আবাসন খাতে সু-সময় ফিরছে

অবশেষে কয়েক বছরের মন্দাভাব কাটিয়ে দেশের আবাসন খাতে আবার সুসময় ফিরছে। ফ্ল্যাট ও জমি কিনতে সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন বেশ আগ্রহ দেখতে পাচ্ছে আবাসন নির্মাতা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। অন্যদিকে ক্রেতাদের আগ্রহ দেখে নির্মাতারাও এখন আগের চেয়ে বেশি হারে নতুন প্রকল্প নেওয়া শুরু করেছেন।
সুসময়ের এ লক্ষণ দেখা যাচ্ছে ঢাকায় চলতে থাকা আবাসন মেলায়ও। এবারের মেলায় প্রচুর দর্শনার্থী ভিড় করছেন। অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, দর্শনার্থীদের মধ্যে ঘুরতে আসা লোক নেই। সিংহভাগই ক্রেতা। ফলে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো এবার মেলায় অংশ নিয়ে খুশি।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সমপ্রতি রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) আয়োজিত এ আবাসন মেলা শুরু হয়। মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি স্টলের সামনেই দু-চার জন করে দর্শনার্থী আছেন। তাঁরা জমি ও ফ্ল্যাটের খোঁজ নিচ্ছেন। দুপুরের পর ভিড় আরও বাড়তে থাকে। রিহ্যাব জানায়, গতকাল বিকেল পর্যন্ত মেলায় সাড়ে ১১ হাজার দর্শনার্থী প্রবেশ করেছেন। এ সংখ্যা গত বছরের মেলার চেয়ে বেশি।
আবাসন ব্যবসায়ীরা জানান, ঋণের উচ্চ সুদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহায়ণ তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং আবাসিকের বিদ্যুৎ ও গ্যাস-সংযোগ দেওয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করায় ২০১২ সালের পর আবাসন খাতে মন্দাভাব তৈরি হয়েছিল। মাঝের কয়েক বছর এ খাতে চাহিদা একেবারেই কমে যায় এবং নতুন প্রকল্প গ্রহণও কমিয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। বছর দু-এক ধরে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
এ উন্নতির পেছনে ঋণের সুদের হার কমে যাওয়া, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সমাজের একটা শ্রেণির ফ্ল্যাট ও জমি কেনার সক্ষমতা তৈরি হওয়াকে বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন মেলায় অংশ নেওয়া আবাসন কোম্পানির বিক্রয়কর্মীরা। তাঁদেরই একজন আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের উপব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শহীদ পারভেজ বলেন, সুদের হার এখন কমে ৯ শতাংশে নেমেছে। এটা আরেকটু কমলে ক্রেতাদের জন্য আরও ভালো হতো। তিনি বলেন, এখন মধ্যম দামের ফ্ল্যাটের ক্রেতার সংখ্যা বেশি। ক্রেতাদের ৮০ শতাংশই ঋণের ওপর নির্ভরশীল।
আনোয়ার ল্যান্ডমার্ক এবারের মেলায় ১৮টি প্রকল্পে ফ্ল্যাট বিক্রি করছে। তাদের এসব প্রকল্প গুলশান, ধানমন্ডি, বারিধারা, উত্তরা, শ্যামলী, মিরপুর, কমলাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায়। তাদের সবচেয়ে কম মূল্যের ফ্ল্যাটের প্রতি বর্গফুটের দাম সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা।
আকাশ ডেভেলপমেন্টস মেলায় মূলত উচ্চ আয়ের ক্রেতাদের জন্য ফ্ল্যাট নিয়ে এসেছে। ঢাকার গুলশান, বারিধারা, ইস্কাটন ও ধানমন্ডিতে তাদের ছয়টি প্রকল্পে প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের মূল্য ১৮ হাজার টাকা থেকে শুরু। এ ছাড়া তাদের বাণিজ্যিক ভবনে প্রতি বর্গফুটের মূল্য ২৭ থেকে ৮৫ হাজার টাকা। মেলা সম্পর্কে কোম্পানিটির উপব্যবস্থাপক মো. মাসুদ খান বলেন, এখানে যাঁরা আসছেন তাঁদের প্রায় সবাই ক্রেতা। কেনার জন্যই তাঁরা মেলায় এসেছেন।
ক্রিডেন্স হাউজিং লিমিটেড মেলায় ১৩টি প্রকল্পের ফ্ল্যাট বিক্রি করছে। এসব প্রকল্প ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, কলাবাগান, মোহাম্মদপুর ও মিরপুরে। প্রতিষ্ঠানটির বিপণন বিভাগের কর্মীরা জানান, তাঁদের প্রকল্পগুলোতে ফ্ল্যাটের প্রতি বর্গফুটের দাম সাত হাজার টাকা থেকে শুরু।
মেলায় ফ্ল্যাটের খোঁজখবর নিতে গিয়েছিলেন মামুনুর রশিদ ও সাইয়েদা সুলতানা দম্পতি। জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকরি করার সুবাদে কিছু টাকা সঞ্চয় করা যায়। পাশাপাশি বাসাভাড়া বাবদ মাসে ২০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। বাসাভাড়ার ব্যয় ও সঞ্চয়ের টাকা কিস্তি হিসেবে দিয়ে তাঁরা একটি ফ্ল্যাট কিনতে চান।
মামুনুর রশিদ বলেন, একটা ফ্ল্যাট হলে বাড়িওয়ালার ভাড়া বাড়ানোর যন্ত্রণা ও কয়েক বছর পরপর বাসা পাল্টানোর ঝক্কি থাকে না। এ জন্য কষ্ট করে হলেও ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট কিনে ফেলা ভালো।
মেলায় ফ্ল্যাটের পাশাপাশি জমি কিনতেও ক্রেতাদের বেশ আগ্রহ দেখা গেছে। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট গ্রুপের (বিডিজি) সাউথ টাউন প্রকল্পে জমির খোঁজ নিচ্ছিলেন অনেকেই। বিডিজির বিপণন বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. আতিকুর রহমান বলেন, সাউথ টাউন প্রকল্পটি ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত। এ প্রকল্পে এখনই বাড়ি করার উপযোগী জমি নগদে কেনা যাচ্ছে। পাশাপাশি কিস্তিতেও প্লট বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, মেলায় নগদে কিনলে ৪০ শতাংশ ছাড়ে ১২ লাখ টাকা কাঠায় প্লট দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ৩৬ থেকে ১২০ কিস্তিতে মূল্য পরিশোধের সুযোগে জমি কিনতে পারছেন ক্রেতারা।

আজকের বাজার: সালি / ০১ জানুয়ারি ২০১৮