স্বপ্নের স্বপ্নযাত্রায় বদলে যাচ্ছে কৃষক ও মধ্যবিত্তের লাইফস্টাইল

স্বপ্ন বাংলাদেশের সুপরিচিত রিটেইলার চেইনশপ। এসিআই লজিস্টিকসের ব্র্যান্ড নাম এটি। এসিআই দেশের অন্যতম এগ্রিবিজনেস প্রতিষ্ঠান। কৃষকের তথা দেশের অগ্রযাত্রায় তারা অবদান রাখতে চায়। স্বপ্ন এই যাত্রাপথের সামনের অংশ। ২০০৮ সালে শুরু হওয়া স্বপ্নযাত্রার আদ্যোপান্ত নিয়ে আজকের বাজার-এর সঙ্গে কথা বলেছেন এসিআই লজিস্টিকসের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির। তাঁর বক্তব্যের অনুলিখন।

স্বপ্নের স্বপ্নযাত্রায় বদলে যাচ্ছে কৃষক ও মধ্যবিত্তের লাইফস্টাইল

 স্বপ্নের স্বপ্নযাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সালে। স্বপ্ন হচ্ছে এসিআই লজিস্টিকসের ব্র্যান্ড নাম। এসিআই কোম্পানির রিটেইল বিভাগের আওতায় এটি চলে। ২০০৮ সালে আমরা চিন্তা করি, সিড থেকে সেলফ, অর্থাৎ বীজ থেকে মানুষের হৃদয়ে কীভাবে যাওয়া যায়? এসিআই চিন্তা করে মানুষের হৃদয়ে কীভাবে যুক্ত হওয়া যায়।  কানেকটিং দ্য ডটস। অর্থাৎ, দুটি বিন্দুকে কীভাবে একসঙ্গে করা যায়। এসিআই দেশের অন্যতম বড় এগ্রিবিজনেস প্রতিষ্ঠান। কৃষকের নানা ইনপুটস নিয়ে এসিআইয়ের কাজ। এসিআই বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার সঙ্গে থাকতে চায়। এই অগ্রযাত্রার সামনের অংশ হচ্ছে স্বপ্ন, আর পেছনের অংশ হচ্ছে কৃষক বা দেশের মানুষ। স্বপ্ন এমন একটি আউটলেট হতে চায়, যেখানে মানুষ আনান্দের সঙ্গে কাজ করবে, শপিং করবে, ইনভেস্ট করবে। ইনভেস্ট মানে টাকা অর্থে নয়, মানুষের সার্বিক আনন্দ ও ওভারঅল ইকোনমির যোগফল।

 স্বপ্নের ছোট ছোট স্বপ্নগুলো

এই স্বপ্ন হচ্ছে কৃষকের ভাগ্যোন্নয়ন। কৃষক জানে না তার ফসলের নায্য দাম। আমরা সরাসরি কৃষকের কাছে চলে যাই। স্বপ্নের সবজির ৬৫ ভাগ আসে কৃষকের কাছ থেকে। আর মাছের ৫০ ভাগ আসে মৎসজীবীদের মাধ্যমে। আগামী পাঁচ বছরে আমরা এটাকে ১০০ ভাগে নিয়ে যেতে চাই। আমরা এটা বলতে পারব যে ১০০ ভাগ এ ধরনের পণ্য কৃষকের কাছ থেকে আসছে। এতে করে লাভ হচ্ছে কী? কৃষকের দুটি লাভ হচ্ছে। তার সময় বেঁচে যাচ্ছে, আমরা তার কাছে যাওয়ায় তাকে পণ্য বিক্রি করতে আর হোলসেল মার্কেটে যেতে হচ্ছে না। অর্থাৎ, তার প্রেডাক্টিভিটিও বাড়ছে। আগে ১৫ দিন কাজ করতে পারলে এখন সে ৩০ দিন কাজ করতে পারবে।

দ্বিতীয়ত, সরাসরি তার কাছ থেকে পণ্য কেনায় মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত থেকে সে বেঁচে যাচ্ছে। আর আমাদের লাভ কী? আমাদের লাভ স্বচ্ছতা। আমরা বলতে পারছি যে এই পণ্য কীভাবে পাচ্ছি। আমরা উৎস সম্পর্কে পারিষ্কর হতে পারছি। এখন যে সাধারণ অভিযোগ, ফরমালিন, কার্বাইড ইত্যাদি মেশানো হয়; আমরা বলতে পারছি, আমরা এগুলো থেকে মুক্ত।

তৃতীয়ত, আমরা যেহেতু কম দামে কিনছি, কম দামে বিক্রিও করতে পারছি। ফলে ক্রেতা সেই একটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত  স্পেসে, যেখানে তাকে রেসপেক্ট করা হয়; তার অভিযোগ সঙ্গে সঙ্গে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। সেখানে সে কেন আসবে না?  এখানে তাহলে স্বপ্ন কী? কৃষকের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্ত সবারই টাকা বাঁচছে। যেহেতু আমরা বলছি কষ্টের টাকায় শ্রেষ্ঠ বাজার, তাই বেঁচে যাওয়া অর্থে সে তার সন্তানদের স্বাস্থ্যসম্মত সবজি ও ফল খাওয়াতে পারছে, তার পুষ্টিও বাড়ছে এবং এই অর্থ সে তাদের শিক্ষা এবং চিকিৎসার জন্য খরচ করতে পারছে।

