অপপ্রচার-অপরাজনীতি সত্ত্বেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছি: মেয়র তাপস

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, অপপ্রচার-অপরাজনীতি সত্ত্বেও সকলের ঐকবদ্ধ প্রচেষ্টায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছি। আজ রাজধানীর নিউমার্কেট সংলগ্ন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্বতীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্রের (এসটিএস) উদ্বোধনকালে মেয়র এ কথা বলেন। মেয়র বলেন, ‘২০১৯ সালকে আমরা আমাদের সবচেয়ে খারাপ সময় হিসেবে বিবেচনা করি।

আমরা ২০১৯ সালকে বিবেচনায় রেখে কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছি, কাজ করছি। ফলে এ বছর অনেক অপপ্রচার, অপরাজনীতি, কূটকৌশল, বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহলের বিভিন্ন চক্র থাকা সত্ত্বেও আজ অবধি ১ হাজার ৫০ জন মশক কর্মী ও কাউন্সিলর, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, মশক শাখার কর্মকর্তাসহ সকলের নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে ২০১৯ সালের তুলনায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৯০ ভাগ না, ৭৫ ভাগ না, ৫০ ভাগ না, ২৫ ভাগও না, আমরা ১০ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি।’

ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ‘২০১৯ সালের পরিসংখ্যানে লক্ষ্য করা যায়, শুধু আগস্ট মাসেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫২ হাজারের ঊর্ধ্বে। সেপ্টেম্বর মাসে হয়েছিল ১৬ হাজারের ঊর্ধ্বে। জুলাই মাসে হয়েছিল ১৬ হাজারের ঊর্ধ্বে। সব মিলিয়ে তখন সরকারি হিসেব অনুযায়ী ১ লাখ ৫৫ হাজার বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে এ বছর সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ও আমাদের নিরলস পরিশ্রমের কারণে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা অবধি পরিশ্রমের কারণে আমরা ১৫ হাজারের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত রাখতে সক্ষম হয়েছি।’

নতুন যে কর্মপরিকাল্পনার আলোকে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে তা বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে যথার্থ প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমিয়েছি। আমরা ঘরে ঘরে গিয়েছি। ২৭ হাজারের মত আবাসিক ভবন স্থাপনা পরিদর্শন করেছি। যেখানে-যেখানে উৎসস্থল পেয়েছি, যেখানে-যেখানে আধার পেয়েছি এবং যখন যা তথ্য পেয়েছি সাথে সাথে আমাদের জনবল সেখানে গিয়ে আধার বিনষ্ট করেছে। উৎসস্থল বিনষ্ট করা এবং পর্যাপ্ত কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে লার্ভা ধ্বংস করেছি বলেই আমরা এই সফলতা অর্জন করতে পেরেছি।’

বিগত ৫ দিনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৪০ এর নিচে রয়েছে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রাথমিকভাবে যে তথ্য পাওয়া যায় সেটা অনেক বড় মনে হয়। কিন্তু আমরা এটা যখন যাচাই-বাচাই করি, তখন দেখা যায় এই সংখ্যা আরও কম। গত ৫ দিনের পরিসংখ্যানে সামগ্রিকভাবে দক্ষিণ সিটিতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১৮ ভাগের নিচে চলে এসেছে। আর সেপ্টেম্বর মাসে এই হার ৩০ ভাগের কম। ফলে ডেঙ্গু এখন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।’

নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন ঢাকা শহরই সারাবিশ্বের একমাত্র শহর যেখানে উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য পড়ে থাকে। দায়িত্ব নেওয়ার পরেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আমুল পরিবর্তন করার লক্ষ্যে আমরা কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। গত বছর মে পর্যন্ত দীর্ঘ ৪৫ বছরে মাত্র ২০টি বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র ছিল। আমরা এরই মাঝে আরও ১২টি নির্মাণ সম্পন্ন করেছি।

আজকে নিউমার্কেটে ১৮নং ওয়ার্ডে আমরা বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্রের উদ্বোধন করলাম। এর মাধ্যমে এখন ৭৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৬টি ওয়ার্ডে আমাদের বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।’

এই কার্যক্রম চলমান থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আশাবাদী এ বছরের মধ্যে ঢাকা শহরের ৭৫টি ওয়ার্ডেই আমরা বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র স্থাপন করবো। এটা অত্যন্ত দূরুহ কাজ। কারণ জমির সংকুলন হয় না এবং বিভিন্ন বাঁধা আসে। তারপরও এ কার্যক্রম আমরা সফলতার সাথে সম্পন্ন করে চলেছি। এর মধ্যে আমরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করছি। অচিরেই ঢাকা শহরকে আধুনিক শহরে রূপান্তরিত হবে।’

পরে মেয়র ২৯ নম্বর ওয়ার্ডস্থিত ইসলামবাগ ইদগাহ মাঠ, ইসলামবাগ কলোনি মসজিদ, ২১ নম্বর ওয়ার্ডস্থিত বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের গলি, কাপ্তানবাজারের মুরগী পট্টি, ধুপখোলা মাঠের উন্নয়ন কাজ এবং শ্যামপুর সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি ধুপখোলা মাঠে একটি শিউলি গাছ রোপণ করেন।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর সিতওয়াত নাঈম, প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউর রহমান, সচিব আকরামুজ্জামান, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের ও মুন্সি মো. আবুল হাশেম, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডসমূহের কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন। তথ‌্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান