সৌদি খেজুর চাষে সফল চাঁপাইনবাবগঞ্জের রুবেল

ফেসবুকে দেখে বাণিজ্যিকভাবে বরেন্দ্রের মাটিতে মরুর দেশের খেজুর চাষ করে সফল হয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভেরেন্ডি গ্রামের বেকার যুবক ওবাইদুল ইসলাম রুবেল। তার এই সাফল্য এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এই ফল চাষে।

এইচএসসি পাস করা বেকার যুবক রুবেল ফেসবুকে দেশের কয়েকটি স্থানে খেজুর চাষের খবর দেখে খেজুর আবাদে উদ্বুদ্ধ হন। বাবার সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেন খেজুর চাষের। সৌদি প্রবাসী স্বজনদের সাথে যোগায়োগ করে সেখান থেকে বীজ সংগ্রহ করেন। কেউ কেউ পাগলামি বলে ঠাট্টা করেছেন। কিন্তু হাল ছাড়েননি রুবেল। নিয়মিত বাগানের পরিচর্যা করেছেন।

বর্তমানে তার ৩ বিঘা জমির উপর গড়ে উঠা খেজুর বাগানে গাছের সংখ্যা দেড় হাজার। বাগানে মরিয়ম, সুককারি, বারহি, আম্বার, হাইয়ানিসহ আরও কয়েক প্রজাতির খেজুর গাছ রয়েছে। সৌদি খেজুর চাষে সফল চাঁপাইনবাবগঞ্জের রুবেল বলেন, ‘খেজুর চাষের ব্যাপারে আমার বাবার সাথে পরামর্শ করলে প্রথমে তিনি কিছুটা আপত্তি করলেও এক পর্যায়ে সম্মতি দেন। এরপর সৌদি থেকে বীজ সংগ্রহ করে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাড়ির পাশের দেড় বিঘা জমিতে ৮৩০টি চারা রোপণ করি। এর ১৮ মাস পরে প্রথম দুই একটি করে ফুল আসে এবং ফল হয়। সেটা দেখে মনের জোর আরও বেড়ে যায়, গাছের পরিচর্যা করতে থাকি এবং আরও গাছ রোপণ করি।’

তিনি বলেন, গত বছর মোটামুটি পরিমাণে ফল পাওয়া যায়। আর এই বছর প্রায় ২০০ গাছে বেশ ভালো পরিমাণে ফল এসেছে। বাজারে খেজুরের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। দরও ভালো। ক্রেতারা বাগানে এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতি কেজি খেজুর ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খেজুর চারা ২০০-৩০০ টাকা করে আর কলম করা চারা বয়স ভেদে ২০ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

রুবেল বলেন, ‘খেজুর গাছ লাগানোর পর তিন বছর পর্যন্ত শুধু পরিচর্যা করে গেছি। তবে ২০১৯ সালে কিছু খেজুর চারা বিক্রি হয়েছে। মূলত গত বছর আর এ বছর ফল ও চারা দুটোই বিক্রি করেছি। শুরু থেকে এই পর্যন্ত খেজুর আবাদে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। আর খেজুর ও খেজুর চারা বিক্রি হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ টাকা। খরচ বাদে আয় হয়েছে ছয় লাখ টাকা। এতোদিনে আয়ের মুখ দেখলাম।’

এলাকার বাসিন্দা কৃষক মেহেরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে ভাবছিলাম ও কী পাগল টাগল হয়ে গেল নাকি। আরবের খেজুর কি এদেশে হয়। কিন্তু আসলে এটা আমাদের ভুল ধারণা ছিল। খেজুর খেতেও বেশ সুস্বাদু।’ সৌদি খেজুর চাষে সফল চাঁপাইনবাবগঞ্জের রুবেল

এদিকে, রুবেলের এই সফলতা দেখে আশে পাশের অনেকেই খেজুর চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। অনেকেই বাগান দেখতে আসছেন, কিনছেন খেজুর গাছের চারা। নাচোল উপজেলার বাঘরাইল এলাকার গৃহীনি মিরা বলেন, আমি এখানে খেজুর বাগানের কথা শুনেছি। আজ তাই দেখতে এলাম। দেখলাম খেজুর ধরে আছে, বেশ ভালো লাগল। বাড়ির পাশে লাগানোর জন্য কয়েকটি চারা কিনলাম।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু জেলার বরেন্দ্র অঞ্চলের আবহাওয়া অনেকটা মধ্যপ্রাচ্যের আবহাওয়ার সাথে কিছুটা মিল আছে, এ কারণে নাচোলে যে খেজুর বাগান গড়ে তোলা হয়েছে তার ফলাফল ভালো হয়েছে। এখানে উৎপাদিত খেজুরের বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে। ফলে এটি একটি সম্ভাবনাময় ফসল। আমরা এ বাগানটি পর্যবেক্ষণ করছি ও কৃষককে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি।’ খবর-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান