স্কুলছাত্রী থেকে ‘ইয়াবা কুইন’!

মেয়েটির নাম স্বপ্না। কিশোরী বয়সেই মাদকে আসক্ত হয়ে যায় ইয়াবা কুইন।

গ্রেপ্তার হয়ে অন্ধকার জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার চাঞ্চল্যকর বর্ণনা দিয়েছে আদুরী আকতার স্বপ্না।

যে বয়সে পড়াশোনা করে জীবন গড়ার কথা, সে বয়সেই মেয়েটি ইয়াবার নেশায় প্রচণ্ডভাবে আসক্ত হয়ে পড়ে। গডফাদারদের নির্দেশে ইয়াবা বহন করে নিয়ে যেত দূর-দূরান্তে। ইয়াবা মাদকের অন্ধকার জগতে সে ‘ইয়াবা কুইন’ হিসেবেই পরিচিতি লাভ করে।

গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মোহাম্মদ শাহরিয়ারের সামনে সাংবাদিককের কাছে কিশোরী স্বপ্না বলে, ‘রুমা আপা আমার জীবনটা তছনছ করে দিয়েছে। আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি তখন সে আমার মুখে ইয়াবা তুলে দেয়। অন্যদিকে অভাবের সংসারের দায় সারতে ও নেশা থেকে আমার জীবন রক্ষা করতে বাবা মা বাল্যকালেই আমাকে বিয়ে দেয়। কিন্তু ততক্ষণে আমি ইয়াবা কুইন।’

গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালী ইউপির তালুকজামিরা গ্রামের সনজু মিস্ত্রির মেয়ে আদুরী আকতার স্বপ্না। ২ ভাই ২ বোনের মধ্যে সে বড়। বাবার টানাটানির সংসারে মোটামুটি চলে যাচ্ছিল। মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন তার মা শেফালী বেগম। স্কুলে পড়ালেখার জন্য সব কিনে দিতে হতো।

বাবার মিস্ত্রির কাজের অর্থ থেকে পড়ালেখার খরচ কোনোরকমে যোগাড় হচ্ছিল। ২০১৫ সালে তালুক জামিলা স্কুল থেকে জেএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করে সে। কিশোরী বয়সেই বাবা-মা তাকে বিয়ে দেন পাশের গ্রামের ছেলে রেজাউল মিয়ার সাথে।

ট্রেনে স্বামীর সাথে ঢাকা যাওয়ার সময় স্বপ্নার পরিচয় হয় রুমা নামের এক মেয়ের সাথে। তার বাড়ি গাইবান্ধা শহরের ব্রিজ রোডে। রুমা তাকে তার বাড়িতে থাকতে দেন। বলেন, ‘এখানে থেকে চাকরি খুঁজে নিও।’

তখনও এই কিশোরী বুঝতে পারেনি রুমার আসল উদ্দেশ্য। রুমা আস্তে আস্তে এই কিশোরীকে ইয়াবা সেবনে আগ্রহী করে তোলে। স্বামী রেজাউলকে বলেন, ‘আপনি কাজ খুঁজুন।’

দেখতে দেখতে যাত্রাবাড়ির রুমার বাড়িতেই ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়ে ওই কিশোরী। তারপর বাধ্য করা হয় তাকে নানা ধরনের অনৈতিক কাজ করতে।

এদিকে মেয়েটির স্বামী আর তার কাছে ফিরে আসেনি। এরপর গাইবান্ধায় নিজ এলাকায় ফিরে আসে সে। নিজের নেশার টাকার জন্য যোগাযোগ করা শুরু করে গাইবান্ধার ইয়াবা বিক্রেতাদের সাথে। জড়িয়ে পড়ে আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সাথে। ইয়াবার টাকা যোগাড় করতে সে অসামাজিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ঝুঁকে পড়ে অপরাধ জগতের দিকে।

বাদিয়াখালী, বোনারপাড়া, রিফায়েতপুর, গাইবান্ধা শহর এমনকি বগুড়ায় তার যোগাযোগ সৃষ্টি হয় আন্ডার ওয়ার্ল্ডের গডফাদারদের সাথে। তাদের কথা মতো ইয়াবা বহন করে নিয়ে যায় দূর-দূরান্তে গ্রাহকদের কাছে। এলাকায় এই কিশোরীকে সবাই এক নামে চেনে।

পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর ওই কিশোরী জানায়, নেশার টাকা যোগাড় করার জন্যই বাধ্য হয়ে সে অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ে।

এদিকে এ খবর জানাজানি হওয়ার পর মেয়েটির বাবা সনজু মিস্ত্রি নির্বাক। তার মেয়ে এমন হতে পারে তিনি ভাবতেও পারেন না। তার মেয়েকে এ পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে সকলের প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।

সাংবাদিকের কাছে স্বপ্না বলে, ‘কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমি এখন ইয়াবা কুইন। কয়জন আছে আমার মতো? আমার এ পাপের পথে কেউ ইচ্ছে করে আসে না। আমাকে এ পথে ঠেলে দেয়া রুমা আপাদের প্রতিরোধ করুন। না হলে আমার মতো অনেক কিশোরী মেয়ে আসল পথ হারিয়ে ফেলবে।’

সোমবার রাতে গাইবান্ধা থানার পুলিশ বাদিয়াখালী ও তালুক জামিরা থেকে ওই কিশোরীসহ কয়েকজনকে আটক করার পর চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য বেরিয়ে আসে।

আজকের বাজার/লুৎফর রহমান