নীতিমালা অনুমোদন:বৈধতা পেল উবার-পাঠাও

অ্যাপে চলবে অ্যাম্বুলেন্স-অটোরিকশা

রাজধানীতে অ্যাপভিত্তিক গাড়ি ভাড়ার সেবা প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল থেকে বাড়িয়ে মাইক্রোবাস, অটোরিকশা ও অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত নিয়ে যেতে চায় সরকার।

সেই সঙ্গে গাড়ির সর্বোচ্চ ভাড়াও নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমানে রাজধানীতে ট্যাক্সিক্যাবের যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ভাড়া নিতে পারবে না কেউ। তবে কম ভাড়া নেয়া যাবে।

অবশ্য অ্যাপভিত্তিক সেবা দেয় যেসব প্রতিষ্ঠান, সেগুলোতে ভাড়া ট্যাক্সিক্যাবের চেয়ে অনেক কম ভাড়ায় সেবা দেয়। যেমন রাজধানীতে চলা উবারের ভাড়া প্রতি কিলোমিটার ১৮ থেকে ২১ টাকা। কিন্তু ক্যাবে এই ভাড়া ৩৫ টাকা।

অ্যাপভিত্তিক গাড়িভাড়া সেবাকে বৈধতা দিতে রাইডিং শেয়ার নীতিমালা নামে একটি খসড়া অনুমোদন হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে।

দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে নিশ্চিত করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম। তিনি জানান, অ্যাপভিত্তিক সেবাকে কিছু শর্ত মেনে গাড়ি চালাতে হবে।

এমনিতে ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়ায় চালানোর নিয়ম নেই। তবে অ্যাপভিত্তিক সেবার ক্ষেত্রে এই শর্ত শিথিল করা হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রেও শর্ত আরোপ করা হয়েছে। কেউ একটির বেশি গাড়ি নামাতে পারবে না বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে।

আবার যাত্রী পরিবহন করা যানবাহনকেও ফি দিতে হবে। প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, অটোরিকশার জন্য বছরে এক হাজার টাকা এবং মোটরসাইকেলে ৫০০ টাকা দিতে হবে।

আবার রাজস্ব আদায় হবে কোম্পানির থেকেও। যারা এই সেবা দিতে চায়, তাদেরকে বিআরটিএ থেকে এক লাখ টাকা দিয়ে লাইসেন্স নিতে হবে, প্রতি বছরে নবায়ন করতে হবে ১০ হাজার টাকায়।

এর বাইরে কোম্পানির টিআইএন বা ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নম্বর ও ভ্যাট আইডেনটিফিকেশন নম্বর থাকতে হবে, নির্ধারিত অফিস থাকতে হবে, চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেস হালনাগাদ থাকতে হবে।

সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের অধীনে ঢাকায় কমপক্ষে ১০০টি, চট্টগ্রামে ৫০টি ও অন্য এলাকায় ২০টি গাড়ি রাখার বাধ্যবাধকতাও আরোপ করা হচ্ছে।

এর বাইরে যেখোনে সেখানে যাত্রী উঠানামা করা যাবে না বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এসব শর্ত অমান্য হলে লাইসেন্স বাতিলের পাশাপাশি মোটরযান আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, চালকের ছবি, নাম, মোটরযানের রেজিস্ট্রেশনের নম্বরসহ মোটরযানের অবস্থান যাত্রী সুস্পষ্টভাবে তার মোবাইল ফোনে দেখতে পাবেন। বর্তমানে যাত্রীরা শুধু চালকের ফোন নম্বর, নাম ও গাড়ির নম্বর দেখতে পারেন। চালকের ছবি দেখার সুযোগ নেই।

অ্যাপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সম্পর্কে খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, যাত্রীর ভ্রমণের শুরু থেকে সমাপ্তি, ভ্রমণের মোট সময় ও দূরত্ব, মোট ভাড়ার পরিমাণ কমপক্ষে তিন মাস সংরক্ষণ করতে হবে। যাত্রীর অভিযোগ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং বিআরটিএকে জানানোর ব্যবস্থা থাকছে নীতিমালায়।

রাজধানীতে সিএনজি অটোরিকশার নৈরাজ্যের মধ্যে প্রাইভেট কার বা মোটর সাইকেল ভাড়ায় কিছু অ্যাপভিত্তিক সেবা চালু হয়েছে। এতে অটোরিকশার নৈরাজ্য অনেকটাই কমে এসেছে। তবে পরিবহন আইনে অ্যাপের বিষয়টি উল্লেখ নেই। আবার ব্যক্তিগত যানবাহন ভাড়ায় চালানোর কোনো নিয়ম নেই। ফলে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে গণপরিবহন সংকট নিরসনে মোবাইল ফোনে অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবাকে বৈধতা দেয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অ্যাপের মাধ্যমে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহনের সুবিধা চালু করে ‘স্যাম’। ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর ঢাকায় একই প্রক্রিয়ায় গাড়ি ভাড়া দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ‘উবার’।

এই উদ্যোগ শুরুতেই জনপ্রিয়তা পেলেও সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল, অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ি ভাড়া বৈধ নয়। এসব সেবা বন্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পরে নগরবাসীর তীব্র সমালোচনার মুখে পিছু হটে বিআরটিএ। আর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ‘উবারের’ মতো সেবাগুলোকে বৈধতা দেয়ার ঘোষণা দেন।

গত বছরের জুনে এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত অক্টোবরে এর প্রথম খসড়া তৈরি হয়। সরকারের ১৭টি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মতামত সমন্বয় করে তা গত ১৪ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়।

বিশেষ করে উবার আর পাঠাওয়ের ধাক্কায় অটোরিকশা চালকরা বেকায়দায় পড়েছেন। যাত্রীর ইচ্ছামফিক গন্তব্যে যাওয়ার পাশাফাশি ভাড়া নিয়ে বাদানুবাদ না হওয়ায় অ্যাপভিত্তিক সেবাকেই বেছে নিচ্ছে নগরবাসীর একটি বড় অংশ। আর এ কারণে অটোরিকশার চাহিদা কমেছে অনেকাংশেই। আর এর ফলে অটো চালকরা ভাড়া নিয়ে আগের মতো বাদানুবাদে জড়াতে পারছেন না।

অটোরিকশাও ভাড়া চলবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে মালিক পক্ষ থেকে। আর এই নীতিমালার জন্য অপেক্ষা করার কথা জানিয়েছিলেন তারা। নীতিমালা অনুযায়ী অটোরিকশাকে এই সেবায় আনতে হলে সেবাদাতাদেরকে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। আর সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বেশি তারা আদায় করতে পারবে না, পাশাপাশি ইচ্ছামত গন্তব্যে যেতেও তারা বাধ্য থাকবে।

ঢাকায় অটোরিকশায় প্রতি কিলোমিটারে ১২ টাকা নির্ধারিত থাকলেও অটো চালকরা চুক্তিতে যেতেই আগ্রহী।

বর্তমানে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় গ্রাহককে। ভাড়া সুনির্দিষ্ট না থাকায় ইচ্ছামতো টাকা আদায় করা হয় রোগী বা তার স্বজনদের কাছ থেকে।

এই যানবাহনগুলো অ্যাপে চললে রোগীরা যেসব সহজে অ্যাম্বুলেন্স পাবে, তেমনি তারা কম টাকায় চলাচল করতে পারবে বলেও আশা করছে সরকার।

একইভাবে পরিবার পরিজনদেরকে নিয়ে চলাচলের ক্ষেত্রে সামর্থবানদের মাইক্রোবাস ভাড়ার চল আছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও ভাড়া নির্দিষ্ট ছিল না এতদিন। এ ক্ষেত্রেও শৃঙ্খলা আসবে বলে আশা করছে সরকার।

আজকের বাজার: সালি / ১৫ জানুয়ারী ২০১৭