হৃৎপিণ্ডের ব্যাগ নিয়ে বেচে আছেন, এক বৃটিশ নারী

মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হৃৎপিণ্ড, যা মানুষের জীবনীশক্তি। সাধারণত মানবদেহে হৃৎপিণ্ড থাকে বুকের বাম পাশে। তবে ৩৯ বছর বয়সী বৃটিশ নারী সেলওয়া হোসেনের হৃৎপিণ্ড থাকে ব্যাগে। সেই ব্যাগ পিঠে ঝোলানো থাকে। ব্যাগটি এখন তাঁর দেহের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি ছাড়া সর্বোচ্চ ৯০ সেকেন্ড বেঁচে থাকতে পারবেন তিনি। তাই দিনের ২৪ ঘণ্টাই ওই ব্যাগ সঙ্গে থাকে তাঁর।

বিশ্বে কৃত্রিম হৃদপিণ্ড নিয়ে বেঁচে থাকা দ্বিতীয় মানুষ এই সেলওয়া হোসেন। স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে এখন মন্দ কাটছে না তাঁর জীবন। সেলওয়ার দেহে কৃত্রিম হৃদপিণ্ড স্থাপনে খরচ হয়েছে ৯৬ লাখ টাকা। একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান এই কৃত্রিম হৃদপিণ্ডটি প্রস্তুত করেছে।

ছয় মাস আগে সেলওয়া প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। অসুস্থ শরীরে নিজেই গাড়ি চালিয়ে তিনি এসেক্সে পারিবারিক ডাক্তারের কাছে যান। সেখান থেকে তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়।

সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, সেলওয়া হৃদপিণ্ডের তীব্র সমস্যায় ভুগছেন। চার দিন পরে জরুরি ভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিখ্যাত হেরেফিল্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়। এই হাসপাতালের অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা স্বাভাবিক উপায়ে তাঁর হৃদপিণ্ড সচল রাখতে ব্যর্থ হন। তাই বাধ্য হয়েই বিকল্প চিন্তা করেন তাঁরা।

ওই হাসপাতালে তাঁর শরীরে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচার করা হয়। চিকিৎসকরা সেলওয়ার অচল হয়ে পড়া হৃদপিণ্ড অপসারণ করেন। শরীরে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে তাঁর শরীরে হৃৎপিণ্ডের পরিবর্তে প্লাস্টিক চেম্বার স্থাপন করা হয়। শরীরের বাইরে থেকে পাম্পের মাধ্যমে এই প্লাস্টিক চেম্বারে বায়ুচাপ তৈরি করা হয়। আর এর মাধ্যমে তাঁর শরীরে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখা হয়। অপারেশনের মাধ্যমে সেলওয়ার জীবনে নতুন একটি ব্যাগ সংযুক্ত হয়। এতে স্থাপন পায় দুটি ব্যাটারি, একটি ইলেক্ট্রিক মোটর ও একটি পাম্প।

সেলওয়া হোসেন বলেন, আগে আমি প্রচণ্ড অসুস্থ ছিলাম। কিন্তু এই অস্ত্রোপচারের পর তা থেকে মুক্তি পেয়েছি। স্বাভাবিক মানুষের মতো বাড়িতে ফিরে এসেছি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেলওয়ার মতো রোগ খুবই বিরল। এটিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় কার্ডিওমিওপ্যাথি বলা হয়। মূলত গর্ভাবস্থা থেকে এই সমস্যার সূত্রপাত হয়।

চিকিৎসক সাইমন বলেন, খুব ভালোভাবেই অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। আর সেলওয়াও চমৎকারভাবে সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

আজকের বাজার : এলকে/ ২ জানুয়ারি ২০১৮