২০১৮ সালের পর পূর্ণাঙ্গ কমিশনে রূপ নিচ্ছে বিএসইসি

করোনা পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারের সংকট মোকাবিলায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে তিন কমিশনারের নিয়োগের বিষয়টিও চূড়ান্ত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বিএসইসির একটি কমিশনার পদে যে শূন্যতা ছিল তা অবশেষে পূরণ হচ্ছে। এর ফলে দুই বছর পর একটি পূর্ণাঙ্গ কমিশনে রূপ নিতে যাচ্ছে বিএসইসি।

একজন চেয়ারম্যান ও তিনজন কমিশনার নিয়ে গঠিত বিএসইসি। সম্প্রতি সাবেক চেয়ারম্যান এবং ২ কমিশনারের চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় গত ১৫ মে থেকে অভিভাবক শূন্য ও কোরাম সংকটে পড়ে এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তাই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বিএসইসির শূন্য পদগুলোতে দ্রুত নিয়োগ দিয়েছে সরকার।বলে খবর রাইজিংবিডির।

এদিকে কমিশনের এ পূর্ণতাকে শক্তি বলে মনে করছে বিএসইসি। এ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে গঠনমূলক ও সমযোপযুগী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে করোনার প্রভাবসহ ধারাবাহিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে বলে মনে করে সংস্থাটি। সে অনুযায়ী বিএসইসি প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

তথ্য মতে, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের পর গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ঢেলে সাজানো হয় বিএসইসিকে। এরই ধরাবাহিকতায় ২০১১ সালের মে মাসের মধ্যেই বিএসইসি’র চেয়ারম্যান ও চারজন কমিশনারকে নিয়োগ দেয় সরকার। একটি পূর্ণাঙ্গ কমিশন নিয়ে ধারাবাহিক ছয় বছর কার্যক্রম চালাতে থাকে বিএসইসি। তবে ২০১৮ সালে ৩০ এপ্রিল একজন কমিশনারের চুক্তিভিত্তিক কাজের মেয়াদ শেষ হয়। তারপর থেকেই বিএসইসিতে একজন কমিশনারের পদ শূন্যই থেকেই যায়। কয়েক দফা চেষ্টা করেও ওই পদে যোগ্য কাউকে নিয়োগ দিতে পারেনি সরকার।

তবে সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতিতে একজন কমিশনার বাদে চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারসহ মোট চারটি পদ শূন্য হয়ে পড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার। বিএসইসি’র চেয়ারম্যানের শূন্য পদে গত ১৭ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামকে নিয়োগ দেয় সরকার। পাশাপাশি কোরাম সংকট এড়াতে বুধবার (২০ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিজানুর রহমানকে কমিশনার পদের নিয়োগের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আর আরেক কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেতে যাওয়া শিল্প সচিব আব্দুল হালিম ২৭ মে অবসরে যাবেন। তাকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এরপরই তিনিও বিএসইসিতে যোগদান করবেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বিএসইসি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের নতুন টিমে একজন ফাইন্যান্স ও একজন অ্যাকাউন্টিং বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। এছাড়া একজন সরকারের সুউচ্চ পর্যায়ের সচিব রয়েছন। আশা করি টিম পুঁজিবাজারের উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিএসইসিতে যোগদানের পর থেকেই আস্তে আস্তে কাজ গুছিয়ে নিচ্ছি। নতুন কমিশনাররা যোগদান করলেই পূর্ণাঙ্গ কমিশন নিয়ে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে সুপরিকল্পিত ভাবে কাজ চলবে।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউন হক বলেন, এবারের কমিশন অন্য যে কোনো কমিশনের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী, যোগ্যা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। আশা করছি বিনিয়োগকারীসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা নতুন কমিশনের প্রতি আস্থা ফিরে পাবেন।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মামুন-উর-রশিদ বলেছেন, বিএসইসিতে নতুন যে তিন কমিশনার নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন তারাও খুবই যোগ্যাতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। আমার মনে হয় এবারের বিএসইসি’র কমিশন খুবই শক্তিশালী হবে এবং পুঁজিবাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম বিএসইসির চেয়ারম্যান নিয়োগের আগে তিনি সাধারণ বিমা করপোরেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একাধিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং বাণিজ্য অনুষদের ডিন ছিলেন। আর কমিশনার হিসেবে নিয়োগের জন্য মনোনীত আব্দুল হালিম বর্তমানে শিল্প সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আগামী ২৮ মে থেকে এলপিআরে যাবেন। এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসডিজি বিভাগের ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এদিকে অধ্যাপক শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছে। আর অধ্যাপক মিজানুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে শিক্ষকতা করছেন।