অবৈধ আমদানি বন্ধ না হলে মোবাইল ফোন শিল্প বাধাগ্রস্ত হবে

মোবাইল ফোনের সেক্টরটা প্রথম থেকেই গ্রোয়িং ইন্ডাস্ট্রি ছিল। বিগত ৪ বছর আগে গড়ে প্রায় ১০ শতাংশ গ্রোথ ছিল টোটাল ইন্ডাস্ট্রিতে। তার মধ্যে স্মার্ট ফোনের গ্রোথ ছিল বেশি। যার প্রায় ৫০ শতাংশের মত গ্রোথ দেখাগেছে। কিন্তু নিকটবর্তী সময়ে সেটা দেখা যাচ্ছে না। গত বছর জানুয়ারিতে যে ব্যবসা ছিল সেটা এবছর জানুয়ারি থেকে জুনে দেখা যাচ্ছে না। আগের তুলনায় এখন স্মার্টফোনের গ্রোথ অনেক কম। স্মার্ট ফোনের যে গ্রোথ আমরা আশা করেছিলাম সেটা হচ্ছে না। বাংলাদেশে স্মার্ট ফোনের ক্ষেত্র ৩০শতাংশের নিচে।

গত বছর বাংলাদেশে মোবাইল ফোন আমদানি হয়েছে প্রায় ৮মিলিয়নের মত। এবছর সেটা হাফ ইয়ারলি হিসেবে দেখা গেছে হয়ত ৭মিলিয়নও অতিক্রম করবে না। গত বছরের তুলনায় কোয়ার্টারলি হিসাব করলে দেখা যায় ১০ শতাংশের চেয়ে কম এবছরের স্মার্ট ফোনের গ্রোথ। সবকিছু মিলিয়ে যদি হিসাব করি, তাহলে মনে হয় বাংলাদেশে এবছর মোবাইল ফোনের বাজারে বিশেষ করে স্মার্ট ফোনের বাজারের পরিসর ছোট হবে। আগের বছরের তুলনায় এবছর স্মার্ট ফোন বিক্রি কম হয়েছে।

স্মার্ট ফোন বিক্রি কম হওয়ার পিছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। আমরা বিভিন্নভাবে বাজার পর্যালোচনা করে দেখেছি যে অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা থাকলে মানুষের স্মার্ট ফোনের চাহিদা বেশি থাকে। কারণ স্মার্ট ফোন একটু বিলাসবহুল বা বিলাসী পণ্য, তাই হয়তো গ্রোথ একটু কম। দ্বতীয়ত, বাংলাদেশের প্রায় ১০কোটি মানুষের হাতে মোবাইল ফোন রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩কোটি স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারী রয়েছে।

পরবর্তীতে যারা স্মার্ট ফোন কিনবে তাদের হাতে হয়তো সে পরিমান অর্থ নেই। কারণ একটা স্মার্ট ফোন কিনতে প্রায় ৪থেকে সাড়ে ৫হাজার টাকার প্রয়োজন হয়। এখন বাজার পর্যালোচনা করে দেখছি প্রায় ৭০ শতাংশ কাস্টমার এখন ফিচার ফোন কিনছে। যার মুল্য ১হাজার ২শত থেকে ১হাজার ৫শত টাকার মধ্যে। যার কারণে তাদের স্মার্ট ফোনে যেতে হলে বাজেট ৪ থেকে ৫ গুন বাড়াতে হবে। তাই র্স্মাট ফোনের গ্রোথ বাড়ছে না।

বাংলাদেশে স্মার্ট ফোনের ব্যবসার গ্রোথ না হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ অবৈধভাবে স্মার্ট ফোন আমদানি। আর এটা হচ্ছে ট্যাক্স অতি মাত্রায় বৃদ্বির কারণে। কারণ আগে তেমন ট্যাক্স ছিলই না। এখন একটা মোবাইল ফোন আমদানি করতে প্রায় ৩১শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয়। ফলে অবৈধভাবে আমদানি করলে ৩১শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয় না। তাই প্রায় ৩০শতাংশ আমদানি হয় অবৈধভাবে। সবকিছু মিলিয়ে এই খাত এখন বেশ চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে গেছে।

আমি মনে করি, বাংলাদেশে মোবাইল ফোন এসেম্বেলিং সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কারণ বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের বাজার প্রায় ১০হাজার কোটি টাকার। ফলে প্রতি বছর এই ১০হাজার কোটি টাকা কিন্তু এলসি খুলতে ডলারে চলে যায়। সেখান থেকে সরকার অনেক ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। চার পাচটা কোম্পানি এই সুযোগের আওতায় কারখানা শুরু করেছে। এটা খুবই বড় ধরণের উদ্যোগ।

এই খাতকে এগিয়ে নিতে হলে মোবাইল শিল্পকে প্রাধান্য দিতে হবে। মোবাইল শিল্পের সম্ভাবনাকে বাচিয়ে রাখতে হবে। অবৈধ আমদানি বন্ধ করতে হবে। এই শিল্প বাচাতে পারলে দেশে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে এবং বিদেশের বাজারও বাংলাদেশের দখলে চলে আসবে। আমরা মোবাইল রপ্তানি করতে পারবো। এই শিল্পকে বাচাতে সব ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। মোবাইলের আইএমই নম্বর অনুযায়ী নেটওয়ার্ক কানেকশন দেওয়া উচিত। সেই অনুযায়ী হলে অবৈধ মোবাইল ফোন আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে। বাচবে দেশিয় মোবাইল ফোনের বাজার।

রেজওয়ানুল হক
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ট্রান্সান বাংলাদেশ লিমিটেড
সাবেক জেনারেল সেক্রেটারি, বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স এসোসিয়েশন