  আউটলেট লাইফস্টাইলে প্রভাব

এই মুহূর্তে আমাদের ৫৮টি সরাসরি আউটলেট আছে, আর আছে ১১টি ফ্র্যাঞ্চাইজি। এখানে আমরা সরাসরি বিক্রি করি না, সরবরাহ করি। তারা তাদের মতো করে বিক্রি করে। সারা দেশে অন্তত ১ হাজার আউটলেটের চাহিদা আছে।

মধ্যবিত্তদের লাইফস্টাইলে স্বপ্ন ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। গত পাঁচ-ছয় বছরে অনেক মধ্যবিত্ত কাঁচাবাজার থেকে স্বপ্নে মাইগ্রেট করেছে। উচ্চবিত্তরা আগে থেকেই শপিং মলে যেত, এখন মধ্যবিত্ত ও নি¤œ-মধ্যবিত্তরাও আসছে। অর্থাৎ, তাদের লাইফস্টাইলেও বদল এসেছে। যাঁদের হাজব্যান্ড একেবারেই বাজার করার সময় পান না, হাউজওয়াইফ যাদের পক্ষে কাঁচাবাজারে যাওয়া কিছুটা অনিরাপদ, বিব্রতকর মনে করেন, তাঁরা স্বচ্ছন্দে স্বপ্নে বাজার করতে পারছেন। তা ছাড়া স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের মধ্যে একজন অফিস থেকে ফেরার পথে বাজার করতে পারেন। এতে করে সময় ে বঁচে যাচ্ছে তাঁদের। আরও আছে উইকেন্ড, শুক্র ও শনিবার পুরো পরিবার বাচ্চাকাচ্চাসহ স্বপ্নে বাজার করতে আসে। এটা তাদের অনেকটা ফ্যামিলি ডে আউট হিসেবে কাজ করে।

প্রতিযোগিতা তো আপনাকে করতেই হচ্ছে, তাহলে স্বপ্নের আলাদা বৈশিষ্ট্য কোথায়?

 যে জায়গায় স্বপ্ন খুব ডিফারেন্ট, যে কারণে আমি বলব যে স্বপ্নের মার্কেট শেয়ার বাড়ছে। আমি মনে করি, স্বপ্নের আলাদা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে স্বপ্নের টিম। স্বপ্নের একটা খুবই ডায়নামিক টিম আছে। এই টিমটা খুবই এগ্রেসিভ। তারা মনে করে যে এ দেশের মানুষের উন্নয়নে কাজ করা উচিত। তারা এটা বিশ্বাস করে এবং স্বপ্নটাকে ডেভেলপ করার জন্য, তার পরিবর্তন আনার জন্য, কাস্টমারদের রেসপেক্ট করার জন্য তারা মেটামুটি কমিটেড। এটলিস্ট আমি বলতে পারি, স্বপ্নের যারা কোর টিম মেম্বার, সবাই কমিটেড থাকে, কীভাবে কাস্টমারকে সার্ভ করা যায়।

আমাদের এখানে যদি কোনো কমপ্লেইন আসে কোনো কাস্টমারের, তখন আমি সিইও থেকে নিচ পর্যন্ত সবাই কিন্তু অ্যালার্ট হয়ে যাই। এবং আমরা কখনো কাস্টমারকে বলি না যে কাস্টমারের মিসটেক হয়েছে। আমরা বলি, এটা আমাদের মিসটেক; আমরা এর জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। সাথে সাথে রিপ্লেসই শুধু করি না, কম্পেনসেটও করি। যেমন আপনাকে আমি একটি উদাহরণ দিতে পারি, কেউ একজন মাছ কিনে রেখে দিয়েছেন আমাদের কোনো এক চেম্বারে। বলেছেন পরে নিয়ে যাবেন। আমরা বলেছি, স্যার, এভাবে মাছ রাখলে মাছটা ঠিক থাকবে না। মাছটা নিয়ে গেলেন এবং রাখলেন গাড়ির পেছনে।

