আবারও বিএনপির‘রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের’বহিঃপ্রকাশ

বিএনপির চলমান আন্দোলন হিসেবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলেও শনিবারের নির্বাচনে দলটি তাদের সমর্থক ও এজেন্টদের ভোট কেন্দ্রে আনতে ব্যর্থ হয়েছেন। যা দলটির রাজনৈতিক দোউলিয়াত্ব ও দুর্বল নেতৃত্বের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। সিটি নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে হরতালের মতো কর্মসূচি ঘোষণাটিও বিএনপির নীতি-নির্ধারকদের পক্ষে জনগণকে বুঝতে না পারা এবং সময়োপযোগী কোনো কর্মসূচির বাস্তবায়নের ব্যর্থতারই অংশ মনে করছেন তারা।

ইউএনবির সাথে আলাপকালে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বিবিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সর্ম্পক বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রহমান, সুশাসনের জন্য নাগরিকের(সুজন)সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানান, দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতি করে আসা বিএনপির মতো একটি দল তাদের নীতি-নির্ধারকদের ভুল সিদ্ধান্ত এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবে দেশের রাজনীতিতে সঠিক ভূমিকা রাখতে পারছে না। তারা বলেন, বিএনপির নেতাদের জনবান্ধব কর্মসূচির দেয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে ফিরে আসার জন্য একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক কৌশল নেয়া উচিত। ড. তারেক শামসুর রহমান বলেন, বিএনপিকে সিটি নির্বাচনে জিততে দেবে না এমন ধারণার ফলে হয়ত তাদের দলের পক্ষ থেকে এ নির্বাচনকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়নি।

তিনি বলেন,‘তাদের(বিএনপির নেতাদের)আচরণ দেখে আমার এটা মনে হয়েছে যে তারা এ নির্বাচনে জেতার জন্য সর্বাত্মকভাবে কাজ করেনি। আমি মনে করি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছ থেকেও নির্বাচনের বিষয়ে দলের নেতারা সঠিক দিকনির্দেশনা পায়নি।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, নির্বাচনের সময় দলের নেতা-কর্মীদের ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসা এবং প্রতিটি কেন্দ্রে দলীয় এজেন্ট দিতে পারেনি বিএনপি।‘এটা দলের বড় দুর্বলতা।’ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে‘অনিয়মের’প্রতিবাদে বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালের মতো কর্মসূচি দেয়ার বিষয়টিও পছন্দ হয়নি এ বিশ্লেষকের।

তারেক শামসুর রহমান বলেন, মানুষ এখন হরতাল সমর্থন করে না এবং তাদের মধ্যে একটি হরতাল বিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছে। তারা যে এখন হরতাল সমর্থন করেন না তা গতকালের(রবিবারের)হরতালে আবারও প্রমাণ হয়েছে। আমি মনে করি, জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে হরতালের ঘোষণা দিয়ে বিএনপির নেতারা তাদের রাজনৈতিক দীনতার বহিঃপ্রকাশ করেছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক বলেন,‘বিএনপিকে পুনর্গঠিত করতে এবং তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মনোবল বাড়াতে ফলপ্রসূ রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং সুচিন্তিত কর্ম-পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে দলটি।’ তিনি বলেন, বিএনপির নেতাদের উচিত হবে দলকে পুনর্গঠিত করে রাজনীতির মাঠে ফিরে আসতে সুচিন্তিত কর্ম-পরিকল্পনা প্রনয়ন করা।

ড. তারেক শামসুর রহমান বলেন, বিএনপি নেতাদের উচিত তাদের তৃর্ণমূলের নেতাদের মতামত নেয়া ও দলকে সংগঠিত করা এবং রাজনীতির মাঠে সক্রিয় থাকার প্রস্তুতি গ্রহণ করা। সুজন-এর সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তিনি নির্বাচনের দিন সাতটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন এবং ওইসব কেন্দ্রে তিনি বিএনপি প্রার্থীদের কোনো এজেন্টকে দেখতে পাননি।

তিনি বলেন,‘বিএনপি তাদের আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়া এবং সেই সাথে দলের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। তবে, ভোটের প্রতি তাদের আন্তরিকতা প্রতিফলিত হয়নি, কেননা তারা ভোটের কেন্দ্রগুলোতে যাওয়ার চেষ্টাও করেনি। যা বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ করেছে।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ বদিউল আলম বলেন, নেতৃত্বের সংকটের কারণে দলটিকে পুনর্গঠিত করতে এবং তাদের পদমর্যাদা নতুন করে সাজানোর ক্ষেত্রে বিএনপি ব্যর্থ হচ্ছে। তিনি আরও বলেন,‘বিএনপির মতো একটি দেশের প্রধান বিরোধী দলের রাজনৈতিক দুর্বলতার কারণে নির্বাচন প্রক্রিয়া নষ্ট হচ্ছে এবং ভোটের প্রতি জনগণের আস্থা কমে যাচ্ছে।’ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, নেতৃত্বের সংকটের ফলে বিএনপি প্রধান বিরোধী দল হিসেবে অবদান রাখতে পারছে না।

তিনি মনে করেন,‘বিএনপির নেতারা সবসময় লন্ডন থেকে আসা বার্তার জন্য অপেক্ষা করেন এবং ফাঁকা বিবৃতি দেন। তারা সংগঠনকে ঢেলে সাজানো ও তৃণমূলকে পুনরুজ্জীবিত করার মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী করতে কোনো কার্যকর কৌশলই নিতে পারেননি। আমি মনে করি সিটি নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য বিএনপির কোনো পরিকল্পনা বা কৌশল ছিল না।’ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন,‘দলের নেতা-কর্মীদের সংগঠিত না করেই বিএনপি হঠাৎ করে হরতালের মতো কর্মসূচি পালনের ডাক দিতে পারে না।’ ‘বিএনপির স্থায়ী কমিটিকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং দলকে পুনরায় শক্তিশালী করার দায়িত্ব তাদেরকে দিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উচিত দলের রাজনীতি থেকে দূরে থাকা,’তিনি বলেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশারফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,‘নির্বাচন নিয়ে আমাদের দল আন্তরিক ছিল, তবে ক্ষমতাসীন সরকার‘রাষ্ট্রযন্ত্রকে’ব্যবহার করে‘নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন’আয়োজন করেছে।‘আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের বাধা এবং হুমকির কারণে তারা যেতে পারেনি।’

হরতালের ডাক দেয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন,‘স্থায়ী কমিটির মতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমরা মনে করেছিলাম হরতালের মতো কর্মসূচি পালনে জনগন তাদের পাশে থাকবে।’ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন মিলে‘বানোয়াট’নির্বাচন দেয়ার কারণে জনগণ তাদের আস্থা হারিয়ে ফেলায় ভোট দিতে কেন্দ্রে আসেনি।

তিনি দাবি করেন, জনগণ তাদের দেয়া হরতালে‘স্বতঃস্ফূর্ত’সমর্থন দিয়ে একে সফল করেছে। অল্প সময়ের মধ্যে ঘোষণা করা হরতালকে সমর্থন দিয়ে সফল করার জন্য জনগণকে ধন্যবাদ জানান ফখরুল। শনিবারের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেনকে বিশাল ভোটে হরিয়ে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম এবং শেখ ফজলে নুর তাপস যথাক্রমে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন(ডিএনসিসি)এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের(ডিএসসিসি)মেয়র পদে জয়ী হন। সূত্র-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান