অনুমতি দেওয়া হবে দেড় লাখ টন লবণ আমদানির

8bc4129306695a38ea3461b07882ea31-13কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ ও বাজারে লবণের সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য দেড় লাখ টন অপরিশোধিত লবণ আমদানির অনুমতি দিতে যাচ্ছে সরকার। ইতিমধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সুপারিশ করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আগামী সপ্তাহে অনুমোদন দিতে পারে বলে জানা গেছে।
বাণিজ্যসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, লবণের মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন আমদানি করলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। এ কারণেই আমদানির অনুমতি দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।
দেশে ভোজ্য লবণ আমদানি নিষিদ্ধ। তবে উৎপাদনে ঘাটতি হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানির অনুমতি দিয়ে থাকে। এ বছর দেশে চাহিদা অনুযায়ী লবণ উৎপাদিত হয়নি। বছরজুড়েই অপরিশোধিত লবণের দাম চড়া ছিল। ফলে খুচরা বাজারে ব্যাপকভাবে বেড়েছে লবণের দাম।
দেড় লাখ টন লবণে চাহিদা মিটবে না উল্লেখ করে ভোজ্য লবণ বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো বলছে, এখন চার লাখ টন লবণ আমদানি করা প্রয়োজন। নইলে বাজার স্বাভাবিক হবে না। এ ছাড়া তারা উৎপাদন ক্ষমতা অনুযায়ী আমদানির অনুমতি দেওয়ারও দাবি জানিয়েছে।
বাজারে এখন ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশন পদ্ধতিতে পরিশোধিত লবণ কেজিপ্রতি ৩৪-৩৫ টাকা, মেকানিক্যাল পদ্ধতিতে পরিশোধিত লবণ ৩০-৩২ টাকা ও সাধারণ লবণ ২০-২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক বছর আগের তুলনায় লবণের দাম এখন ২৮ শতাংশ বেশি।
২০১৬-২০ মেয়াদের জন্য তৈরি নতুন লবণনীতির চূড়ান্ত খসড়ায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে অপরিশোধিত লবণের চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ লাখ ৮ হাজার টন। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ লাখ ৬১ হাজার টন। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) হিসাবে, গেল মৌসুমে ১৫ লাখ ৫৫ হাজার টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ২ লাখ ৭৩ হাজার টন বেশি। তবে লক্ষ্যের চেয়ে কম। গত মৌসুমে ১৮ লাখ টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্য ঠিক করেছিল বিসিক।
পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো জানায়, এখন বাজারে প্রতি বস্তা (৭৫ কেজি) অপরিশোধিত লবণের দাম ৮০০ টাকার কাছাকাছি, যা সাধারণত ৪০০ টাকার নিচে থাকে। দাম এত বেশি হওয়ার জন্য চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়াকে দায়ী করছে কোম্পানিগুলো।
বিসিকের লবণ উৎপাদন ও চাহিদার হিসাব গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে পূবালী সল্টের মালিক পরিতোষ কান্তি সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ১৬ লাখ টন লবণ উৎপাদনের জন্য কমপক্ষে ২২ লাখ টন অপরিশোধিত লবণের দরকার। কারণ, লবণ উৎপাদনে গড়ে ৩০ শতাংশ ঘাটতি (প্রসেস লস) হয়। উল্লেখ্য, লবণনীতিতে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১০ শতাংশ।
বাংলাদেশে লবণ মূলত ভারত থেকে আমদানি হয়। আমদানিকারকেরা বলছেন, আমদানিতে ৯২ শতাংশ শুল্ক ও কর দেওয়ার পর কারখানায় ঢুকতে খরচ পড়ে কেজিপ্রতি প্রায় সাড়ে ৪ টাকা করে। দেশে অপরিশোধিত লবণের দর এখন কেজিপ্রতি ১১ টাকার কাছাকাছি।
গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। তখন দুই দিনেই ২ লাখ ৩৫ হাজার টন লবণের ঋণপত্র খুলে ফেলেন ৪৫ জন আমদানিকারক। এরপর সরকার নতুন কোনো ঋণপত্র খুলতে দেয়নি। পরে আমদানিকারকদের সমান হারে, অর্থাৎ ২ হাজার ২২২ টন করে লবণ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়।
কোম্পানিগুলো বলছে, এভাবে লবণ আমদানির অনুমতি দিলে বন্ধ মিলগুলো লবণ আমদানি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দেয়। বড় কোম্পানিগুলোকে সেই লবণ আবার বেশি দামে কিনে বাজারে ছাড়তে হয়।
এসিআই সল্টের ব্যবসায় পরিচালক কামরুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোন কোম্পানি কতটুকু আয়োডিন নিচ্ছে তার হিসাব বিসিকের কাছে আছে। আমরা চাই আয়োডিন ব্যবহারের অনুপাত অনুযায়ী কোম্পানিগুলোকে আমদানির অনুমতি দেওয়া হোক।’