স্বাধীনতার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে জাতিকে আরো অনেক দূর যেতে হবে: রাষ্ট্রপতি

ফাইল ফটো
ফাইল ফটো

রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সুবর্ণজয়ন্তীর সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্জনের কথা তুলে ধরে বলেছেন, স্বাধীনতার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে জাতিকে আরো অনেক দূর যেতে হবে। আগামীকাল ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আজ এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস। স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে দেশবাসীসহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের তিনি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। ঐতিহাসিক এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তিনি পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন । তিনি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহিদদের, যাঁদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে জাতি স্বাধীনতা পেয়েছে। এছাড়া তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থক, বিদেশি বন্ধুসহ সকল স্তরের জনগণকে, যাঁরা বাঙালির অধিকার আদায় ও মুক্তিসংগ্রামে অসামান্য অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে তাঁদের অবদান চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু সবসময় রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। দারিদ্র্যবিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ, গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। তিনি বলেন, দারিদ্র্যের হার কমছে। জিডিপির ধারাবাহিক উচ্চ প্রবৃদ্ধি হার অব্যাহত রয়েছে। গত এক দশকে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে তিনগুণ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজও পুরোদমে এগিয়ে যাচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ শুধু দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশি দেশগুলোই নয়, অনেক উন্নত দেশকেও ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমরা ২০৪১ সালে একটি উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। এ জন্য ‘দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১’ প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পানি, জলবায়ু, পরিবেশ ও ভূমির টেকসই ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্লান ২১০০’। টেকসই উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, ইনশাআল্লাহ।’

তিনি বলেন, সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’- বঙ্গবন্ধুর এ পররাষ্ট্র নীতির আদর্শ অনুসরণে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠাসহ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও দেশের অর্জন প্রশংসনীয়। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও তাঁদের কষ্টার্জিত রেমিটেন্স প্রেরণের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে বিপুল অবদান রেখে চলেছেন। এতদসত্ত্বেও স্বাধীনতার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে জাতিকে আরো অনেক দূর যেতে হবে। তিনি বলেন, উন্নয়নকে জনমুখী ও টেকসই করতে সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহত করতে হবে। জাতীয় সংসদকে জনগণের আশা-আকাঙ্খার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে হবে । এ জন্য সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধীদলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির চিরন্তন প্রেরণার উৎস। এ বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী সাড়ম্বরে উদযাপনের লক্ষ্যে সরকার ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করাই হোক মুজিববর্ষে সবার অঙ্গীকার। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হবে। দেশ নতুন অধ্যায়ে, নব দিগন্তে প্রবেশ করবে । এই সন্ধিক্ষণে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশে পরিণত হোক, মহান স্বাধীনতা দিবসে- এ আমার প্রত্যাশা।’ তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/ আখনূর রহমান