সুবক্তা হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির এই নেতা সোমবার সকালে ঢাকার পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ৯৫ বছর বয়সী জসিম মণ্ডল বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। গত ২৮ সেপ্টেম্বর পাবনার ঈশ্বরদীতে নিজ বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনা হয়েছিল।
রেল শ্রমিক থেকে কমিউনিস্ট আন্দোলনে যুক্ত হওয়া জসীম মণ্ডল ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি- সিপিবির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হয়েছিলেন। ২০১২ সাল থেকে আমৃত্যু দলটির উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন তিনি।জসিম মণ্ডল বাংলাদেশ রেল শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহসভাপতি ছিলেন। ছিলেন বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রেরও উপদেষ্টা।বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, জসীম মণ্ডলের মরদেহ এখন বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় পল্টনে সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তার মরদেহ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নেওয়া হবে।
সিপিবি কার্যালয় থেকে শোক শোভাযাত্রা করে সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হবে কমিউনিস্ট নেতার মরদেহ। দুপুর সাড়ে ১২টার পর জানাজার জন্য লাশ নিয়ে যাওয়া হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে। মঙ্গলবারই গ্রামের বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদীতে নিয়ে যাওয়া হবে জসীম মণ্ডলের মরদেহ। বুধবার তাকে সমাহিত করা হবে বলে প্রিন্স জানান। জসিম মণ্ডলের মৃত্যুতে সিপিবির শোক বার্তায় বলা হয়, “তার মৃত্যুতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের এক সূর্য অস্তমিত হল।”
জসিম মণ্ডলের মৃত্যুতে মঙ্গলবার সারাদেশে শোক দিবস পালন করবে সিপিবি। এদিন পার্টির দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং নেতা-কর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবেন।এই নেতার মৃত্যুতে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, ক্ষেতমজুর সমিতি, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠন শোক প্রকাশ করেছে। সিপিবি বলেছে, “আজীবন বিপ্লবী কমরেড জসিম উদ্দিন মণ্ডল তরুণদের স্বপ্নের নায়ক। তিনি হাজার হাজার তরুণকে কমিউনিস্ট আদর্শ ও আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেছেন। সহজ-সরল-সাবলীল অথচ অনলবর্ষী বক্তৃতায় তিনি সহজেই জনতাকে আকৃষ্ট করতেন।”
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা জসিম উদ্দিন মণ্ডলের জন্ম ১৯২২ সালে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায়। ছেলেবেলাতেই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। ১৯৪০ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন স্বশিক্ষিত জসীম মণ্ডল। দেশভাগের পর পাবনার ঈশ্বরদীতে চলে আসে তার পরিবার। সেখানে রেল শ্রমিকদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। রেল শ্রমিক ইউনিয়নে যুক্ত হওয়ার সুবাদে ভারতের কমিউনিস্ট নেতা জ্যোতি বসুর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ ঘটেছিল জসীম মণ্ডলের। ১৯৪৯ সালে রেলের রেশনে চালের পরিবর্তে খুদ সরবরাহ করলে রেল শ্রমিক ইউনিয়নের ‘খুদ স্টাইকের’ অপরাধে জসিম মণ্ডলসহ ছয় নেতার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে এবং চাকরিচ্যুত করে রেল কর্তৃপক্ষ।
এরপর ১৯৫৪ সালে মুক্তি পাওয়ার কিছুদিন পর আবার নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয় জসিম মণ্ডলকে। এসময় রাজশাহী জেলে কিছুদিন থাকার পর তাকে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে বদলি করা হল। ১৯৫৬ সালে তিনি মুক্তি লাভ করেন। ১৯৬২ সালের দিকে আবার গ্রেপ্তার হন এবং ১৯৬৪ সালে মুক্তি পান। একাত্তরে ভারতে থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভূমিকা রাখেন জসিম মণ্ডল। স্বাধীন বাংলাদেশেও জসিম মণ্ডল মোট ১৭ বছর কারাভোগ করেন।
আজকের বাজার: সালি / ০২ অক্টোবর ২০১৭