ভারতের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের ওপরে তৈরী একটি তথ্যচিত্রে আবারও কাঁচি চালানোর নির্দেশ দিয়েছে সেন্সর বোর্ড।
২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গার পরে অধ্যাপক সেনের দেওয়া একটি ভাষণ থেকেই ‘গুজরাত’ শব্দটি বাদ দিতে বলা হয়েছে।
এর আগেও ওই তথ্যচিত্রে অধ্যাপক সেনের নিজের দেওয়া বক্তব্য থেকে ‘গরু’, ‘হিন্দু’ এবং ‘হিন্দুত্ব’ – এরকম বেশ কয়েকটি শব্দ নিয়ে নিয়ে আপত্তি তোলা হয়েছিল।
পুনর্মূল্যায়নের পরে বাকি শব্দগুলি ছাড় পেলেও গুজরাত শব্দটি নিয়ে আবারও আপত্তি তুলেছে তারা।
অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের বিখ্যাত বই ‘দা আর্গুমেন্টেটিভ ইন্ডিয়ান’ নামেই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের ওপরে একটি তথ্যচিত্র তৈরী করেছিলেন সুমন ঘোষ।
ওই তথ্যচিত্রের একটা অংশে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কর্ণেল ইউনিভার্সিটিতে দেওয়া অমর্ত সেনের একটি ভাষণ। ২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গার পরেই তিনি ওই ভাষণ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেন্সর বোর্ড বলছে তার ভাষণ থেকে গুজরাত শব্দটাই বাদ দেওয়া হোক।
তথ্যচিত্রটির পরিচালক সুমন ঘোষ বলছিলেন, “রিভিউয়ের পরে অন্য শব্দগুলো নিয়ে আর আপত্তি করে নি বোর্ড, কিন্তু তারা অধ্যাপক সেনের ভাষণ থেকে গুজরাত শব্দটি বাদ দিতে বলেছে। ২০০২ সালে গুজরাতে যে দাঙ্গা হয়েছিল, তার ক্রিমিন্যালিটির দিক নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি গুজরাত শব্দটা ব্যবহার করেছিলেন। সেটাই বাদ দিতে বলছে বোর্ড।”
‘দা আগুমেন্টেটিভ ইন্ডিয়ান’ ছবিটি নিয়ে বিতর্ক এই প্রথম নয়। এর আগে যখন ঘোষিতভাবেই বিজেপি পন্থী এক চলচ্চিত্রশিল্পী পহলাজ নিহালনী বোর্ডের প্রধান ছিলেন, সেই সময়ে তথ্যচিত্রটি থেকে আরও কিছু শব্দ বাদ দিতে বলা হয়েছিল।
গুজরাত দাঙ্গার পরেই সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরী করেছিলেন চলচ্চিত্রকার সৌমিত্র দস্তিদার। তিনি বলছিলেন, “শুধু অমর্ত্য সেন বা গুজরাত শব্দ তো নয়, যারা এখন রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন, তারা ইতিহাসের যেখানে যা পাচ্ছেন, সেটাই নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী ব্যাখ্যা খাড়া করছেন। সারা পৃথিবী জানে ২০০২ সালে গুজরাতে দাঙ্গা হয়েছিল, আর সেই সময়ে ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। তাই এটাতে আমি মোটেই বিস্মিত নই যে ওই প্রসঙ্গটা ছবি থেকে বাদ দিতে বলা হবে।”
সেন্সর ছাড়পত্র পাওয়া যাবে না গুজরাত দাঙ্গার মতো বিষয় নিয়ে ছবি তৈরী করলে, এটা ধরে নিয়ে আজকাল অনেকেই আর সেন্সর ছাড়পত্র পাওয়ার চেষ্টাও করছেন না। মি. দস্তিদার জানাচ্ছিলেন, অনলাইনেই ছবিগুলি রিলিজ করে দেওয়া হচ্ছে।
সুমন ঘোষ শনিবারই তার কর্মক্ষেত্র যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাচ্ছেন। অধ্যাপক সেনের সঙ্গে আলোচনা করেই তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন যে সেন্সর বোর্ডের আদেশমতো গুজরাত শব্দটি বাদ দেওয়া উচিত হবে কী না, তা নিয়ে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
আজকের বাজার: এসএস/ ৭ জানুয়ারি ২০১৮