অবশেষে ব্রেক্সিট চুক্তিতে পৌঁছল ইইউ ও যুক্তরাজ্য

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ত্যাগের শর্ত বিষয়ে অবশেষে একটি ঐতিহাসিক চুক্তিতে পৌঁছতে সক্ষম হলো ব্রিটেন। এ চুক্তির ফলে এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা প্রতীক্ষা, সমালোচনা, বিতর্ক, মতবিরোধ ও অনিশ্চয়তা কাটল। এর আগে ব্রেক্সিট চুক্তির বিষয়বস্তুতে সম্মতি জানানোর জন্য ব্রিটেনকে বেঁধে দেয়া ৪৮ ঘণ্টার শুক্রবারই ছিল শেষ দিন।
এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ৪০ লাখ ইইউ নাগরিকের বিশেষ অধিকার রক্ষা নিশ্চিত হলো । এছাড়া ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার থেকে ৬ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের বিচ্ছেদ বিল নিষ্পত্তির মাধ্যমে, আগামী বছর দুপক্ষের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনার পথ সুগম হলো।
১৫ পৃষ্ঠার একটি ‘প্রগ্রেস রিপোর্টে’ স্বাক্ষরের জন্য ব্রাসেলসে মিলিত হন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিসা মে এবং ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) প্রেসিডেন্ট জঁ-ক্লদ ইয়ুংকার। এ অগ্রগতির ফলে জোট আলোচকরা ব্রেক্সিট-পরবর্তী সম্পর্কের ওপর দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরুর সুপারিশ করতে পারবেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইসি প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, এটি একটি কঠিন সমঝোতা ছিল, তবে উভয় পক্ষই আপসের মনোভাব দেখিয়েছে।
ব্রাসেলসে আলোচনা শুরুর কিছুক্ষণ পরই ইয়ুংকারের চিফ অব স্টাফ মার্টিন সেলমায়ার চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার নিদর্শন হিসেবে একটি চিমনি থেকে সাদা ধোঁয়া বের হওয়ার ছবি টুইট করেন।
এদিকে ব্রাসেলস ও ওয়েস্টমিনস্টারের মধ্যে এক সপ্তাহ ধরে চরম নাটকীয়তার পর ব্রেক্সিট চুক্তির অন্যতম চ্যালেঞ্জ উত্তর আয়ারল্যান্ড সীমান্ত বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে সোমবার টেরিসা মের পার্লামেন্টারি মিত্র উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি) সীমান্ত নিয়ে আপসের বিরোধিতা করে। ডিইউপির নেতা আর্লিন ফস্টার স্কাই নিউজকে বলেন, চুক্তির শর্তাবলির ক্ষেত্রে তিনি একটি ‘উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন’ নিশ্চিত করতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, আইরিশ সাগরের তীরে কোনো ‘রেড লাইন’ টানা হয়নি। এবং একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে নিশ্চিত, সমগ্র যুক্তরাজ্যই ইউরোপীয় ইউনিয়ন, একক বাজার ও কাস্টমস ইউনিয়ন ত্যাগ করছে।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে টেরিসা মে বলেন, চুক্তির মাধ্যমে ইইউর প্রতি ব্রিটেনের আর্থিক বাধ্যবাধকতাকে সম্মান জানানো হবে। একই সঙ্গে চুক্তিটি যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী ইইউ নাগরিকদের আগের মতোই জীবনযাপন করার নিশ্চয়তা দেবে।
চুক্তি নিষ্পত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বিতর্কিত বিচ্ছেদ শর্ত চূড়ান্ত করা নিয়ে তিন সপ্তাহ ধরে চলমান কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সমাপ্তি ঘটল। ফলে সমঝোতার দ্বিতীয় ধাপ শুরু করার ক্ষেত্রে চুক্তিটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নির্দেশ করছে কিনা ইইউ নেতারা সে বিষয়ে আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
কয়েক সপ্তাহ ধরেই ব্রেক্সিট চুক্তির বিষয়বস্তুতে ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ নিয়ে ইইউ ও ব্রিটেনের মধ্যে নাটকীয়তা চলছিল। ব্রেক্সিট চুক্তি চূড়ান্ত করার বিষয়ে প্রথম থেকেই তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে এসেছে ইইউ। জোট জানায়, ১৫ ডিসেম্বর বাণিজ্য ও রূপান্তরকালীন বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করতে হলে ব্রিটেনকে আয়ারল্যান্ড সীমান্ত, জোট ত্যাগের আর্থিক বিল ও ব্রিটেনে বসবাসকারী ইইউ নাগরিকদের অধিকার— এ তিন প্রধান বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সম্পন্ন করতে হবে। অবশেষে শুক্রবার এ নাটকীয়তার অবসান ঘটল।
উত্তর আয়ারল্যান্ড সীমান্ত প্রসঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, চুক্তিতে উত্তর আয়ারল্যান্ডের বিষয়টি সুরাহার জন্য চলতি সপ্তাহের আলোচনা জরুরি ছিল। চুক্তিতে যুক্তরাজ্যের ‘সাংবিধানিক ও অর্থনৈতিক ঐক্য’ সংরক্ষণ ও একটি কঠোর সীমান্ত এড়ানো গেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ চুক্তির ফলে উভয় পক্ষই এখন যুক্তরাজ্য ও ইইউর মধ্যকার কাঙ্ক্ষিত বাণিজ্য সম্পর্ক নির্ধারণের কাজ করবে। এদিকে চুক্তিটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগ পরিপূর্ণভাবে নিষ্পত্তি করতে এখনো বহু কিছু সমঝোতা করার বাকি রয়েছে বলে জোর দিয়েছেন ইসি প্রেসিডেন্ট ইয়ুংকার। তিনি বলেন, আমাদের এখনো বহু কাজ করার বাকি রয়েছে। যৌথ প্রতিবেদনটিকে ‘প্রত্যাহার চুক্তি’ বলতে নারাজ তিনি।

সূত্র: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

আজকের বাজার: এসএস/সালি, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