রাজধানীর উত্তরা থেকে আন্তর্জাতিক পর্নোগ্রাফি ব্যবসার বাংলাদেশি প্রধানকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তার নাম ফুয়াদ বিন সুলতান (৩৩)। র্যাব বলছে, সে রাজধানীর অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে পর্নোফিল্ম তৈরি করত। পরে এসব ছবি ইন্টারনেটে আপলোড করে দিত।
বিশ্বে কয়েক লাখ পর্নো ওয়েবসাইট থাকলেও বাংলাদেশ এ থেকে মুক্ত ছিল। গ্রেপ্তাকৃত ফুয়াদের হাত ধরে এ ধরনের ওয়েবসাইট বাংলাদেশেও চালু হয়। তিনিই প্রথম দেশে বাণিজ্যিকভাবে পর্নোগ্রাফি শুরু করেন।
তিনি অর্থের বিনিময়ে অনেককে দিয়ে পর্নো ছবিতে অভিনয় করিয়েছেন। আবার অনেককে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করে অগোচরে ক্যামেরায় ধারণ করেছেন। পাশাপাশি অনেক তরুণীকে কৌশলে ব্ল্যাকমেইল করেছেন।
এছাড়া তিনি উত্তরায় নিজের বাড়িতে দেহ ব্যবসা পরিচালনা করতেন।
২রা আগষ্ট বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল সারওয়ার-বিন-কাশেম।
তিনি বলেন, কয়েকজন ভুক্তভোগীর সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ফুয়াদের উপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। পরে মঙ্গলবার মধ্য রাতে রাজধানীর উত্তরার ৯নং সেক্টরের একটি বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ফ্ল্যাটে দেহ ব্যবসা পরিচালনা সম্পর্কে সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, পৈত্রিকসূত্রে পুরো বাড়িটা ফুয়াদ বিন সুলতানের। তবে বাড়ির দু’টি ফ্ল্যাটের ভাড়া থেকে প্রতি মাসে তার মাকে ৪৫ হাজার টাকা দেয় সে। বাড়িটিকে সে বিবিধ অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়ায় পরিণত করে। এখানে টাকার বিনিময়ে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য রুম ভাড়া দেওয়া হত। সে খদ্দেরদেরকে মেয়ে সরবরাহ করত। শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া ছেলেমেয়েদের দৃশ্য গোপন ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করে তাদের ব্ল্যাকমেইল করত। এসব মেয়েদেরকে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করত।
“এমনকি সে অশালীন অবস্থায় মেয়েদের পাশে বসিয়ে নিজে মুখোশ পরে ফেইসবুকে লাইভ স্ট্রিমিং করত। এছাড়া ওই ফ্ল্যাটে পর্নোভিডিও তৈরি করে তা বিক্রি করত। এভাবে অবৈধ পর্নো জগতে ফুয়াদ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে।”
সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, ফুয়াদ বিন সুলতান ৮টি ওয়েবসাইট পরিচালনা করত। এছাড়াও বিভিন্ন যুবকের কাছ থেকে গোপনে ধারণ করা অশ্লীল ভিডিও কিনে তার সাইটে আপলোড করত। এরপর তার সাইটগুলো থেকে ভিডিও বিদেশি অনেক পর্নোগ্রাফি সাইটে উচ্চমূল্যে বিক্রি করত।
কর্ণেল বলেন, সে বাড়িটি দেহ ব্যবসার কাজে ব্যবহার করত। যেখানে মাদকসহ বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কর্মকাণ্ডের আখড়া তৈরি করছিল। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে পাইরেসি করা সিডি, পর্নোগ্রাফির কাজে ব্যবহৃত ১টি ল্যাপটপ ও ইয়াবাসহ যৌন উত্তেজক বড়ি উদ্ধার করা হয়।
সারওয়ার-বিন-কাশেম জানান, ফুয়াদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স শেষ করেছে। পরে কিছুদিন বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করেছে। সে ছাত্রাবস্থা থেকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মেয়েদের সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে প্রতারিত করত বলে জানায়। এছাড়াও টাকার বিনিময়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রবণতাও ছিল তার।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, ফুয়াদ বিন সুলতান ২০১১ সালে কমিশনের বিনিময়ে বাসা ভাড়া করে দেয়ার ব্যবসা শুরু করে। এক পর্যায়ে সে দেশি ও বিদেশি নাগরিকদের গুলশান ও উত্তরায় বিভিন্ন বাসা ভাড়া দিয়ে কমিশন নিত। পরে ২০১৪ সালে সে ইন্টারনেট ব্যবসা শুরু করে এবং বিভিন্ন পর্ণোসাইটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। ফলে মেয়েদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করাকে সে পেশায় পরিণত করে।
তিনি বলেন, এক পর্যায়ে সে দুইটি বৈধ ইন্টারনেট ব্যবসার অন্তরালে ২০১৫-১৬ সালে দুইটি ওয়েব সাইটের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফির ব্যবসা শুরু করে। এর মাধ্যমে সে বিভিন্নভাবে সংগৃহীত মেয়েদের আপত্তিকর ছবি, মোবাইল নম্বর এবং দৈহিক মিলনের বিনিময় মূল্য উল্লেখ করে বিভিন্ন জনকে আকৃষ্ট করত।
গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান সারওয়ার-বিন-কাশেম।
আজকের বাজার: এলকে/এলকে ৩রা আগষ্ট ২০১৭