অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমেই পুঁজিবাজার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাবে

শেয়ারবাজারের এই দুরবস্থার কারণ:
বাজারের এই দুরবস্থা অল্প কোন সময়ের ইস্যু না। এটা অনেক বছরের একটা প্রতিফলন। অনেক সময় ধরে শেয়ারবাজার নিয়ে অনাস্থা। বাজারে বিভিন্ন সময়ে আমাদের সিকিউরিটিজ একচেঞ্জ কমিশনসহ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে অনেক কাজ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু বাজারে বিনিয়োগকারীদের কোন আস্থা আনতে পারেনি। অনাস্থার পেছনে দুটো কারণ। প্রথম কারণ এই বাজারটা কোন ম্যাচিউরড বাজার না। আপনি লক্ষ্য করেন এই বাজারের সাইজ এত ছোট। আপনি ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার বাজার দেখেন এদের তুলনায় আমরা কোন বাজারের মধ্যেই পড়ি না। কিন্তু আমাদের বাজারে স্টেকহোল্ডারদের সংখ্যা অনেক বেশি। ভারতের এত বড় বাজারে ব্রোকারেজ হাউজের সংখ্যা অনেক কম। আমাদের ব্রোকারেজ হাউজের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে, কিন্তু ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলের সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। আমরা বাজারকে চাহিদা এবং সরবরাহের দিক থেকে বড় না করতে পারার কারণে। বাজার অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। এই অসম্পূর্ণ বাজারকে যে কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে পারে।

দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে আমরা বাজারের সুশাসন নিশ্চিত করতে পারিনি। এটা বাজারের প্রত্যেকটা স্টেকহোল্ডারের ব্যর্থতা। আমি বিভিন্ন সময় বলেছি। সেনসিটিভ ইনফর্মেশন পাবলিস্ট এর মাধ্যমে বাজারকে ম্যানুপুলেট করা হয়েছে। বাজারে বিভিন্ন এনলিস্টেড কোম্পানিগুলো তাদের ইনফরমেশনে মেনুপুলেশনের মাধ্যমে বাজারকে ম্যানুপুলেট করা হয়েছে। সর্বোপরি এই বাজারটাকে একটা সম্পূর্ণ বাজার করার জন্য যে সমস্ত ইনগ্রেডিয়েন্ট দরকার ছিল। সেগুলো এখানে নাই।

এই যে দেখুন ৯টা ব্যাংকের পেইডআপ ক্যাপিটাল ঘাটতি। ৯ টা ব্যাংক কত বছর ডেভিডেন্ড দিয়ে গেছে। কাদের টাকা থেকে এই ডেভিডেন্ড তারা দিয়েছে। এখন এই গুড গভরনেসগুলো যখন ইন্ট্রোডিউস হচ্ছে, ইকোনমিক রিফর্ম এর মাধ্যমে। যেমন এখন একটা ফ্যাসিস্ট সরকার থেকে নতুন সরকার পদার্পণের পরে গণতান্ত্রিক পরিবেশে আমরা এখন একটা ট্রানজিশন পয়েন্টে আছি। এই ট্রানজিশন পয়েন্টে যখন আসলো যখন ট্রু এট ফেয়ার ইনফরমেশন যখন আপনি দেখছেন, দেখেন কিছুই নেই। সব খেয়ে ফেলেছে।

বিগত সরকার পরোক্ষভাবে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনার পরিবর্তে পুঁজিবাজারে লোকজনকে বিনিয়োগ করতে অনুৎসাহিত করেছে। কারণ হলো পুঁজিবাজারে টাকা যদি আসে তাহলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্টের জন্য কাজ করবে। কিন্তু ব্যাংকে যদি টাকা থাকে, ঋণের নামে ব্যাংক থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচারের জন্য সুবিধা হয়। দেশটা যখন পুরো একটা সিন্ডিকেটের ভিতরে ঢুকে গেছে, তখন কোন সিস্টেম কাজ করে না।

আমাদের থেকে অনেক ছোট দেশ, কম জনসংখ্যার দেশ, কম রিসোর্সের দেশগুলো অনেক ভালো আছে। কারণ তাদের সিস্টেম ডেভেলপ করেছে। সেখানে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগ কারীদের গ্রহণযোগ্যতা, আস্থা আছে। আমাদের সূচক ছয় সাত হাজার ছিল। পার্শ্ববর্তী দেশের সূচক আমাদের চেয়ে কম ছিল। আজ ইন্ডিয়ার সূচক প্রায় এক লক্ষ। পাকিস্তানের সূচক ৯৭ হাজারের উপরে। শ্রীলংকার ২০২২- ২৩ সালে তাদের দুরবস্থা কাটিয়ে এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। তাদের পুঁজিবাজার কিভাবে ইউ টার্ন নিয়েছে। আমাদের পুঁজিবাজার শুধু আস্থা হীনতার কারণে, রেগুলেটরের সঠিকভাবে নার্সিং না করার কারণে, আমাদের গুড গভর্নেন্স ইন্ট্রোডিউস না করার কারণে, আমরা আজ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করার জন্য মার্কেটে নিয়ে আসতে পারছিনা। যে বিনিয়োগকারীরা বাজারের সাথে দীর্ঘদিন সম্পৃক্ত ছিল। খেয়ে না খেয়ে এই বাজারকে ভালোবেসে পুঁজি ফেরতের আশায় অপেক্ষা করতে করতে সর্বশেষ পুঁজিটাও হারিয়ে ফেলেছে। এমন কেন হল ? আমাদের অর্থনীতি কোনভাবে নার্সিং হয়নি। আমাদের অর্থনীতি ছিল অ্যাডোব বেসিসে। ডলারের ক্রাইসিস হয়েছে সেটা কোনোভাবে সমাধান করেছে। লোকাল কারেন্সি ক্রাইসিস টাকা ছাপানোর মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করা হয়েছে। যেটা প্রচুর মুদ্রাস্ফীতির সহায়তা করেছে। ফলে ভোগ্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমার দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। তারপর ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে টাকাগুলো নন ব্যাংকিং চ্যানেলে চলে গেছে। এমন অবস্থা হয়েছে বৈধ অর্থনীতি থেকে অবৈধ অর্থনীতি বড় হয়ে গেছে। যেটাকে ব্ল্যাক ইকোনোমি বলা হয়। যার কারনে পুঁজিবাজার, মুদ্রা বাজার কোনটাই ঠিক রাখতে পারছে না।

যেকোনো দেশকে টিকে থাকতে হলে ঋণ বেইস অর্থনীতি থেকে যদি রোবাস্ট মূলধন নির্ভর অর্থনীতিতে আসতে হয়, ক্যাপিটাল মার্কেটের কোন বিকল্প নাই। যে দেশের মূলধনী বাজার বা ক্যাপিটাল যত ভালো, যত টেকসই, সে দেশের অর্থনীতি তত মজবুত। কারণ ঋণ নির্ভর অর্থনীতি কোন টেকসই অর্থনীতি হতে পারে না। একটা ভোগ্য পণ্য ফ্যাক্টরি করতে গেলে ১৬ থেকে ১৮% লোন ইন্টারেস্ট দিয়ে কিভাবে সে পণ্য বিক্রি করবে। যার কারণে পন্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। জ্বালানির দাম বাড়ছে। ফলে সবকিছু মুদ্রাস্ফীতিতে সহায়তা করছে। সবকিছু মিলে আইন-শৃঙ্খলা গত ১৫ বছর আমরা গণতন্ত্রের বাইরে ছিলাম। সরকারের কোন জবাবদিহিতা ছিল না। যে যেভাবে পেরেছে লুটপাট, ক্যাসিনোর মাধ্যমে ম্যাক্রো ইকোনমির একটা বিশাল অংশ মুদ্রা বাজার ও পুঁজিবাজার ট্রানজিশন থেকে মাইক্রো হয়ে গেছে। ক্যাসিনো হয়ে গেছে। পুঁজিবাজার ২০-৫০ জন মার্কেট মেকার বা গেম্লার তাদের হাতে সীমাবদ্ধ ছিল। এই দেশে ন্যূনতম দুই থেকে আড়াই কোটি বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করার ক্ষমতা রাখে। আমরা তাদের সেই কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছি না। সেই আস্থা দিতে পারছি না। ফলে আমাদের পুঁজিবাজার দীর্ঘদিন মন্দার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। অনাস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

