আবগারি শুল্ক বাতিলের দাবি পেশাজীবী ও গবেষকদের

ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বাতিলের দাবি জানিয়েছেন দেশের পেশাজীবী ও গবেষকরা। পাশাপাশি ভ্যাট হার কমানোর দাবিও জানানো হয়েছে। তাদের মতে, ঢালাওভাবে ভ্যাট আরোপ এক ধরনের অপেশাদার আচরণ। এটি বন্ধ করতে হবে।

তারা বলছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে গণহারে ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক আরোপ সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলবে। এতে সংকটে পড়বে আবাসন ও বিদ্যুৎ খাত। আবাসন ব্যবসায়ী ছাড়াও যারা ব্যক্তি পর্যায়ে গৃহনির্মাণ করবে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ফলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে আরও ভাটা পড়বে।

২০ জুন মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বেসরকারি সংস্থা সমষ্টির আয়োজনে ২০১৭-১৮ বাজেটোত্তর এক সেমিনারে তারা এসব কথা বলেন।

সিপিডির গবেষণা ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, সব ব্যবসায়ী ভ্যাট দেন না। যেখান থেকে সহজে ভ্যাট ও কর আদায় করা যায় সেখানে আরোপ করা হয়েছে; কঠিন কোনো খাতে ভ্যাট আরোপ করা হয়নি। বিদ্যুৎ খাতে ৫ শতাংশের পরিবর্তে করা হয়েছে ১৫ শতাংশ। যা কার্যকর হলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।

তার মতে, ব্যাংকের আমানতরে ওপর থেকে আবগারি শুল্ক পুরোপরি বাতিল করা উচিত। বিনিয়োগ ক্ষুধা মেটাতে প্রস্তুতি অপর্যাপ্ত। সে কারণে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কয়েক বছর আগে দেশে বছরে কর্মস্থান হতো ১০ থেকে ১২ লাখ লোকের। এখন তা ৩ থেকে ৪ লাখে নেমে এসেছে।

তিনি বলেন, কর্মসংস্থানহীন ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আর এত বড় বাজেট কোনো কাজে আসবে না। দেশের ব্যাংকিং খাত বড় ঝুঁকিতে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাত বাঁচাতে হলে একটি স্বাধীন ব্যাংক কমিশন গঠন করতে হবে। দেশ থেকে প্রচুর অর্থপাচার হলেও প্রস্তাবিত বাজেটে তার কোনো উল্লেখ নেই।

একাত্তর টিভির বার্তা পরিচালক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণের অংশগ্রহণ নেই। পুরোটাই রাজনৈতিক। একই জায়গায় বারবার করের বোঝা বাড়লেও কর দেওয়ার সংখ্যা বাড়ছে না।

তিনি বলেন, গত ৯ বছরে ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক লুটপাট করা হয়েছে। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকে লাগামহীনভাবে লুটপাট করা হয়েছে। এর মাশুল দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। অর্থপাচারের ঘটনাও আগের তুলনায় বেড়েছে। বড় প্রকল্পে দুর্নীতির কথা শোনা যাচ্ছে। কোনো প্রকল্পই সময় মতো শেষ হচ্ছে না। কর্মসংস্থান নেই। বিনিয়োগ থেমে আছে। বিশেষ করে বেসরকারি বিনিয়োগ নেই বললেই চলে।

বাংলাদেশ পোস্টের ডেপুটি ম্যানেজিং এডিটর গোলাম শাহানী বলেন, গড় অংকের মতো গণহারে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলবে। আবাসন খাতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ব্যক্তি পর্যায়ে যারা গৃহনির্মাণ করবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বেশি। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ আরও সংকটে পড়বে। আবগারি শুল্ক বাড়িয়ে সরকার কী বোঝালো? মানুষ টাকা কোথায় রাখবে। পুঁজিবাজারেও রাখার পরিবেশ নেই। এসব কিছু মানুষের জীবন মানের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দি ইন্ডিপেন্ডেন্টের বার্তা সম্পাদক মীর মোস্তাফিজুর রহমান। তার প্রবন্ধেও ভ্যাট ও আবগারি শুল্কের সমালোচনা করা হয়েছে।

অধ্যাপক ড. আবু জাফর মো. শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, ব্যাংকিং খঅতের দুরবস্থা দূর করতে হবে। দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।

সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন সমষ্টির পরিচালক মীর মাসরুর জামান প্রমুখ।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ২০ জুন ২০১৭