আমরা বলে দিই যে গাড়ির পেছনে কখনো মাছ রাখবেন না। কারণ এতে কিন্তু নষ্ট হয়ে যাবে, আপনি সামনে রাখেন। উনি রাখলেন পেছনে এবং মাছটা কিন্তু নষ্ট হলো। উনি তারপর ফেসবুকে যা-তা বলে গালিগালাজ করলেন আমাদের। আমরা কিন্তু একবারও মনে করি না এটা ওনার মিসটেক, আমাদের না। আমরা সাথে সাথে অ্যাপোলোজাইস করেছি, এ জন্য যে আমাদের কাছ থেকে এক্সপেকটেশন হয়তো আরও বেশি ছিল, এটা সাম হাউ হয়তো হয়নি। এর জন্য আমরা সাথে সাথে রিপ্লেস করে দিয়েছি। এটা হচ্ছে স্বপ্নের একটি বড় দিক। নো কোশ্চেন, জাস্ট রিটার্ন। এটা কিন্তু আর কোথাও পাবেন না। সব সময় যে কাস্টমার ইজ রাইট, এটা কিন্তু ঠিক না। তবে কাস্টমারের আশা হচ্ছে, ‘আই অ্যাম অলওয়েজ রাইট।’ এই এক্সপেকটেশন কিন্তু আমরা মিট করি।

সুতরাং, স্বপ্নের কালচারের মধ্যেই আছে, কোনো কারণে একটি অভিযোগ এলে এখানে একটি রেড অ্যালার্ট চালু হয়। প্রথমে আমার মাথায় পরে আমার থেকে নিচ পর্যায়ে যারা কাজ করে, সবাই এটাকে তাড়াতাড়ি সলভ করার জন্য ব্যস্ত হয়ে যায়। অনেক সময় অনেক ভুয়া কমপ্লেইনও আসে, হয়তো সে ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তারপরও আমরা অ্যাপোলোজাইস করি, কিছু না কিছু একটা জিনিস দিয়ে, একটা কার্ড দিয়ে উইশ করে আমরা তাকে কিন্তু সাপোর্ট করার চেষ্টা করি। কাস্টমার ইজ অলওয়েজ অ্যাট আওয়ার সেন্টার। এটা আমরা মনে করি বড় একটা ডিফারেন্টশিয়েটিভ ফ্রম আদার। আমরা অনেক বেশি কাস্টমার সেন্ট্রিক।

আমরা সব সময় চেষ্টা করি, এখন যে প্রাইসে একটা প্্েরাডাক্ট পাওয়া যাচ্ছে, তার থেকে একটু কমে আমরা দিতে পারি কি না। এই একটা অবসেস স্বপ্নে কাজ করে। থার্ড হচ্ছে, আমরা কোয়ালিটি ধরে সব সময় নিরলস চেষ্টা করি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এখানে ইনফ্রাস্ট্রাকচারটা খুব ভালো ডেভেলপ করেনি, তাই ১০০% কোয়ালিটি এবং কোয়ালিটিটিভ মেথড ফলো করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। আপনি হয়তো বলতে পারেন, অন্য জায়গায় কী হয়? কাঁচাবাজার বা এই জায়গাতে আমি গ্যারান্টি দিতে পারব না। কী পানি ব্যবহার করা হয় মাছে, কী পানি ব্যবহার করা হয় মাংসে, আমি আসলেই কিন্তু গ্যারান্টি দিতে পারব না। আমাদের এখানে কিন্তু এগুলো বেশ চেক করা হয়। বেজ লেভেল কী কী দিয়ে তুমি ওয়াশ করছ, তোমার হাতের কী অবস্থা, কী দিয়ে ধরলা, তোমার মেশিনে কী পরিমাণ ডাস্ট জমে আছে, সেগুলো ক্লিন হচ্ছে কি না, কত টেম্পারেচারে তুমি মাংস রাখছো, কত টেম্পারেচারে তুমি মাছ রাখছো, তা বলতে হয়।

বাংলাদেশের আর কোনো জায়গায় অপসন ফর কোয়ালিটি আছে কি না আমার জানা নেই। এখন আমাদের মিসটেক যে নেই তা নয়। ধরেন, প্রতিদিন যদি আপনি ৪০ হাজার কাস্টমারকে সার্ভ করেন, প্রতিদিন কাস্টমাররা যদি ১০ থেকে ১০০০ আইটেম কেনে, তার মধ্যে একটা-দুইটা আইটেমে যে প্রবলেম থাকবে না, এটা আপনি কোনোদিনই গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবেন না। সুতরাং, যেখানে কেনাবেচা বেশি হয়, যেখানে ট্র্যানজেকশন বেশি হয়, সেখানে নয়েজও বেশি হয়। সেই নয়েজটা আপনি অ্যাড্রেস করছেন কি না, সেটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়। আপনি যদি ওয়ালমার্টের সাইটে ঢোকেন, শুধু কমপ্লেইন আর কমপ্লেইন দেখবেন। তার মানে কি ওয়ালমার্ট খারাপ করছে? বিষয়টা ও রকম নয় কিন্তু। যারা বড়, সেখানে কমপ্লেইনও বেশি। স্বপ্নেরও সাইজ অনেক বড়, ট্রানজেকশনও অনেক বড়। তার ফলে কমপ্লেইন লিস্ট তুলনামূলকভাবে মনে হবে অনেক বেশি। আসলে কিন্তু সবগুলো কমপ্লেইনই অ্যাড্রেস করা হয়। আপনি দেখবেন, কোনো সমস্যা হওয়ার পরে এই রিটেল চেইন আপনাকে কোনোভাবে ফিডব্যাক দেয় কি না। এটাকে আরও ইম্প্র“ভ করার চেষ্টা করে কি না। আমরা প্রতি মাসে চেক করি নাম্বার অব কমপ্লেইন এবং যে পরিমাণ আমরা বিক্রি করেছি, তার তুলনায় এর পার্সেন্টেজ কত। এসব সমস্যা রিমুভ করা হচ্ছে কি না।

 স্বপ্নের আজকের এই অবস্থানে আসতে কী কী সমস্যা ও প্রতিকূলতার মধ্যে পড়তে হয়েছে, ভালো দিকের পাশাপাশি খারাপ দিকও কি ছিল না? ছিল। প্রথম সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের মাইন্ডসেট। এটা বলতে আমি বোঝাচ্ছি যে রিটেইল ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু ডেভেলপ হয়নি। কোনো স্কুল রিটেইলের ওপর কোনো পড়াশোনা শেখায়নি। সুতরাং, আমাদের অনেক সময় ফ্রেশ লোকজন নিতে হয়, কিন্তু তারা আমাদের এখানে কাজ শিখে দেশের বাইরে চলে যায় বা অন্য ইন্ডাস্ট্রিতে চলে যায়। পড়াশোনা শেষ করে এখানে আসে, তারপর একটু বেশি বেতন পেয়ে অন্য জায়গায় চলে যায়। তখন আবার নতুন লোক আসে। এই নতুন লোকদের কিন্তু শেখাতে অনেক সময় লাগে। যতক্ষণ না শেখাচ্ছি, তার মাইন্ডসেট চেঞ্জ করছি, তার অ্যাটিচ্যুড পাল্টাচ্ছি, তারপরও অনেক সময় সে দু-একটা ভুল-ভ্রান্তি করে ফেলে। এটা একটা সমস্যা, যেখানে কোনো ইনস্টিটিউট নাই, সমাজও কিন্তু সার্ভিস ওরিয়েন্টেড না। এই সমাজেও কিন্তু কখনো বিনয় শেখানো হয় না। এখানে অ্যারোগেন্স শেখানো হয়। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্কুল থেকে শুরু করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোরও উচিত মানুষের ভেতর বিনয়, ধৈর্য ও অন্যকে সেবা করা, অন্যকে সাহায্য করার প্রবণতা সৃষ্টির জন্য শিক্ষা দেওয়া, সেই জায়গাটায় আমার মনে হয় একধরনের গ্যাপ আছে। তারপর স্কুলগুলোও এ ধরনের শিক্ষা দেয় না। এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান নাই। এই দিকটা আমাদের জন্য একটা বড় বাধা। এটা আমরা ফেস করেছি। প্রপার হিউম্যান রিসোর্সের অভাব। স্বপ্নের মতো প্রতিষ্ঠানের এত বিশাল জনগোষ্ঠীকে প্রতিনিয়ত ট্রেন্ড করা কতটা কষ্টসাধ্য, সেটাও একটা প্রশ্ন।

দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে, হঠাৎ করে ভাড়া বেড়ে যেতে পারে। ইলেক্ট্রিসিটি রেট গভর্নমেন্ট বাড়িয়ে দেয় হঠাৎ করে। হয়তো অনেক সময় সংগত কারণ ছাড়া। তৃতীয়ত, আমাদের দেশে মডার্ন ট্রেডের ওপর ৪% ভ্যাট গভর্নমেন্ট দিয়ে রেখেছে। আমি অনেক অর্গানাইজ প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখেছি, তারা ভ্যাট ওভাবে দেয় না। অনেক সুপার মার্কেটও আমি জানি, তারাও ঠিকমতো ভ্যাট দেয় না।

কত পার্সেন্ট ভ্যাট নির্ধারণ হলে সহনীয়? বাইরে যদি ০% হয়, তাহলে আমরা ০%। আর যদি ১% কালেক্ট করতে পারে, আমরা ১% দেব। গভর্নমেন্টের কাছে তো পুরো ডেটা আছে, কী পরিমাণ ট্রানজেকশন হয় প্রতিদিন। সেখান থেকে ভ্যাট কালেকশন কত হয়? ধরেন, সারা বাংলাদেশে দোকান আছে এবং কী পরিমাণ ট্রানজেকশন হচ্ছে আর কত পার্সেন্ট ভ্যাট সংগ্রহ হচ্ছে, সেই পরিমাণ ভ্যাট সুপারশপে আরোপ করলে ফেয়ার কম্পিটিশন থাকে। এখানে ফেয়ার কম্পিটিশনে কী লাভ গভর্নমেন্টের হবে, সেটা একটু পরে বলি।

ফেয়ার কম্পিটিশনের সাথে সাথে আমাদের কাস্টমার কাউন্ট অনেক বেড়ে যাবে। আমার ভ্যাট যখন কমে যাবে, তখন আমি এনকারেজ হবো আরও বেশি ইনভেস্ট করার জন্য। যেহেতু আমার প্রফিটিবিলিটি ইম্প্র“ভ করবে। লসের জায়গাতে ৪% কমানোর সাথে সাথে কিন্তু আমি প্রফিট করব। তাই আমি যখন লাভ করব, তখন আরও অনেক বেশি ইনভেস্ট করব।

স্বপ্নের উৎপাদনের বাইরের ২০ টাকা মূল্যের একটি পণ্য বাইরের কোনো দোকান থেকে কিনলে ২০ টাকা আর স্বপ্ন থেকে নিলে ২ টাকা ভ্যাটসহ কিনতে হচ্ছে ২২ টাকায়। এখানে স্বপ্ন থেকে পণ্য কিনে আমি কি ঠকছি না? এক নম্বর বিষয় হচ্ছে, বাইরের বা পাড়ার দোকানের সব পণ্য জেনুইন আছে কি না, সেটা জানা যাচ্ছে না। দুই নম্বর হচ্ছে, সে অনেক ধরনের পণ্য একসাথে পাচ্ছে। মাত্র একটি পণ্য পাড়ার দোকান থেকে ক্রেতা কিনতে চায় না। তৃতীয়ত যেটা হয়, আমাদের এখানে বিভিন্ন সময়ে নানা রকম অফারও থাকে। সেগুলোর জন্য তারা আসে। আর ভ্যাট যে পুরোপুরি আমরা কাস্টমারের ওপর চার্জ করি, তা কিন্তু না। স্বপ্নে আমরা নিজেরাও ভ্যাটের একটি অংশ বিয়ার করি। এটা আমরা ডিসকাউন্ট দিই। তার ফলে যেটা হয়, আমার প্রফিট কিন্তু থাকছে না। যে কথাটা রইল, আমি তো এক্সট্রা টাকাটা দেব না, এটা যৌক্তিক। এর সাথে সমন্বয় করতে গেলে আমার প্রফিটটা থাকছে না। আমার কোম্পানি যদি প্রফিট করে ১৫-১৬%, আবার এর মধ্যে ৪% ছেড়ে দিতে হয়, এত বড় ইনফ্রাস্ট্রাকচারে ১২-১৩% প্রফিট কোনো কোম্পানি করতে পারবে না।

  এখন স্বপ্নের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ

আমি মনে করি, প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আমাদের বিষয়ে গভর্নমেন্টের একটি পজিটিভ অ্যাটিচিউড তৈরি করা। এটা হচ্ছে প্রথম চ্যালেঞ্জ। একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা যায় কি না। সবগুলোর যেন একই বেইজ তৈরি হয়। এটা আমাদের ইন্ডাস্ট্রির প্রফিটের জন্য বিরাট একটা পজিটিভ দিক।

দ্বিতীয়ত, আমাদের ট্রেনিংয়ের জায়গাটা কোনো ইনস্টিটিউটে করা যায় কি না। কোনো ইউনিভার্সিটিতে এ বিষয়ে বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা করা। এ রকম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট থেকে ছেলেমেয়েরা বের হয়ে আমাদের সার্টিফিকেট শো করল, আমরা তাদের নিয়ে নিলাম। তাহলে আমরা প্রশিক্ষিত লোক পেয়ে যেতে পারি।

থার্ডলি আমরা বলতে পারি, ইনফ্রাস্ট্রাকচারে কোনো ধরনের সাপোর্ট আমরা পেতে পারি কি না। যেমন ধরেন, অনেক ধরনের পণ্য কিন্তু আমাদের দেশের বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে। এগুলো পাওয়ার জন্য শুল্ক-ভ্যাটগুলোকে এখান থেকে সরানো যায় কি না। দামটা একটু কমানো যায় কি না, আমাদের যেসব মেশিন ইমপোর্ট করতে হয়, সেগুলোর ওপর থেকে ট্যাক্স-ভ্যাট কমানো যায় কি না।

আর একটা বিষয় হচ্ছে, আমাদের ক্রেতার সাথে একটি সংযোগ সৃষ্টি করে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে ভুলগুলো কমানোর চেষ্টা করতে হবে। এই দুটি জিনিস যদি একসাথে হয়, তখন হয়তো এটার সম্ভাবনার রেট বাড়বে।

অনেকেই ধারণা করেন, সুপার মার্কেটগুলোতে জিনিসপত্রের দাম বেশি, আসলে কিন্তু এটা ঠিক না। সে বিষয়টা আমাদেরও দায়িত্ব তাদের বোঝানো। ক্রেতাদেরও বোঝা উচিত যে আমরা নিশ্চিত একটি মান পাচ্ছি, ভালো জিনিস পাচ্ছি, সেখানে কেন নয়? এই সেতুবন্ধনটাও বোধ হয় একটা চ্যালেঞ্জ যে এটাকে আমরা কতটুকু শক্ত করতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত ট্রেডের ১.৫% হচ্ছে ব্রডার ট্রেড, সুপার মার্কেটগুলো। হওয়া উচিত ছিল ৮%। পাশের দেশগুলোর মতো যেমন ইন্ডিয়া, শ্রীলঙ্কা। এই জায়গায় কিন্তু একটা বড় গ্যাপ।