এর কারণ হলো, কোন ভাল কোম্পানি গত ১০ বছরে বাজারে এনলিস্টেড হয়নি। এটা না হওয়ার পিছনে কারা কাজ করেছে। সেগুলো নিয়ে কোন তদন্ত হয়নি। সুশাসন শুধু ব্রোকারেজ হাউজে করার চেষ্টা করেছে। সুশাসন লিস্টেড কোম্পানিগুলোকে করার দরকার ছিল। যাদেরকে তারা লিস্টেড করেছে তাদের সুশাসন করা দরকার ছিল। সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন সহ ডিএসইতে ও সুশাসনের দরকার ছিল। কেউ জবাবদিহিতার বাইরে না।

বাজার ভালো হবে কিভাবে? ভীষণ যেকোনো কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমার দেশের ভীষণ থাকতে হবে। আমার দেশ আগামী পাঁচ বছরে কোথায় থাকবে, আমার ভীষণের সাথে আমার অর্থনীতি যোগ থাকবে। অর্থ মন্ত্রণালয় বলে দিবে আগামী পাঁচ বছর পর অর্থনীতির অবস্থার স্তর কোথায় যাবে। অর্থনীতির আরেকটি অংশ হলো পুঁজিবাজার। আগামী পাঁচ বছর পুঁজিবাজারের কর্তা ব্যক্তিরা নির্ধারণ করবে ১০ মিলিয়ন নতুন বিনিয়োগকারী ইনভেস্ট করবে।

রাশেদ মাকসুদ সাহেব নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন উনি আগ্রহ প্রকাশ করেন, নতুন কমপক্ষে ৫০ লক্ষ বিনিয়োগকারী সৃষ্টি করব। এটা ওনার ভিশন। ভীষণ থাকতে হবে পুঁজিবাজার জিডিপির কত পারসেন্ট হবে। এই ভীষণের উপর বেইজ করে আমি যখন দেখব, আমার রেগুলেটরের ভীষণ এই লেভেলে, তখন ব্রোকারেজগুলোর ভিশন ঠিক করতে পারব। আমি আমার ব্রোকারেজ হাউস থেকে নতুন পাঁচ থেকে দশ লাখ বিনিয়োগকারী আনবো। আমি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আমার সার্ভিস পৌঁছে দেব। অর্থনীতিকে বড় করার পিছনে আমার কোম্পানির ভূমিকা থাকবে।

উত্তরণের উপায়: বাজারে সুশাসনের কোন বিকল্প নেই। সুশাসন সর্বস্তরে নিশ্চিত করতে হবে। লেভেলপ্লেইং ফিল্ড করতে হবে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ব্রোকারেজ হাউজ ছিল। সেখানে স্পেশাল ট্রিটমেন্ট ছিল। কাস্টমার বলতো ওই সমস্ত ব্রোকারেজ হাউজে কমপ্লায়েন্সের কোন বালাই নাই, আপনি কেন এত কমপ্লায়েন্স চাচ্ছেন। ওই সমস্ত জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

