১৭ পণ্যে পাটের বস্তা নিশ্চিতে ১৫ মে থেকে অভিযান

সতেরটি পণ্য সংরক্ষণ ও পরিবহনে পাটের বস্তা ব্যবহারে আগামী ১৫ মে থেকে ফের বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবে সরকার। সচিবালয়ে রবিবার (৯ এপ্রিল) এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এ কথা জানান। পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইনের বাস্তবায়ন পর্যালোচনা, ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ বিষয়ে এ সভার আয়োজন করা হয়।

‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’ এর অধীনে গঠিত ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার বিধিমালা, ২০১৩’ অনুযায়ী এতদিন ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি পরিবহনে পাটের মোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক ছিল। বিধিমালার তফসিলে আরও ১১টি পণ্য যুক্ত করে ২১ জানুয়ারি গেজেট জারি করে সরকার। সেই পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, ধনিয়া, আলু, আটা, ময়দা ও তুষ-খুদ-কুড়া।

এর আগে ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে ছয়টি পণ্য মোড়কীকরণে পাটের ব্যবহার নিশ্চিতে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। আইন অনুযায়ী, পাটের মোড়ক ব্যবহার না করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে সর্বোচ্চ দণ্ডের দ্বিগুণ দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী সভায় বলেন, ‘ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি সহ ১৭টি পণ্য সংরক্ষণ ও পরিবহনে পাটের বস্তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে সারাদেশে আবারও আগামী ১৫ মে থেকে বিশেষ অভিযান শুরু হবে। এসব পণ্য সংরক্ষণ ও পরিবহনে প্লাস্টিকের বস্তার ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড, ব্যাংক ঋণ সুবিধা বন্ধ, লাইসেন্স বাতিল, আইআরসি (আমদানি নিবন্ধন সনদ) ও ইআরসি (রফতানি নিবন্ধন সনদ) বাতিল করে আইন বাস্তবায়নে এবার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ অভিযানের জন্য সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে আগের মতো মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ তদারকির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

এবার বিশেষ অভিযানে কারাদণ্ড, অর্থদণ্ডের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি সংরক্ষণ ও পরিবহনে দেশের বিভাগ, জেলা, উপজেলা, থানা পর্যায়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে।’

সভায় জানানো হয়, লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, দেশের বিভিন্ন বাজারে এখন কিছু কিছু আড়ৎ, দোকান, প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সুপার সপে প্লাস্টিকের ব্যাগে পণ্য মোড়কীকরণ করে বাজারজাত করা হচ্ছে যা রোধ করা প্রয়োজন। আইনটি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হলে প্রতি বছর ১০০ কোটি পাটের বস্তার চাহিদা সৃষ্টি হবে। স্থানীয় বাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে, পাট চাষীরা পাটের ন্যায্য মূল্য পাবেন।

পাট মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এর আগে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ অভিযানের সময় এক হাজার ৬০৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে এক কোটি ৫১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়া দু’জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপরদিকে গত বছরের জুলাই থেকে গত মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে ৮৪৭টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ৭৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

সভায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফয়জুর রহমান চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব গোপালকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য, পাট অধিদফতরের মহাপরিচালক মোছলেহ উদ্দিন, বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) চেয়ারম্যান মো. মাহমুদুল রহমানসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএ) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।