বর্তমান যুগে সম্ভাবনাময় একটি খাত আইসিটি খাত যা বিশ্বের দ্বারে বাংলাদেশকে নতুন ভাবে তুলে ধরেছে। সরকারসহ পুরো দেশ আজ আইসিটি খাত নিয়ে অনেক আশাবাদী। আইসিটি নিয়ে সরকারের সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের দ্বিতীয় রপ্তানি খাত হতে পারে এটি। তরুণদের সম্পৃক্ততায় আইসিটি জায়গা করে নিতে পারে বিশ্ব বাজারেও। দৈনিক আজকের বাজার ও এবিটিভির রিপোর্টার অন্তরা নাজনীনের সঙ্গে আলাপকালে আইসিটি খাতের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো: মজিবর রহমান স্বপন। আলোচনার মূল অংশ তারই ভাষায় প্রকাশ করা হলো।
আইসিটি খাতের সার্বিক অবস্থা
বর্তমান সরকারের বিরাট সাফল্যের একটি হচ্ছে আইসিটি খাত। আইসিটি খাতের সার্বিক অবস্থা আগের থেকে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। সরকার এই খাতে সু-দৃষ্টি দেওয়ার ফলে এই খাতের সম্ভাবনাময় আরো অনেক দিক বেরিয়ে এসেছে। বর্তমান প্রজন্ম আইটি নির্ভর হয়ে উঠছে ফলে এই খাতে কাজের সুযোগ যেমন সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি রপ্তানির নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে। সব মিলিয়ে ভালো। বর্তমানে আমরা বিভিন্ন তথ্য হাতের নাগালে পাচ্ছি, বিভিন্ন দুর্যোগের খবর আমরা তাৎক্ষণিকভাবে পৌঁছে দিতে পারছি যার পুরোটাই আইটি প্রযুক্তির অবদান।
আইসিটি খাতের চ্যালেঞ্জ
আইটি খাতের বড় সমস্যা হলো দক্ষ জনশক্তির অভাব। আমাদের এই খাতে বিশ্বে পর্যাপ্ত বাজার রয়েছে কিন্তৃু সে তুলনায় দক্ষ জনশক্তি নেই। যদিও এখন ব্যাঙের ছাতার মতো অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যা পুরোটাই সার্টিফিকেট কেন্দ্রিক যেখানে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা পাওয়া য়ায় না।
চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপায়
সরকারি ভ্যাটের মাত্রা কমিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে এ সেক্টরের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলেও তার সুফল থেকে আমাদের দেশ বঞ্চিত। কারণ, অনেকে আইটি থেকে পড়াশোনা করে দেশের বাইরে পারি দিচ্ছেন। ফলে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি তরুণ মেধার দক্ষতা সম্পন্ন কাজ থেকে। এছাড়াও, আইটি কোম্পানিগুলো তাদেরকে উপযুক্ত বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদি প্রদান করতে অনেকটাই ব্যর্থ। এক্ষেত্রে আমি বলবো দেশের আইসিটি খাতের উন্নয়নে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য তরুণদের সম্পৃক্ত করাই আমাদের প্রধান কাজ।
বাজেটে প্রত্যাশা
ব্যবসায়ীদের অনেক প্রত্যাশা থাকে বাজেটকে ঘিরে। আইসিটি খাতে আরো বড় সমস্যা হলো ১৫% ভ্যাট যা বাজার বৈষম্যের আরেকটি কারণ। আমরা প্রতিটি পণ্যে লাভ করে থাকি ৩ থেকে ৪% এবং সরকার এই খাতে সরকার ভ্যাট আরোপ করেছে ১৫%। ফলে বিদেশি বাজারের সাথে আমাদের বৈষম্য বাড়ছে দিন দিন। আপনি একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল, ভুটানের আইসিটি খাতে সরকারি ভ্যাটের হার অনেক কম। তাই আমি আশাবাদি এই বাজেটে আইটি খাতে ভ্যাট এর হার সহনীয় মাত্রায় রাখবে।
কম্পিউটার সরঞ্জামের মূল্য সহনীয় পর্যায় নিতে করণীয়
বাংলাদেশে কম্পিউটারের সরঞ্জামের বাজার যথেষ্ট সহনশীল রয়েছে। বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে কম দামে কম্পিউটার পাওয়া যায়। আমাদের দেশে একজন কৃষক বা ছোট ব্যাবসায়ী টাকা জমিয়ে তার সন্তানকে একটি কম্পিউটার কিনে দিতে পারছে। এটা সম্ভব হয়েছে কম্পিউটার সরঞ্জামের মূল্য সহনীয় হবার ফলে।
আমাদের দেশে কম্পিউটার হার্ডওয়ার ইন্ডাষ্ট্রি না হওয়ার কারণ
হার্ডয়ার ইন্ডাষ্ট্রি গড়ে না উঠার একটি কারণ হচ্ছে বিদেশি ক্রেতা ও বিনিয়োগকারি সংকট। আন্তর্জাতিক পণ্যে বিশ^ যেভাবে ছেয়ে আছে তার মধ্যে কম্পিউটার হার্ডওয়ারের বাজার নেই বললেই চলে। আমাদের দেশে অন্যতম একটি ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ^বিদ্যালয় বুয়েট। যেখান থেকে প্রতিনিয়ত কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বের হচ্ছে । তবে তাদের মধ্যে কেউই উদ্যোক্তা নয়। তাদের অনেকেই বুয়েট থেকে পাশ করে ভালো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কেউ বা বিদেশে ভালো ফার্মে চাকরি করে। ফলে এই খাতে আমাদের দক্ষ জনশক্তি থাকার পরেও আমরা হার্ডওয়ার ইন্ডাষ্ট্রি গড়ে তুলতে পারছি না।
পক্ষান্তরে আমাদের দেশে কম্পিউটারের সফটওয়ার ইন্ডাষ্ট্রি তৈরি হয়েছে। যার ফলে আমাদের ফ্রিল্যান্সাররা সফটওয়ারের কাজ পাচ্ছে বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে। তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে তারা সফ্টওয়ার তৈরির নানা কৌশল শিখতে পেরেছে বলেই কিন্তু তারা সফ্টওয়ার ফার্ম দিয়ে ব্যবসা করছে।
তরুণদের জন্য পরামর্শ
আমি বিগত ২২ বছর যাবৎ আইটি সেক্টরের সঙ্গে জরিত রয়েছি। আমার অভিজ্ঞতা থেকে সকল তরুণদেরকে বলব বৃত্তিমূলক শিক্ষার পাশাপাশি কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। কম্পিউটারকে গেইমস খেলার মাধ্যম ও আইটিকে বিনোদনের বা সময় পার করার মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা না করে এই খাত সম্পর্কে শিক্ষা অর্জন করা উচিত। এটি মেধাভিত্তিক দক্ষতা প্রমাণ করার একটি জায়গা। যার মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এই খাতে তরুণদের এগিয়ে আসা উচিৎ। গ্রাফিক্স এর বিভিন্ন খাতে নিজেকে প্রমাণ করেও এদেশকে তরুণরা অনেক কিছু এনে দিতে পারে।
মো: মজিবর রহমান স্বপন
সাবেক সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি
আজকের বাজার: এএস/ আরআর/ ৩০ মে ২০১৭