আমি বিশ্বাস করি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে যে নতুন সরকার গড়েছে। এই সরকারের ইকোনমিক রিফর্মের যে কাজগুলো করছে, তার বিশাল অংশ হচ্ছে পুঁজিবাজার। পুঁজিবাজারে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। ফোকাস টিম গঠন করা হচ্ছে। একজন সৎ লোক পুঁজিবাজারে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন। উনি চেষ্টা করছেন কিন্তু মানুষের আস্থা এখনো আনতে পারেনি। এজন্য কিছু দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। পুঁজিবাজার অতীতের পুঁজিবাজার থেকে ভিন্ন হবে। অতীতের কর্তা ব্যক্তিরা কিভাবে পরিচালনা করেছে। বর্তমানের কিভাবে পরিচালনা করবে। এই পার্থক্যগুলো তুলে ধরতে হবে। যে সমস্ত পদক্ষেপগুলো সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জসহ অর্থ মন্ত্রণালয় নিয়েছে, আমি বিশ্বাস করি, এই রিফর্মেশনের কাজগুলো সম্পূর্ণ হলে পুঁজিবাজার একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগের স্থান হবে। বাংলাদেশ পুঁজিবাজারের মাধ্যমে অর্থনীতি মূল জায়গায় দাঁড়াবে।

আশার কথা হল, আমাদের প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সাবেক সচিব সালাউদ্দিন স্যার সৎ মানুষ। দেশপ্রেমিক মানুষ। উনি দেশের অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। আমি বিশ্বাস করি এখন ভালো কিছু হবে। যার জন্য দরকার গুড গভর্নেন্স ইন্ট্রোডিউস করা। পাশাপাশি ভালো ভালো কোম্পানিগুলো ক্যাপিটাল মার্কেটে এনলিস্টেড করা। আগে ক্যাপিটাল মার্কেটে এনলিস্টেড হওয়ার জন্য কোম্পানিগুলো দৌড়াতো। এখন শুনছি বিএসইসি, ডিএসই একসাথে কোম্পানীগুলোকে আমন্ত্রণ করছে। আপনারা আসেন আপনাদের সহজ শর্তে ক্যাপিটাল মার্কেটে এনলিস্টের সুযোগ করে দেব।

একটা ভালো কোম্পানি এনলিস্টের মাধ্যমে প্রচুর বিনিয়োগকারী সৃষ্টি হতে পারে। অর্থনীতির ভাষায় বলে, ভালো সরবরাহ প্রচুর চাহিদা সৃষ্টি করে। গ্রামীণফোন লিস্টের কারণে প্রায় এক মিলিয়ন নতুন গ্রাহক সৃষ্টি হয়েছিল। আমাদের দেশে অনেক ভালো সিমেন্টের ফ্যাক্টরি, রিয়েল এস্টেট ইন্ডাস্ট্রি আছে, তাদের সাথে কথা বলতে হবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চিটাগাং এক্সচেঞ্জ এবং এসএসি’র সমন্বয়ে একটি সেল থাকতে হবে, ভালো কোম্পানিকে মার্কেটে নিয়ে আসার জন্য। সরকারের বড় বড় প্রজেক্টগুলোকে মার্কেটে নিয়ে আসতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী বাজার কে স্থিতিশীলতা আনার জন্য একটি স্ট্যাবলিজেশন ফান্ড ৩ হাজার কোটি টাকা বলছে সেটা ১০ হাজার কোটি টাকা করা উচিৎ। এক একটি ব্যাংক থেকে যদি লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচার হতে পারে, তাহলে আমার দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি পুঁজিবাজারের জন্য কেন ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে পারব না। আমি বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে অনুরোধ করবো, পুঁজিবাজার রক্ষার্থে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকার স্ট্যাবলিজেশন ফান্ড ক্রিয়েট হোক। পুঁজিবাজারের আয়তন বড় করার স্বার্থে আমাদের দেশে কর্মরত বিদেশীদের বিও একাউন্ট করার কোন সুযোগ নাই। সেখানে অনেক লিমিটেশন আছে। একটার বেশি সিঙ্গেল একাউন্ট করতে পারবে না। সেখানে তাদের স্যালারি ছাড়া অন্য কোন লেনদেন হবে না। এই লিমিটেশন থেকে বের হতে পারলে, সেখান থেকে আমরা প্রচুর বিনিয়োগ পাব। পাশাপাশি সহজ সর্তে কিভাবে বিদেশে কর্মরত প্রবাসীদেরকে বিও অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে পারি, তাদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করি। তখনই দেশে রেমিটেন্সের প্রবাহ বেড়ে যাবে। পুঁজিবাজারও টেকসই হবে, বড় হবে, আস্থাও ফিরে আসবে। পুঁজিবাজার অর্থনীতির আয়না হবে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে অর্থনীতির ড্রাইভিং সিটে বসে যাবে পুঁজিবাজার।

বিনিয়োগকারীদের প্রতি পরামর্শ: বিনিয়োগকারীদের প্রতি আমার পরামর্শ হলো, আপনি নিজে সুশিক্ষিত হন। জানার চেষ্টা করেন। আপনি যখন একটি মুদি দোকান দেন, সেখানে অনেক সময় দেন। আপনি বাজার করেন বিক্রি করেন। প্রাইজের পার্থক্য করেন। চেষ্টা করেন সব সময় ক্রয়ে লাভ করার জন্য। এখন আপনি ডিসকাউন্টেও সেল করতে পারবেন। পুঁজিবাজারেও একই রকম। অতি মূল্যায়িত দামে কোন শেয়ার কিনবেন না। দেখে শুনে বুঝে কিনেন। বাজারের ফান্ডামেন্টাল দেখেন। কোম্পানির ব্যাকগ্রাউন্ড দেখেন। জুয়াড়ি কোম্পানি দেখবেন না। যারা আপনাকে ডুবিয়ে দিতে পারে নিজেদের স্বার্থের জন্য। এসব বিষয়গুলো বাছাই করুন। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী সহ যারা হতাশার মধ্যে আছে ধৈর্য ধরেন।

নতুন বিনিয়োগকারীদের বলবো আস্তে আস্তে বিনিয়োগে আসেন। সময় নিয়ে আসেন। এ মার্কেটে বর্তমান কমিশন দায়িত্বগুলো পালন করছেন। যে রিফরমেশনের কাজগুলো করছে, টাস্কফোর্সৈ যারা আছেন, তারা যথেষ্ট স্বনামধন্য, শিক্ষিত, সৎ হিসেবে তাদের পরিচিতি আছে। তারা ভালো কিছু করবে এদেশের পুঁজিবাজারের জন্য। বাজারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিনিয়োগ শিক্ষা বিনিয়োগকারীদের জন্য।
ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য, আমাদের সেই ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলের কাজ পালন করতে পারতো মিউচুয়াল ফান্ড। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা মিউচুয়াল ফান্ডের উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। সে জন্য আপনি সরাসরি বিনিয়োগকারীদের জেলায় জেলায় বিনিয়োগ শিক্ষা আয়োজন করতে পারেন। আমাদের মত ব্রোকারেজ হাউস গুলো গবেষণামূলক কাজ করে। কখন ইন্টারেস্ট রেট কোথায় যাবে। আমরা ইকোনমিক রিসার্চ নিয়ে কাজ করি। প্রতিটা কোম্পানির রিসার্চ সেল থাকা উচিৎ। প্রতিটা ব্রোকারেজ হাউজের বিনিয়োগ শিক্ষা সেল থাকা উচিত। বিনিয়োগকারীদের সুশিক্ষিত করে তাদের ছেড়ে দিন, তারা স্বাধীনভাবে কাজ করুক। তারা সেলফ ডিসিশন মেকার হতে পারবে। তাহলে মার্কেট স্থিতিশীল থাকবে। মার্কেটে গতানুগতিক মেনুপুলেশন গত ১৫ বছর হয়ে আসছে, সেগুলো হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।

ক্যাল সিকিউরিটিজের পরিকল্পনা: ক্যাল বাংলাদেশ, ক্যাল সিকিউরিটিজ আমরা কয়েকটি প্রোডাক্টটি নিয়ে কাজ করি। মার্চেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে কাজ করি। ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করি। আমরা ব্রোকারেজ সার্ভিস দিয়ে থাকি। আমাদের সার্ভিস গতানুগতিক অন্যান্য ব্রোকারেজ হাউজের চেয়ে ভিন্ন। আমাদের বিনিয়োগকারীর জন্য রেগুলার নলেজ শেয়ারিং সেশন করে থাকি। একিজিস্টিং বিনিয়োগকারীদের জন্য, পাশাপাশি প্রোটেনশিয়াল বিনিয়োগকারীদের জন্য। আমরা বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিগুলোতে ক্যাম্পেইন করে থাকি। বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পেইন করি। বিনিয়োগ পরিকল্পনা কিভাবে করতে হবে ছাত্রদের। সঞ্চয় কিভাবে ক্রিয়েট করতে হবে। আপনি যদি কমপ্লিট ব্রোকারেজ হাউজ চিন্তা করেন, আমাদের তিনটা উইংস। আমরা টেকনোলজি বেজ কোম্পানি। আমরা ওএমএস ইন্ট্রোডিউস করেছি। আমাদের প্রধান হাতিয়ার হল বিনিয়োগ শিক্ষা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে পৌঁছে দেয়া। বড় বিনিয়োগকারীদের জন্য আমাদের রিসার্চ সেল আছে। অনেক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি আমাদের থেকে এই সার্ভিস নিচ্ছে।

সিকিউরিটি একচেঞ্জ কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান মহোদয় উনার কাঙ্খিত লক্ষ্যের কথা বলেছেন ৪-৫ বছরে ৫০ লক্ষ বিনিয়োগকারী হবে। আমরা এই ভিশনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে চাই। ক্যাল সিকিউরিটিজ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিনিয়োগ শিক্ষা পৌঁছে দেবে। বিনিয়োগকারীদের সেবা পৌঁছে দেবে। আমাদের নিজস্ব ওএমএসের মাধ্যমে সেবাটা সর্বস্তরের পৌঁছে দিতে চাই। সরকার এবং রেগুলেটর যদি সম্মতি দেয়, ভবিষ্যতে আমরা দেশের বাইরেও প্রবাসে এই সার্ভিস পৌঁছে দেয়ার কাজ করব। আমরা আমাদের বিনিয়োগকারীদের সব সময় উৎসাহ দিয়ে থাকি, আপনারা যে বিনিয়োগ করেছেন বুঝে শুনে বিনিয়োগ করেন। আমাকে টার্নওভার দেয়ার জন্য ঘন ঘন বাইসেল করার দরকার নেই। আপনি জেনে বুঝে এমন শেয়ারে বাই সেল করেন ধৈর্য ধরে। এক সময় আপনি প্রফিট পাবেন। অথবা আপনি যদি মনে করেন সেই শেয়ারের ইনফরমেশন আছে, আপনি এখানে স্টপ লস নেন। আমাদের কাছে বিনিয়োগকারীরা চাইলে ইকোনমি সেশন, লিটারেসি প্রোগ্রাম করব। আমাদের স্পেশাল টিম আছে। কারণ আমরা ব্যয়বহুল কোম্পানি। বিনিয়োগ শিক্ষার প্রসারের জন্য বিনিয়োগ গবেষণার জন্য আমাদের প্রচুর খরচ করতে হয়। আমরা বাংলাদেশের ইকোনমি নিয়ে খুব আশাবাদী। বাংলাদেশ এ অবস্থায় থাকবে না। ইকোনমিক রিফর্মের মাধ্যমে পুঁজিবাজার এবং টোটাল অর্থনীতি একটা নিজস্ব গতি ফিরে পাবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে আশা করি দেশ একটি কাঙ্ক্ষিত স্থিতিশীলতার দিকে যাবে। সর্বোপরি গণতন্ত্রের দিকে যাবে। আগামী পাঁচ বছরে পৃথিবীতে একটি দেশের মডেল হতে পারবে।

এস এম নাসির উদ্দিন
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
ক্যাল সিকিউরিটিজ লিমিটেড