স্বপ্নের সামাজিক দায়বদ্ধতা

 সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে হিউম্যান রিসোর্স তৈরি করার ক্ষেত্রে, কৃষকদের বাজারবান্ধব করে গড়ে তোলার জন্য, কাস্টমারদের মাইন্ড সেটআপ তৈরি করার জন্য স্বপ্নে কি কোনো ধরনের সিএসআর কর্মকাণ্ড হচ্ছে? স্বপ্নের তো এখন পর্যন্ত আমার মনে হয় পুরোটাই সিএসআর। আমাদের শেয়ারহোল্ডারদের যখন মিটিং হয়, এজিএম; সেখানে অনেক শেয়ারহোল্ডার তো আমাদের বোর্ডকে বলেন যে এটা তো প্রফিটের জন্য করছি না, এটা ননপ্রফিট এবং জনগণের কল্যাণের জন্য করছি। এখন পর্যন্ত স্বপ্ন লাভের মুখ দেখেনি, এটাই বাস্তবতা। আমাদের এজিএম রিপোর্টে আরও ক্লিয়ার করে বুঝতে পারবেন। এটাই তো সিএসআর।

আমরা যে বিশুদ্ধ খাবারটা সুলভ মূল্যে কাস্টমারকে দিচ্ছি, এটা কি সেবা না? এগুলো ডেভেলপমেন্টের জন্য আমরা গ্রামে যে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপ করছি, কৃষকের কাছ থেকে নিয়ে আসছি, এটা কি সিএসআর না? আমাদের যারা কর্মচারী আছে, এদের অধিকাংশই ছাত্র, তারা মফস্বল থেকে এসেছে অনেকেই। অনেকেই ঢাকায় বড় হয়েছে, কিন্তু বাবা রিটায়ার্ড করেছে, এখন করার কিছু নেই। তার ছোট ভাইবোন আছে, তাদের পড়াশোনা চালাতে হয়। তারা এসে চাকরিটা নেয় এবং এখান থেকেই তাদের সংসারটা চালায়।

অনেক মহিলার হাজব্যান্ড অসুস্থ বা কোনো সমস্যায় পড়েছেন, তাঁদের অনেকেই আমাদের স্বপ্নের নানা ধরনের পোশাকের  ডিজাইন করছেন, তৈরি করে এখানে বিক্রি করছেন কোনো ভাড়া ছাড়াই। এটাও কি সিএসআর নয়?

আমরা মনে করছি, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে স্বপ্ন প্রফিটেবল হবে। আর যখন স্বপ্ন প্রফিটেবল হবে, আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে সহজ শর্তে ব্যাপক হারে ঋণ দেওয়া, ছাত্রদের নিয়ে আরও বড় ধরনের কাজ করা। বৃত্তি বা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্যে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

ছাত্ররা পার্টটাইম ও ফুলটাইম দুভাবেই কাজ করছে। এখানে যারা ফুলটাইম কাজ করছে, তারা আর ছাত্র কীভাবে থাকছে? বুঝতে হবে যে সুপার মার্কেট ব্যবসা হচ্ছে ২৪ ঘণ্টার ব্যবসা। আমার কেনাকাটা হয় রাতের বেলা। ওটা কিন্তু আপনারা দেখেন না। আপনারা দেখেন, সকাল ৮টায় খোলে আর রাত ১১টায় বন্ধ হয়। এখন আমাদের একজন ছাত্র, সে সকালের শিফটে এল, দুপুর দুইটায় বের হয়ে গেল। আবার আরেকজন বিকেলের শিফটে ঢুকে রাত ১০টায় বের হতে পারে। এরা কিন্তু সকালে ক্লাস করে আসতে পারে। আর ছাত্রদের পরীক্ষার ক্ষেত্রে আমরা ওই দিন ছুটি দিয়ে দিই। আমাদের আউটলেটগুলোতে ৯৮ ভাগ স্টুডেন্ট।

বাংলাদেশে এ রকম মডেল কি আর কোথাও আছে? আর এই কার্যক্রমকে আমরা কি ‘মডেল’ বলতে পারি? না, এ ধরনের মডেল আমাদের দেশে নেই। এটাকে একটি মডেল হিসেবে দেখতে পারি। এটা একটা ‘স্বপ্ন’ মডেল। আমি এ রকম মডেল আর কোথাও দেখিনি। সারা পৃথিবীতে কাউকে দেখি নাই যে প্রায় পুরোটা ছাত্ররাই চালায়। কৃষকের সঙ্গে কানেক্ট করে, প্রফিটের চেয়ে বেশি চিন্তা করে কীভাবে ভ্যালু অ্যাড করা যায় এবং কীভাবে সেফ ফুড এনসিয়োর করা যায় এবং তারা ওয়েট করে একসময় প্রফিটের মুখ দেখবে। এ ধরনের বিজনেস প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশে নেই। আমি বলব যে এসিআই, অ্যাজ আ কোম্পানি, অনেক দূরদর্শী এবং অনেক বড় ভিশন নিয়ে কাজ করছে।

