আজ থেকে পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ মাছ আহরণ নিষিদ্ধ

ইলিশ মাছের নিরাপদ বংশ বিস্তার ঘটাতে ১৪ অক্টাবর থেকে ৪ নভম্বর পর্যন্ত ২২ দিন চাঁদপুরের পদ্মা – মেঘনায় বন্ধ থাকবে ইলিশ ধরা । এ নিষধাজ্ঞা চাঁদপুরর পদ্মা-মেঘনা নদীর মতলব উত্তর উপজলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজলার চরভৈরবী পর্যন্ত প্রায় ৯০ কিলামিটার এলাকায় চলবে। এ সময় ইলিশ আহরণ, বিপণন, মওজুদ, ক্রয়-বিক্রয় ও সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী ।

চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউট নদী কেন্দ্রের ইলিশ গবেষক ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুর রহমান জানান, প্রতিবছর আশ্বিন মাসের ভরা পূর্ণিমার আগে পরে ইলিশের ডিম ছাড়ার আসল সময়। এ সময় সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ নদীতে ছুটে আসে নিরাপদে ডিম ছাড়তে। এ সময়টাকে বিবেচনায় নিয়ে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দেশের ৫ টি অভয়আশ্রমে ২২ দিন ইলিশ মাছসহ সকল মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার।

এদিক মৎস্য সংরক্ষণ আইনে এ ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার আইন ভঙ্গ করলে আইনভঙ্গকারীর কমপক্ষে ১ থেকে ২ বছর সস্ত্রম কারাদন্ড অথবা সর্বাচ্চো ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দন্ড দেওয়া হবে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্র জানা গেছে, জেলার ৪ উপজলায় ৫১ হাজার ১৯০ জন জেলের পরিবার ইলিশ আহরণ এর উপর নির্ভর কর চলে। নিষধাজ্ঞার সময় এ বছর সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার জেলেকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে ২০ কজি করে চাল ১৪ অক্টাবরের মধ্যে দেয়া হবে। এছাড়াও এসব জেলে পরিবারগুলার বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য ইতিমধ্যে সেলাই মশিন ও ছাগল, ভ্যানগাড়ি বিতরণ করা হয়েছে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলায় মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ।

চাঁদপুর শহর পুরানবাজার রনগায়াল এলাকার জেলে দুলাল দাস জানান, আমরা সরকারর আইনর প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যার কারণে আজ থেকেই নৌকা ও জাল ডাঙায় উঠিয়ে রেখেছি।

একই রকম বক্তব্য দিলেন জেলে হাসান গাজী, অজয় দাস ও আরমান মিয়া, তারা বলেন, এবছর এমনিতেই চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় আশানুরূপ বড় সাইজর ইলিশ পাওয়া যায়নি ছোট সা ইজের যা ইলিশ পাওয়া গেছে তা দিয়ে আমাদের খরচ উঠেনি। এখন উজান থেকে আসা ইলিশ আসলেও নিষেধাজ্ঞার কারণে আহরণ থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে এ সময়ের জন্য আমাদের ২০ কেজি চাল খাদ্য সহায়তা হিসেবে দেয়া হয়, তাতে আমাদের খুবই কষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে হয়।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকি জানান, সরকারের দেয়া নির্ধারিত সময় ও নির্দেশনা মত আমরা ইলিশ প্রজনন রক্ষা শতভাগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জেলা ও উপজেলা টাংস্ফোর্সের সভা করেছি। এ বছর মা ইলিশ রক্ষায় জনপ্রতিনিধিসহ আমাদের পাশাপাশি, স্কুল- কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদর ইমাম ও সাংবাদিকরাও জেলেদের সচেতন করার লক্ষ্যে কাজ করবেন। এছাড়াও জেলার ৪ উপজলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৮ টি টিম দিন-রাত পালা করে কাজ করছে আজ থেকে । জেলেদেরকে কোনভাবেই নদীত নামতে দেয়া হবেনা। প্রয়োজনে র‌্যাবের সহযোগিতা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

এ প্রসঙ্গ চাঁদপুরর জলা প্রশাসক (ডিসি) মা. মাজদুর রহমান খান বলেন, আশা করছি মা ইলিশ রক্ষায় নদীর তীরবর্তী এলাকায় চেয়ারম্যান মেম্বারসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আন্তরিক ভাবে সহযোগিতা করবেন। আর জেলেদের প্রতি আহব্বান, এ নিষেধাজ্ঞার সময় মা ইলিশ রক্ষা করলে জেলেরাই বেশি করে নদীত ইলিশ মাছ ধরতে পারবে। এ মাছ জেলেদেরই সম্পদ। আজ সকাল পর্যন্ত চাঁদপুর জেলার নদী এলাকায় কোন জেলে নদীতে নামার কোন তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি বলে ও জানান তিনি।