হবিগঞ্জের হাওরে শ্রমিকের পাশাপাশি ধান কাটছে মেশিন

জেলায় আবহাওয়ার পুর্বভাসে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যার সতর্কতা জারি করা হলেও এখন পর্যন্ত কোন বিপর্যয় দেখা না দেয়ায় হাওরের পাকা ধান কাটতে পারছে কৃষকরা। প্রশাসনের তৎপরতায় অন্য জেলা থেকেও এসেছে পর্যাপ্ত শ্রমিক। স্থানীয় শ্রমিকরাও কাজ করছেন প্রতিদিন। এছাড়াও এবার সরকারিভাবে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ধান কাটার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ।
হবিগঞ্জের সবচেয়ে বেশী বোরো ধান আবাদ হয় বানিয়াচং উপজেলায়। এ বছর ওই উপজেলায় ৩৫ হাজার ১শ’ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন খন্দকার জানান, আমার উপজেলায় উত্তরবঙ্গ থেকে এখন পর্যন্ত ৭৫০জন ধান কাটা শ্রমিক এসেছে। স্থানীয়ভাবে আরও ১ হাজার শ্রমিক সংগ্রহ করেছি। এর বাইরে ব্যবহার করা হচ্ছে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন। ফলে হাওরে ধান কাটতে সমস্যা হচ্ছে না। শুধু শুক্রবার একদিনেই উপজেলায় ২ হাজার ১শ’ হেক্টর জমির পাকা ধান কাটা হয়েছে।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছিল ১৭ থেকে ২০ এপ্রিল বৃহত্তর সিলেটে ও নেত্রকোণায় ১৫০ থেকে ২০০ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হবে এবং বিভিন্ন নদীর পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বড় কোন সমস্যা হয়নি। হবিগঞ্জের খোয়াই নদীতে ২৪ ঘন্টায় বৃদ্ধি পায় মাত্র ৭ সেন্টিমিটার পানি এবং গত ২৪ ঘন্টায় হবিগঞ্জ জেলায় বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার। আর বৃষ্টি রাতের বেলা হওয়ায় কৃষকরা দিনের বেলা ঠিকই ধান কাটতে পারছে। সামনে বৃষ্টি হলেও বড় কোন সমস্যা না হওয়ারই সম্ভাবনা বেশী।
এদিকে হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ৫০ শতাংশ ভর্তুকি মূল্যে কৃষকদেরকে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলায় বিতরণ করা হয়েছে ২০ হারভেস্টার। এর একটির মূল্য ২২ থেকে ২৬ লাখ টাকা। এই মেশিন দিয়ে দৈনিক ৩০ বিঘা জমির ধান কাটা, মাড়াই ও ঝাড়াই এর কাজ করা যায়।
হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলায় ৮টি, বানিয়াচং উপজেলায় ৫টি, হবিগঞ্জ সদর ও মাধবপুর উপজেলায় ৪টি করে, আজমিরীগঞ্জ, লাখাই উপজেলায় ২টি করে এবং বাহুবল ও চুনারুঘাট উপজেলায় ১টি করে মেশিন বরাদ্ধ করা হয়েছে। এই মেশিন ব্যবহারে শ্রমিক সংকট কমে যাচ্ছে। এতে সময় ও খরচ সাশ্রয় হয়।
হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তমিজ উদ্দিন জানান, গত কয়েক বছরে সরকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ভর্তুকী মূল্যে বিপুল পরিমাণ মনি হারভেস্টার মেশিন বিতরণ করেছে। সব মিলিয়ে শ্রমিক সংকট মোকাবেলায় সরকারের এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এতে করে সব ধান এবার কৃষকের গোলায় উঠবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।