স্বপ্নতে নিজেকে জড়ালাম কেন

 আমার সুযোগ হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাওয়ার এবং কাজ করার। কাজের পাশাপাশি এমআইটির সাথে কানেক্টেড রয়েছি। এমআইটি হচ্ছে ম্যাসাচুসেট ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি। ধরা যাক, আমেরিকার এক নম্বর ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি। আমি ওখানে পার্টটাইম স্টুডেন্ট হিসেবে কাজ করছি। নতুন নতুন টেকনোলজি এমআইটিতে জন্ম হয়। আমি ফুলটাইম ওখানে না কেন বা এখানে-ওখানে আসা-যাওয়ার ওপরে থাকি কেন? এর কারণ হিসেবে মনে করি, আমার দেশের ওপর আমার একটি দায়বদ্ধতা আছে। যেমন স্বপ্ন প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব যখন আমি নিয়েছিলাম ২০১২ সালে, সে সময় অনেকেই বলেছিল যে স্বপ্নের বোধ হয় কোনো ভবিষ্যৎ নেই অথবা এটা খুব একটা ডেভেলপও করবে না। কাস্টমাররা এখানে খুব একটা আসতে চাইত না।

আমার মনে আছে যে এখানে কাস্টমার কাউন্ট খুবই কম ছিল। প্রতিদিন গড়ে ৮ হাজার কাস্টমার আসত, অধিকাংশই খুব বিরক্ত হয়েই চলে যেত। সেখান থেকে তো এখন প্রতিদিন ৪০ হাজার কাস্টমার স্বপ্নে ঢোকে। বাংলাদেশে সেই সময়ে আগোরা ছিল মার্কেট লিডার। আমার মনে আছে। এবং মীনা বাজারও বোধ হয় তার পরে ছিল। স্বপ্নের পজিশন কেউ কাউন্টও করত না। এখন   তো স্বপ্ন রিটেইল বাজারে এক নম্বর ব্র্যান্ড, মার্কেট লিডার। এর অর্থ হচ্ছে, ব্যাপকসংখ্যক ক্রেতার আস্থা অর্জন করতে পেরেছে স্বপ্ন এবং তাদের পরিবারের স্বাচ্ছন্দ্যের সহায়ক ভূমিকায় দাঁড়িয়েছে। এটা অনেক বড় পাওয়া না হলেও কিছু একটা তো পাওয়া, কিছু একটা তো করা।

এখন আমার সামনে স্বপ্নের যে ভিশনগুলো আছে, এই ভিশনগুলো আমাকে অ্যাট্রাক্ট করে এবং আমি মনে করি এর মাধ্যমে আমি পুরো বাংলাদেশকেই সার্ভ করতে পারছি। যেমন কৃষকের ভাগ্যের উন্নয়নের পরিবর্তন হচ্ছে। এর মাধ্যমে যদি একটি মডেলও তৈরি হয়, এর মাধ্যমে কৃষকের ভাগ্যোন্নয়ন হয় বা ছাত্রদের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়, মধ্যবিত্তের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হয়; এটা কি একটা বড় ব্যাপার না?

ব্যক্তিজীবনে পড়াশোনা কিছু হওয়ার স্বপ্ন 

আমার জীবনে, আমার মনে হয়, আমার অনেকবার পুনর্জন্ম হয়েছে। আমি যখন পড়াশোনা করতাম, এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষা দেব, সেই সময়টায় আমি ভালো ছাত্র ছিলাম। তখন আমার স্বপ্ন ছিল ফিজিশিয়ান হব। কিন্তু আমাদের কালচার্ড ফ্যামিলির কারণে কালচারাল অ্যাক্টিভিটিজের সঙ্গে থাকি। তখন আমার হঠাৎ করেই মনে হলো, আমি একজন সংগীতশিল্পী এবং আমি স্টেজে গান গাই এবং আমি গিটারও বাজাই। তারপর আমি বুঝতে পারলাম, না আমি সংগীতশিল্পী হব না, ফিজিস্ট হব।

এদিকে আমার বাবার কথা যে দুই ছেলে ইঞ্জিনিয়ার, আমারও ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। বাধ্য হয়ে আমাকে বুয়েটে ভর্তি হতে হলো। বুয়েটে ভর্তি হলাম, এদিকে আবার সংগীতও চলতে থাকল। তখন স্টেজ ও স্টুডিওতে কিছু কর্মকাণ্ড হলো। তারপর আমি দেখলাম যে ফিজিক্সের বাতিকটাই থাকল। এ কারণে প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম স্যার, উনি চিটাগং ইউনিভার্সিটিতে ছিলেন, উনিও তখন দেশে ব্যাক করেছেন। উনি ছাত্র খুঁজছেন, ছাত্র পাচ্ছেন না। ওনার পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কেউ পাস করতে পারছেন না। আমি ওখানে অ্যাপ্লাই করলাম এবং স্যার আমাকে সিলেক্ট করলেন। ওনার সাথে চিটাগংয়ে এক বছর সহযোগী হিসেবে কাজ করলাম, বুয়েট থেকে পাস করার পরপরই।

