অর্থ পাচার রোধে কঠোর হচ্ছে এনবিআর

বিদেশে অর্থপাচার রোধে কঠোর হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরই ধারাবাহিকতায় অর্থপাচার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে প্রণীত ট্রান্সফার প্রাইসিং বা মূল্য স্থানান্তর আইন বাস্তবায়নে ইতিমধ্যেই বিশেষ সেল গঠন করেছে সংস্থাটি। আন্তর্জাতিক লেনদেন খতিয়ে দেখতে এক হাজারটি বিদেশী প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করেছে এনবিআরের ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এনবিআরের ৯ম বোর্ড সভায় ট্রান্সফার প্রাইসিং সেলের কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলের সেলের পক্ষ থেকে সভায় উল্লেখিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এই তালিকায় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, বিদেশি কোম্পানির ব্রাঞ্চ অফিস ও লিয়াজোঁ অফিস ইত্যাদি রয়েছে বলে বোর্ড সভা সূত্রে জানা গেছে।

সভা সূত্র জানায়, এ বিষয়ে শিগগিরই একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। সভায় কাস্টমস ও ভ্যাট এবং গবেষণা ও পরিসংখ্যান অনুবিভাগের কর্মকর্তা দ্বিতীয় সচিব (মূসক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কুটনৈতিক অব্যাহতি) মো. তারেক হাসান, উপপরিচালক মো.সানোয়ার কবিরকে ফোকাল পয়েন্ট করে ট্রান্সফার প্রাইসিং সেলে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়াও প্রতিটি বাজেট বাস্তবায়ন সভায় এবং বোর্ড সভায় এই বিষয়ে আপগ্রেড বা হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এনবিআরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এনবিআরের মাঠ পর্যায়ে অফিস থেকে নেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এনবিআরের ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল (টিপিসি) এসব প্রতিষ্ঠানের আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করা আন্তর্জাতিক লেনদেনের তথ্য এবং প্রকৃত লেনদেনের যাচাই-বাছাই শুর করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে বহুজাতিক কোম্পানির রাজস্ব ফাঁকি ও অর্থ পাচার ঠেকাতে ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল গঠনের প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী। এরই ধারাবহিকতায় আয়কর অধ্যাদেশ নতুন ধারা সংযোজন এবং এনবিআরে স্বতন্ত্র সেল গঠন করা হয়।

জানা গেছে, যেসব প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক লেনদেন ৩ কোটি টাকার বেশি তাদের নজরদারিতে রেখেছে ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল। এজন্য আয়কর অধ্যাদেশেও সংশোধনী আনা হয়েছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে সংশ্লিষ্ট তথ্য, দলিলাদি সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়াও বিদেশের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার ধরনসহ যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে। ওই প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত দাম দিয়েই পণ্য আমদানি করেছে কিনা, তা বছর শেষে যাচাই-বাছাই করবে এনবিআর। আয়কর অধ্যাদেশের ‘৭৫এ’ ধারা এবং ধারা-১০৭-এর ‘ইই’ উপধারার আওতায় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক লেনদেনের সব তথ্য এনবিআরকে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। কোম্পানিগুলোকে তাদের লেনদেনের ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসন সেবা, বিক্রয় ও বিপণন সেবা, গবেষণা উন্নয়ন, সফটওয়্যার, আইসিটি, টেকনিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং, কমিশন, লজিসটিকস, সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সুদ, সম্পদ বিক্রি, লিজ পেমেন্টস, বীমা, গ্যারান্টি, ঋণ, বিনিয়োগসহ যাবতীয় তথ্য এনবিআরকে সরবরাহ করতে হবে।
এ বিষয়ে এনবিআরের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে এনবিআরের সবচেয়ে চৌকস কর্মকর্তারা কাজ করছেন।

আজকরে বাজার:এসএস(সাজু)/এলকে ৫ ডিসেম্বর ২০১৭