আন্তর্জাতিক যোগাযোগ সম্মেলনে যোগ দিতে উজবেকিস্তানের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ মোমেনের

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন তাসখন্দে ১৫-১৬ জুলাই অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে আজ উজবেকিস্তানের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। আঞ্চলিক যোগাযোগ জোরদার করার লক্ষ্যে উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিয়োইয়েভ আয়োজিত ‘সেন্ট্রাল অ্যান্ড সাউথ এশিয়া: রিজিওনাল কানেক্টিভিটি-চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড অপারচুনিটি’ শীর্ষক এই সম্মেলনে প্রায় ৪০টি দেশের সরকার প্রধান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ যোগ দেবেন।

মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পরিবহণ, লজিস্টিকস, জ্বালানী-শক্তি, বাণিজ্য, শিল্প, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি ও মানবিক বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে পারস্পারিক স্বার্থে কৌশল প্রণয়নে বহুমুখী আলোচনার জন্য একটি রাজনৈতিক ও বিশেষজ্ঞ প্লাটফরম গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই উচ্চ-পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস যোগ দিবেন।  ঢাকা ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক অঙ্গণে ‘যোগাযোগ নেতা’ হিসেবে আবির্ভূত হওয়ায় সম্মেলন চলাকালে বাংলাদেশী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঞ্চলিক যোগাযোগ সম্প্রসারণের পরামর্শ দিবেন। সম্মেলনের ফাঁকে ড. মোমেন রুশ, ভারতীয় ও চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। রুশ, ভারতীয় ও চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণের সঙ্গে এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকগুলোতে অন্যান্য ইস্যু ছাড়া তিনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টিকে প্রধান্য দেবেন।

মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকে তার এই সফর সম্পর্কে বলেন, ‘আমি রোহিঙ্গা পরিস্থিতির বর্তমান অবস্থার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকারের যে প্রস্তাবটি লংঘিত হয়েছে সে সম্পর্কে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ব্রিফ করব। এই প্রস্তাবটি সোমবার জাতিসংঘে গৃহীত হয়েছে।’ মিয়ানমারের সেনা প্রধানের সাম্প্রতিক মস্কো সফর ও অস্ত্র চুক্তির ব্যাপারে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপের পরিকল্পনা মোমেনের রয়েছে।

২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে প্রবেশের পর এই প্রথমবারের মতো জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের চলমান ৪৭তম অধিবেশনে ‘হিউম্যান রাইটস সিচুয়েশন অব রোহিঙ্গা মুসলিম অ্যান্ড আদার মাইনোরিটিজ ইন মিয়ানমার’ প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে।

ভোটাভুটি ছাড়াই জাতিসংঘের এই প্রস্তাব গ্রহণকে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটি একটি সাফল্য। বিশ্বের ১৯৩টি দেশ বাংলাদেশের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে জানিয়েছে যে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির মানবাধিকার লংঘিত হয়েছে। বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় তারা বাংলাদেশের প্রশংসা করে।’ মোমেন আরো বলেন, এই প্রস্তাবে জাতিসংঘের প্রতিটি দেশ এ ব্যাপারে একমত হয় যে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফিরে যেতে তারা কাজ করে যাবে যা বাংলাদেশের ‘এক নম্বর প্রাধান্য।’

ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক সম্পর্কে ড. মোমেন বলেন, তিনি তার সাথে জাতিসংঘের নতুন প্রস্তাব ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের মতো ইস্যুগুলো নিয়ে নিয়ে কথা বলবেন। কারণ নয়াদিল্লী এখন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য।
মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু ছাড়াও তিনি ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় ইস্যু নিয়েও আলোচনা করবেন।

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, তিনি চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনাতেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের ইস্যুটিকেই অগ্রাধিকার দিবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, এই বৈঠকে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানাবেন যে, চীন উপহার স্বরূপ বাংলাদেশকে আরো এক মিলিয়ন চীনা ভ্যাকসিন দেবে। মোমেন সম্মেলনের ফাঁকে উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও বিমানমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করবেন।

এই বৈঠকগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনি তুলা রপ্তানী এবং ঢাকা ও তাসখন্ডের মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগসহ বাংলাদেশ উজবেকিস্তানের মধ্যে বেশ কিছু দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করবেন। সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশে ফিরবেন। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান