়েছে।

বন্যা পরিস্থিতির শুরু থেকেই উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক বন্যাদুর্গত মানুষের খোঁজ খবর রাখছেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ কেেরছন বলে জানা যায়। গত ২দিন যাবৎ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমীর বিশ্বাস বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পানি বন্দি ফতেপুর ইউনিয়ন, সলুকাবাদ ইউনিয়নসহ বিভিন্ন স্থানে নৌকাযোগে আশ্রয় কেন্দ্রে ও পানিবন্দি মানুষের মাঝে শুকনো খাবার ও ত্রাণ বিতরণ অব্যহত রেখেছেন। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান