আমদানির বিকল্প পণ্য বানান দেশকে বাঁচান

ভোগ্য পণ্যের বাজার অস্থিতিশীলতার কারণ:
বাজার অস্থিতিশীলতার কারণ হল, বাজারে পণ্যের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। বাজার মূল্যের স্থিতিশীলতা আনার জন্য অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে সরবরাহ বাড়াতে হবে। সরবরাহ বাড়াবার জন্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। উৎপাদন যদি বাড়িয়ে দিতে পারেন, সেটা কৃষি পণ্যে, কৃষি উপকরণ অথবা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পণ্যে। অর্থাৎ স্থানীয় শিল্পের এবং কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। এই উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে বাজারে যখন সরবরাহ বেড়ে যাবে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এছাড়াও সরকার ডিম, চাল, পেঁয়াজের আমদানির ক্ষেত্রে কাস্টম ডিউটি অথবা শুল্ক রেয়াত সুবিধা দিয়ে, মনিটরিং পলিসি এবং ফ্রী স্কেল পলিসিতে ব্যাংকের রেট অফ ইন্টারেস্ট বাড়িয়ে মানি সাপ্লাই কমিয়েছে। এইসব কার্যক্রমের মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতির একটি স্বল্প মেয়াদী প্রভাব বাজারে পড়তে পারে। যার মধ্য দিয়ে দ্রব্যমূল্য, মুদ্রাস্ফীতি কমে যেতে পারে। এই অবস্থাটাকে দীর্ঘমেয়াদী করতে গেলে, আপনাকে অবশ্যই স্থানীয় শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হবে।

বাজার নিয়ন্ত্রণে বামা’র ভূমিকা:

বাংলাদেশ এগ্রো কেমিক্যাল মেনুফ্যাকচারাস অ্যাসোসিয়েশন- বামা এই সংগঠনটি কৃষকের ফসল উৎপাদনে ও সুরক্ষায় যে রাসায়নিক প্রয়োজন হয়, তার মধ্যে অন্যতম কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, আগাছা নাশক, বালাইনাশক অর্থাৎ ফসলের রোগ বালাই নিয়ন্ত্রণ প্রতিরোধ সুরক্ষার জন্য যেসব রাসায়নিক ব্যবহার হয়, তাদের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম বামা। এ দেশে ১৮ কোটি মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় যেসব খাদ্য দ্রব্য উৎপাদন হয়, তার উৎপাদন খরচ কমানোর বিধি সম্মত উপায়, তার জন্য সরকারের বিদ্যমান আইন নীতিমালা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করে বামা। এর মধ্য দিয়ে জনদুর্ভোগ কমানো, কৃষকের ফসল উৎপাদন খরচ কমানো। যে আইন নীতিমালা জনবান্ধব নয় বা সাধারণ কৃষকের পক্ষে নেই, সেগুলোকে সংস্কারের জন্য সরকারের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে, এ দেশের ১৮ কোটি মানুষের জীবনে স্বস্তি আনার জন্য ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বামা নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

বাজার সিন্ডিকেট কিভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে:অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় সিন্ডিকেশন অত্যন্ত প্রচলিত শব্দ। মধ্যস্বত্বভোগী যারা থাকে তাদের ছাড়া অর্থনীতি অচল। আপনারা যদি এই মধ্যস্বত্বভোগীদের বাদ দিয়ে অর্থনীতি চালাতে চান, সুদূরপ্রসারী কোন পরিকল্পনা ছাড়া হঠাৎ করে যদি এই অর্থনীতির মাঝে মধ্যস্বত্বভোগীদের সিন্ডিকেশন বলে এর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করেন, তাহলে ওই পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় আরো জটিলতার সৃষ্টি হবে। ফলে দ্রব্যমূল্যের দাম কমানোর চেয়ে বিপরীত হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বাজার অস্থিতিশীল করার উদ্যোগ নেয়, সে ধরনের মুষ্টিমেয় ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান থাকতে পারে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ভোক্তা অধিকার বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় নিয়ে আসা যেতে পারে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং এর মধ্য দিয়ে অসাধু ব্যবসায়ী, অতিরিক্ত পণ্য মজুদকারীদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অর্থনীতিতে সিন্ডিকেটের প্রয়োজন আছে। মধ্য সত্যভোগীকে সিন্ডিকেশন বলে একটি ভুল মেসেজ সাধারণ ক্রেতার মাঝে দিয়ে এর ছন্দ পতন ঘটানো ঠিক হবে না।

এগ্রি বিজনেসে টেকনোলজির ব্যবহার:
প্রযুক্তি, জ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যবহার ছাড়া রাষ্ট্রের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে না। প্রযুক্তির পার্থক্যের কারণে দেশ ধনী এবং গরিব হচ্ছে। উন্নত দেশের অর্থনীতির চেয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এই সক্ষমতার জায়গাটা কোথায় আমরা পিছিয়ে? আমরা যে সমস্ত জিনিস উৎপাদন করি যেমন, ফার্মাসিউটিক্যাল প্রোডাক্ট, পোশাক শিল্প, রড, সিমেন্ট স্থানীয় শিল্প রয়েছে। এই শিল্প কারকারখানায় যেখানে প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে সেখানে আমরা এগিয়ে গেছি। যেখানে আমাদের অন্য দেশের প্রযুক্তি নিয়ে আসতে হচ্ছে যেমন কৃষি ক্ষেত্রে আমরা উন্নত প্রযুক্তি আনতে পারিনি। কৃষি ক্ষেত্রে যান্ত্রিকিকরনে আমরা অন্য দেশের কারখানায় ভর্তুকি দিয়ে প্রযুক্তি আনছি। এদেশে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। বেসরকারি উদ্যোগেও অনেক লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান ছোটখাটো যন্ত্র বানাতে পারে। আমরা এই জায়গাগুলো চিহ্নিত করে আমদানির বিকল্প বানাতে পারি। কোন্ কোন্ জায়গায় আমাদের শিল্প হতে পারে, এইগুলোর দায়িত্ব নিয়ে সরকারের রাজনৈতিক নেতা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিভিল ব্যুরোক্রেটস যারা আছেন তারা, এই সমস্ত ব্যক্তি এবং ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এদের সাথে বসে অগ্রাধিকার খাতগুলো চিহ্নিত করতে হবে।

রাষ্ট্রকে বলে দিতে হবে আগামী ৫ বছর বা ১০ বছরে আমরা উল্লেখিত সেক্টরগুলোকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করব। আমাদের স্থানীয় শিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবো। আমাদের দেশে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। আমরা আমদানির বিকল্প পণ্য দেশেই উৎপাদন করব। অনেক সাধারন জিনিস আছে যেগুলো আমরা অকারণে আমদানি করি। যেটা আমাদের দেশেই উৎপাদন হতে পারে। যেমন বালাইনাশক, পেস্টিসাইড কেন আমরা আমদানি করে আনবো। আমাদের দেশেই এত কৃষি বিজ্ঞানী আছে। কৃষিতে এত ফসলের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। অনেক কোম্পানি পেস্টিসাইড আমদানি করে নিয়ে আসছে। আমাদের দেশেই উৎপাদন করে যারা ব্যবসায়ী আছেন, তারা এখান থেকেই কিনে আমাদের দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করতে পারেন। এরকম সেক্টর ভিত্তিক গবেষণা করে আমদানির বিকল্প পণ্য আমাদের দেশে উৎপাদন করতে হবে।

আর যে পণ্য এখানে উৎপাদন করার চেয়ে আমদানি করাই লাভজনক, এরকমও অনেক পণ্য আছে, যেমন পটাশিয়াম ফার্টিলাইজার। এটা আমদানি করা ছাড়া আমাদের দেশে উৎপাদন হবে না। টিএসপি, ইউরিয়া, জিন ফার্টিলাইজার, জিপসাম আমাদের দেশেই উৎপাদন করতে পারবেন। সালফার ইন্ডাস্ট্রির সাথে জড়িতরা অকারণেই মনে করছে এটা আমাদের আমদানি করে আনতে হবে। এটা সঠিক নয়। আমাদের দেশেই পেট্রোলিয়াম প্রোডাক্টেরই বাই প্রোডাক্টের সাথে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সালফার আছে। এটাকে প্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে সালফার উৎপাদন করতে পারি। হাজার হাজার মেট্রিক টন বিদেশ থেকে এই পণ্যগুলো অকারণে আমদানি করে থাকি। আমদানির বিকল্প পণ্য আমাদের দেশে তৈরি করুন, আমাদের দেশের মুদ্রাস্ফীতি কমে যাবে।

কে এস এম মুস্তাফিজুর রহমান
প্রেসিডেন্ট,
বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল মেনুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন -বামা