আবারও বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো সিলেট ও সুনামগঞ্জে

সিলেট ও সুনামগঞ্জে প্রবল বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারনে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। নদনদীতে সোমবার থেকে আবারও পানি বাড়তে শুরু করেছে। ফলে এ অঞ্চলে এ মৌসুমে ৩য় বারের মতো ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জের সুরমা সহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ বিকেল ৩টা পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদীর পানি সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে ১৩.৫৫ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে, যা বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার উপরে।

একই নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে ১০.৭৭ মিটার, যা বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। কুশিয়ার নদীর পানি বিকেল ৩টা পর্যন্ত সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯.৯২ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে, যা বিপদসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার উপরে। এই পয়েন্টে পানির বিপদসীমা হচ্ছে ৯.৪৫ মিটার। এছাড়াও কুশিয়ার নদীর জকিগঞ্জ অমলসীদ, বিয়ানীবাজার শেওলা ও শেরপুর পয়েন্ট, জৈন্তাপুর উপজেলার সারি নদী সারিঘাট পয়েন্ট ও কানাইঘাট উপজেলার লোভা ছড়া নদীতে পানি আগের তুলনায় অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লেখিত পয়েন্টগুলোতে এখনো বিপদসীমার নীচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে সুনামগঞ্জ জেলার সর্বত্র পানি দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। আজ বিকেল ৩টা পর্যন্ত জেলার সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ জেলা সদরের ষোলঘর পয়েন্টে আজ বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার, জেলার শিল্প শহর হিসেবে খ্যাত ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ১.৬১ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার দিরাই উপজেলার কালনি নদীর পানি বিপদ সীমার ১৭ সেন্টিমিটার ও তাহিরপুর উপজেলার জাদুকাটা নদীর পানি বেড়ে বিপদ সীমার ৮৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এর আগে দুদফা সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা হয়েছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী ভারতে উচু এলাকায় বৃষ্টির পরিমাণ বাড়লে সেখান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেট ও সুনামগঞ্জের নদ নদীগুলোতে পানি বাড়তে থাকে। উপর্যুপরি বন্যায় কৃষক, শ্রমিক সহ সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংক দেখা দিয়েছে। দুই জেলার নিম্নাঞ্চলগুলো ইতোমধ্যে বন্যার পানিতে প্লাবিত। অনেকের বাড়ি ঘরে পানি প্রবেশ করার ফলে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। দফায় দফায় বন্যার কারনে গৃহপালিত গবাদি পশু নিয়ে বিশেষ করে কৃষক পরিবার চরম বেকায়দায় পড়েছেন।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান জানান, সুরমার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক সহ জেলার সবগুলো পয়েন্টে নদনদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারনে এ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।

শিল্প শহর ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. গোলাম কবীর জানান, দ্বিতীয় দফা বন্যার পানি নামতে না নামতে ফের সোমবার থেকে বন্যার পানি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। পৌর শহরের অনেকগুলো এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে, স্কুল, কলেজ মসজিদ-মাদ্রাসা সহ বিভিন্ন ব্যাবসা ও বাণিজ্য বিতানের অভ্যন্তরে ইতোমধ্যে পানি প্রবেশ করেছে।

এ ছাড়াও সিলেট বিভাগের অন্য দুই জেলা মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের মনু, খোয়াই, ধলাই সহ সবগুলো নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এই দুই জেলার পানি কোন পয়েন্টে এখনো বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান