ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সদ্যপ্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের মরদেহ গ্রহণ করতে গিয়ে অঝোরে কাঁদলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আগের দিন কেঁদেছিলেন ঢাকার অপর অংশের মেয়র সাঈদ খোকন।
শনিবার ২ ডিসেম্বর দুপুরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনিসুল হকের মরদেহ পৌঁছে। এ সময় সেখানে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন ওবায়দুল কাদেরও।
আনিসুল হকের মরদেহ যখন বিমানবন্দর থেকে বের করা হয় তখন সেখানে যারা উপস্থিত ছিলেন সবাই আবেক আপ্লুত হয়ে পড়েন। এসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন ওবায়দুল কাদের। সেখানে আনিসুল হকের ভাই সেনা প্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকও ছিলেন।
পরে আনিসুল হকের বনানীর ২৩ নম্বরের বাসার সামনে এসে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানান সড়ক মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আনিসুল হকের স্বপ্ন ছিল আধুনিক সিটি হিসেবে ঢাকাকে গড়ে তোলার। তার চলে যাওয়ায় দেশের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। আমি ব্যক্তিগতভাবেও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেলাম।’
‘মানুষকে তিনি (আনিসুল) ভালোবাসতেন। মানুষও তাকে যে ভালোবাসে তার প্রমাণ এই যে তার বাসার সামনে সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতি।’
কাদের বলেন, ‘একজন মানুষ কত জনপ্রিয় হলে মানুষের ভিড় এমনভাবে উপচে পড়ে, আজকে আমরা তা দেখলাম। তিনি সবাইকে কান্নার নদীতে ভাসিয়ে চলে গেলেন। এ শূন্যতা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। এমন বহুমূখী প্রতিভার অধিকারী মানুষ কমই দেখেছি।’
আনিসুল হকের বাসার সামনে অগুণতি সাধারণ মানুষ ছাড়াও ছিলেন ব্যবসায়িক নেতারা, প্রয়াত মেয়রের কর্মজীবনের সহযোদ্ধারা এবং তার নিজ প্রতিষ্ঠান মোহাম্মাদী গ্রুপের কর্মীরাও।
ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, আনিসুলের অকালে চলে যাওয়ায় যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা সহজে পূরণ হবে না। তার প্রয়াণে কেবল রাজধানী নয়, ক্ষতি হয়েছে গোটা দেশেরই।
মোহাম্মাদী গ্রুপের কর্মচারীরা বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে তারা কখনও বঞ্চনার শিকার হননি। অভিভাবককে হারিয়ে তারা শোকাহত।
নাম না জানা একজন যুবক ঢাকা উত্তরকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে প্রয়াত মেয়র যেসব কাজ করেছেন সেগুলোর কথা তুলে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, ‘তার (আনিসুল) নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকা উচিত। কারণ আনিসুল হক বাংলাদেশের গর্ব ছিলেন।’
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, তাকে (আনিসুল) যেন স্মরণ করে রাখতে পারি, সে রকম কিছু আপনি করবেন, এটা আমাদের দাবি।
ব্যক্তিগত সফরে গত ২৯ জুলাই যুক্তরাজ্যে যাওয়া আনিসুল হক অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ১৩ আগস্ট তাকে লন্ডনের ন্যাশনাল নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা তার রোগটিকে মস্তিস্কের প্রদাহজনিত রোগ ‘সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিস’ শনাক্ত করেন চিকিৎসকেরা। এরপর তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।
মাঝে অবস্থান উন্নতি হলেও গত মঙ্গলবার আবার অবস্থার অবনতি হয় এবং তাকে আইসিইউতে নিয়ে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। বৃহস্পতিবার সেখানেই মারা যান তিনি।
আনিসুল হকের মৃত্যু সংবাদে অভূতপূর্ব প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন নগরবাসী। এই মেয়র তাদের কাছে কতটা প্রিয় ছিল, একটি বাসযোগ্য ও আধুনিক নগর গড়তে তিনি তাদেরকে যে স্বপ্ন দেখাতে পেরেছিলেন, সে বিষয়টি ফেসবুকের লেখালেখিতেই স্পষ্ট।
আনিসুলের সঙ্গে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তার মৃত্যুর পরদিন আবেগ ধরে রাখতে পারেননি ঢাকার অপর অংশের মেয়র সাঈদ খোকনও। তিনি যখন কথা বলছিলেন, তখন তার চোখ দিয়ে বইছিল পানির ধারা।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে ২ ডিসেম্বর ২০১৭