এরপর বাটা সু কোম্পানিতে চাকরিতে ঢুকলাম। এ সময় একটা স্বপ্ন ছিল, আমি একটি কোম্পানির সিইও হব। সেটার ১০ বছরের মাথায় কিন্তু সিইও হলামও। সিইও যখন হলাম, তখন মনে হলো বাংলাদেশি একটা কোম্পানিকে ইন্টারন্যাশনাল লেভেলে নিয়ে যাব বা রিজিওনাল লেভেলে নিয়ে যাব। সেটা হলো অটবির মাধ্যমে। আটবি একটা ব্যক্তিকেন্দ্রিক বা ফ্যামিলিকেন্দ্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিষ্ঠান ছিল। আমার সময়ে এটা একটা রিজিওনাল রিটেইল প্লেয়ার হিসেবে আবির্ভূত হলো এবং টার্নওভার প্রায় পাঁচ গুণ বেড়ে গেল, এমপ্লয়ির সংখ্যাও পাঁচ গুণ হলো। প্রায় পাঁচ গুণের মতো আমাদের স্টোরস কাউন্ট হলো। করপোরেট অর্গানাইজেশন হিসেবে অটবির তখন আবির্ভাব হলো। সেখানে টিম লিডার বা সিইও হিসেবে আমার কিছু রোল ছিল। তারপর আমার মনে হলো, তারা যেহেতু আর একটি সেক্টরে ইনভেস্ট করছে, পাওয়ার সেক্টর। ওটা আমার ভিশনের সঙ্গে যাচ্ছে না। আমি ছেড়ে দিলাম।

তারপর আবার স্বপ্নের দায়িত্ব পেলাম। এখন স্বপ্নের এই দায়িত্বটা পালন করার চেষ্টা করছি। আমার ব্যক্তিগত জীবনে সুযোগ হয়েছে নিজেকে জানার। আমার ধর্ম ও দর্শনবোধ অনেকের থেকে হয়তো আলাদা। অনেক দেশে গিয়েছি, অনেকের সাথে মিশেছি, যাঁরা সুফি সাধক, সন্ন্যাসী এমনকি পাগল, তাঁদের কাছ থেকেও অনেক কিছু শেখা। আমার জীবনে একটা সময়ে সুফিবাদ একটি বড় রোল প্লে করেছে। আমি জানি না, আমি আসলে কী খুঁজতে চেয়েছি।

  জীবন নিয়ে তৃপ্তি

 বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানে এখন পড়াশোনা করছি, এমআইটি। আল্লাহর রহমত ও আপনাদের দোয়ায় হয়তো ওখান থেকেও প্রযুক্তিগত শিক্ষার একটি বড় অর্জন হয়ে যেতে পারে। সেটাতে তৃপ্তি আসবে কি না জানি না। তৃপ্তি আসবে তখন, যখন আমি দেখব যে আমার দেশের মানুষ প্রকৃত অর্থে ধর্ম কী তা বুঝতে পেরেছে এবং মেয়েদের প্রতি তারা শ্রদ্ধাশীল হয়েছে। রাস্তাঘাটে মেয়েরা স্বচ্ছন্দে নিরাপদে চলাফেরা করতে পারছে। ছেলেমেয়েরা ড্রাগসের বদলে পড়াশোনা নিয়ে মগ্ন এবং বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়ার মতো উন্নয়নশীল একটি ট্র্যাকে চলে আসুক। একটি সভ্য, পরিচ্ছন্ন জাতি আমরা দেখতে চাই। আমি দেখতে চাই না আমাদের দেশে রাজন মারা যাচ্ছে মার খেয়ে। আমি দেখতে চাই না আর একটা বিশ্বজিতের প্রাণহানি হচ্ছে। দেখতে চাই না বইমেলা বা পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে মেয়েরা লাঞ্ছিত হচ্ছে। আমার দেশের মানুষের জীবনের যে মূল্যবোধ, সেটা যদি পাল্টাতে পারে, আমি সেখানে যদি সহায়তা করতে পারি, তাহলে অমি মনে করি যে আমার জীবন তৃপ্ত। প্রফেশনাল জীবনের তৃপ্তি একধরনের তো আছেই। অপনি যখন সাকসেসফুলি দায়িত্ব পালন করেন সিইও হিসেবে, এরপর তো আর তেমন কোনো অতৃপ্তি থাকে না। তখন আসে সামনের আরও বড় লক্ষ্য। সেটা হচ্ছে আমদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কিছু করতে পারা।