অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর কিশোরগঞ্জ শহরের মুক্তমঞ্চ

‘শীতের আমেজে নরসুন্দা নদীর বুকে ভিড় জমিয়েছে দূরদেশ থেকে আসা অতিথি পাখিরা। কিন্তু নেই উষ্ণ অভ্যর্থনা কিংবা কোনো বরণ ডালা, নেই যত্ন-আথিত্যের আয়োজন। দখল আর দূষণের কবলে পড়া এ অভয়ারণ্য আজ হুমকির মুখে।’ এর পরেও অন্য বছরের তুলনায় নরসুন্দা লেকসিটির মুক্তমঞ্চের বেড়েছে অতিথি পাখির সংখ্যা।

জানা গেছে, ডিসেম্বরের শেষ দিকে ও জানুয়ারির শুরুতেই নরসুন্দার বুকে ভিড় জমাতে শুরু করে হাজার হাজার বালি হাঁসসহ নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। পাখির কলতানে ভরে উঠে আশপাশের এলাকা। ব্রহ্মপুত্রের শাখা এ নদীটিকে দৃষ্টি নন্দন লেকসিটি হিসেবে গড়ে তোলার পর থেকে শীতকালে নতুন প্রাণ সঞ্চার হয়েছিল এখানে। এ লেকসিটির একটি অংশ গুরুদয়াল সরকারি কলেজের সামনে মুক্তমঞ্চ এখানেই বেশি ভিড় করে এইস অতিথি পাখি। তাদের দেখতে সকাল-বিকেল ভিড় জমে নরসুন্দা লেকসিটির মুক্তমঞ্চে। দখল আর দূুষণে নরসুন্দার অভয়ারণ্য হারাতে বসেছে তার সৌন্দর্য। কচুরিপানার ভিড়ে অতিথি পাখিদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই যেন কঠিন হয়ে উঠেছে। হতাশা বাড়ছে প্রকৃতিপ্রেমীদের মাঝেও। তবে আশার কথা শোনালেন গুরুদয়াল সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মোফাজ্জল হোসেন। তার মতে অন্য বছরের তুলনায় নরসুন্দা লেকসিটির মুক্তমঞ্চের বেড়েছে অতিথি পাখির সংখ্যা। এখান থেকেই খাবার সংগ্রহ করা সহজ হচ্ছে এসব অতিথি পাখিদের। ডিম পাড়তেও এ কচুরিপানাকেই বেছে নিচ্ছে অথিতি পাখি।

বান্ধবীদের নিয়ে মুক্তমঞ্চে ঘুরতে আসা রূপা আক্তার জানান, শীতের সময় এ মুক্তমঞ্চে অনেক অতিথি পাখি আসে। তাদের দেখেতে এসেছি। তবে কচুরিপানার জন্য পাখি ভালোভাবে দেখতে পারছি না। অনেক পাখি বসে রয়েছে। উড়ার সময় পাখিগুলো দেখা যায়। আমাদের দাবি থাকবে এ মুক্তমঞ্চের কিছু অংশ পরিস্কার করে পাখিদের ডুব-সাঁতার দেখার সুযোগ করে দেয়া হউক।

পরিবেশবাদী অধ্যাপক মো. রেহাস উদ্দিন জানান, পরিযায়ী পাখিদের এ অভয়ারণ্য রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। গত বছর আমি নিজ উদ্যোগে মুক্তমঞ্চের কিছু অংশ পরিস্কার করেছিলাম। সেখানে পাখিরা ডুব-সাঁতার কাটতে পারতো। এবার আর সেই ব্যবস্থা নেই। দখল ও দূষণমুক্ত করে অতিথি পাখিদের জন্য নরসুন্দাকে নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তোলতে প্রশাসনে কাছে দবি জানাই।

গুরুদয়াল সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মোফাজ্জল হোসেন দাবি করেন অন্য বছরের তুলানায় অতিথি পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ কচুরিপানার কারণে অনেকেই বরশি ও জাল দিয়ে মাছ ধরতে আসতে পারতেছে না। তাই পাখিরাও ওই সমস্যা থেকে মুক্ত হয়ে কচুরিপানার থেকে খাবার গ্রহণ ও এখানেই ডিম পাড়তে পারছে। তবে মুক্তমঞ্চের কিছুটা অংশ পরিস্কার করলে অতিথি পাখিদের ডুব-সাঁতার কাটতে সুবিধা হবে। প্রকৃতিপ্রেমীরাও পাখিদের ডুব-সাঁতার কাটা দেখে উপভোগ করতে পারবে। অতিথি পাখিরা শুধু নরসুন্দার মুক্তমঞ্চের সৌন্দর্যই বাড়ায় না, বরং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলের জানান তিনি।

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, নরসুন্দা নিয়ে পরিকল্পনা ও সমীক্ষার কাজ চলমান রয়েছে। এ সমীক্ষার ভিত্তিতে খুব শিগগিরই প্রকল্প প্রস্তাবনা দাখিল করা হবে। আর ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নরসুন্দা নদীতে পানি প্রবাহ ফিরে আসবে। (বাসস)