এমপিওভুক্তির দাবি

আমরণ অনশনের নবম দিনে অসুস্থ ১৮২ শিক্ষক

ফাইল ছবি

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। মঙ্গলবার (৩ জুলাই) তাদের অনশনের নবম দিন। দীর্ঘ ৯ দিনের অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ১৮২ জন শিক্ষক।

এদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা গুরুতর। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অসুস্থদের মধ্যে এ পর্যন্ত ২৩ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আর স্যালাইন নিয়ে অনশন করছেন আরও ১০ শিক্ষক।

জানা যায়, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১৫ দিন অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর ২৫ জুন আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করছেন তারা।

এদিকে স্বীকৃতি পাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্ত করার যে প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে অনুরোধ করতে চান নন-এমপিও শিক্ষকরা। সে লক্ষ্যে ১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের আবেদন করেন শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল। তবে এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ পাওয়ার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছে তারা।

আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানান, দেশের বিভিন্ন জেলার নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখাসহ তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না, এজন্য শপথ গ্রহণ করেছেন তারা।

শিক্ষকরা বলেন, গত ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতিতে আমরা এমপিওভুক্তির দাবিতে রাজপথের আন্দোলন স্থগিত করেছিলাম। এরপরও আমরা বিভিন্ন কর্মসূচিতে আটকের শিকার হয়েছি।

সংগঠনটির নেতারা জানিয়েছেন, এবার স্বীকৃতি পাওয়া সবকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা আমরণ অনশন চালিয়ে যাবেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের প্রতি তাদের আস্থা নেই বলেও জানান তারা। প্রধানমন্ত্রী নিজে আশ্বস্ত করলেই কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হবে, অন্যথায় কর্মসূচি চলবে বলেও জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

এদিকে শিক্ষকদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট কলামিস্ট আবুল মকসুদ। তিনি বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি যৌক্তিক। এই দাবি পূরণে সরকার, মন্ত্রী ও সচিব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাহলে বাহানা কেন?’ কেন দাবি পূরণ করা হচ্ছে না?’

তিনি বলেন, ‘সরকারের প্রতি আমি অনুরোধ করছি, শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি মেনে নেন। শিক্ষকরা দাবি আদায়ে আন্দোলন করবে এটা দৃষ্টিকটু। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের দাবি পূরণ হওয়াই এর সমাধান।’

এছাড়াও দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন দেশের ১৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক। তারা যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে সরকারকে এ দাবি মেনে নেওয়ারও আহ্বান জানান। সাংবাদিক-লেখক কামাল লোহানী স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক অজয় কুমার রায়, কথাশিল্পী ও অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক, অধ্যাপক এম এম আকাশ প্রমুখ।

নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার আজকের বাজারকে বলেন, ‘আমরা টানা ১৫ দিন রাজপথে আন্দোলন করেছি। অকস্থান করেছি। এরপর বাধ্য হয়ে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছি। তারও ৯ দিন চলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের কোন খোঁজ নেওয়া হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের ১৮২ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ২ জনের অবস্থা গুরুতর। এই কর্মসূচির জন্য শিক্ষকদের কোন ক্ষতি হলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।’

‘নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্য নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে চলতি মাস (জুলাই) থেকেই এমপিওভুক্ত করা হবে’ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের এমন বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেনন, ‘তিনি তো ২০১০ থেকে এমন আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগে ৩৫ বছরের বয়সসীমা রেখে যে নীতিমালা করা হয়েছে তা আমাদের সঙ্গে যাচ্ছেনা। কারণ, আমাদের অনেকরে বয়স ৩৫ এর বেশি। কারণ বয়স ৪০ বছরও পার হয়ে গেছে। তাই এই নীতিমাল অনুসরণ করা হলে আমরা অনেকেই বেকার হয়ে পড়বো। অথচ অনেক বছর ধরেই আমরা বিনা বেতনে পড়িয়ে আসছি।’

জানা যায়, একই দাবিতে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার কর্মসূচি শুরু হয়। নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের ডাকে টানা ওই অবস্থান ও অনশনের একপর্যায়ে গত ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তার তৎকালীন একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান সেখানে গিয়ে আশ্বাস দিলে শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন।

এরপর সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হয় আসন্ন অর্থবছরে নতুন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করেন, সেখানে তিনি নতুন এমপিওভুক্তির বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি।

এবারের বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের জন্য ৫৩ হাজার ৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে খাতওয়ারি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ। বাজেট বরাদ্দে প্রাথমিক বিদ্যালয়, কারিগরি প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামো নির্মাণে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

আজকের বাজার/আরএম/রাসেল/