আগামী অর্থবছরে জিডিপির টার্গেট ৮ দশমিক ২ শতাংশ

আগামী ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) আট দশমিক দুই শতাংশ। আর চলতি বছর শেষে প্রবৃদ্ধি হবে আট দশমিক ১৩ শতাংশ বলে আশা করা হচ্ছে এবং প্রতিবছর এক শতাংশ মানুষকে করের আওতায় আনতে ট্যাক্স জিডিপি রেশিও এক শতাংশ হারে বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার।

বর্তমানে দেশের ১১ শতাংশ মানুষ আয়কর দেয়। আর সামগ্রিকভাবে ১৪ শতাংশ মানুষ সরকারকে নানাভাবে রাজস্ব দেয়। এই সংখ্যাটা কমপক্ষে ২০ শতাংশ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে সরকার। এজন্য আগামী পাঁচ বছরের একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

২৪ এপ্রিল, বুধবার বাজেটের সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি ও আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রার বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবীরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, মূল্যস্ফীতি সাড়ে পাঁচ শতাংশে আটকে রাখার চেষ্টা থাকবে আগামী বাজেটে। এবারের বাজেটের মোট আকার হতে পারে পাঁচ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ধরা হতে পারে তিন লাখ ৭২ হাজার কোটি টাকা। জোর দেওয়া হবে গ্রামীণ অঞ্চলের উন্নয়নকে। সেই সঙ্গে চলমান মেগা প্রকল্পগুলোকেও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

প্রাক্কলিত এ বাজেট সর্বকালের সর্ববৃহৎ। প্রাক্কলিত রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রাক্কলিত আয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বর্হিভূত আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকা। কর ব্যতীত রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩৮ হাজার কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, প্রথমবারের মতো বাজেট দিতে যাওয়া অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের এটি প্রথম কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের প্রথম বৈঠক। অর্থমন্ত্রী চলতি অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব খাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

গত সাত মাসে এনবিআরের প্রবৃদ্ধির হার সাত দশমিক এক শতাংশ, যা গত বছর ছিল ১৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি যোগ করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরে এনবিআরের প্রকৃত প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক। যা বাজেটের আয়ের উপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে। এতে ঘাটতির পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যেতে পারে।

বৈঠক সূত্র জানায়, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ, এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি, প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রভাব, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য, সামগ্রিক বাজেট বাস্তবায়ন ও আগামী বাজেটের প্রাক্কলন বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগ কিভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়ে জোর দেন অর্থমন্ত্রী।

এক্ষেত্রে বিভিন্ন কারখানায় রোবটিক ব্যবহারে রোবটের আবিস্কারের বিষয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশুনার বিষয় খোলা যায় কিনা- সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এতে আধুনিক পৃথিবীর সঙ্গে তাল মেলানো সহজ হবে বলে মনে করে সরকার। এছাড়া সামগ্রিকভাবে শিক্ষাখাতের গুণগত মান বৃদ্ধির উপরও গুরুত্বারোপ করেন অর্থমন্ত্রী।

বৈঠকে আলোচনা করা হয়, আগামী বাজেটের সামগ্রিক ঘাটতি জিডিপির পাঁচ শতাংশের মধ্যেই থাকবে। এতে ব্যাংক খাত থেকে সরকার ঋণ নেবে তুলনামূলক কম। যা বেসরকারি বিনিয়োগে গতির সঞ্চার করবে। চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ সময়মতো শেষ করতে পারলে কর্মসংস্থান বাড়বে, যা জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।