আমাদের করদাতাদের বয়স কমে গেছে: অর্থমন্ত্রী

করদাতাদের বয়স কমে গেছে। ৪০ বছর বয়স যাদের তারা বেশ ভালোভাবে কর দিচ্ছেন। এটা অত্যন্ত আশা ও গর্বের কথা বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

২৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরে এনবিআরের কর অঞ্চল-৩ আয়োজিত ‘আয়কর ক্যাম্প ও করদাতা উদ্ধুদ্ধকরণ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ৪০ বছর বয়সের বেশিরভাগ মানুষ কর দেন। গত ৮-৯ বছর ধরে এ সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। কর কর্মকর্তাদের আগের মতো মানুষ অপদস্থ আর অপছন্দ করে না। আমরা চেষ্টা করছি যারা কর আদায় করে তারা যেন করদাতাদের বন্ধু হয়।

অর্থমন্ত্রী বলেন, গত ৪০ বছর আমি করের সাথে সম্পৃক্ত। তখন কর যারা আদায় করত মানুষ তাদের ভয় পেত। পারত পক্ষে মানুষ তাদের কাছে আসত না।

তিনি বলেন, সেসময় নিবন্ধিত করদাতা ৭ লাখ থাকলেও কর দিত অনেক কম। এখন নিবন্ধিত করদাতা ৩০ লাখ। এরমধ্যে কর দেয় প্রায় ২৪ লাখ। গত ৪৭ বছরে যথেষ্ট পরিবর্তন হয়েছে। সেজন্য আমরা এনবিআরকে ধন্যবাদ দিতে পারি। আগে কর আদায় হত শত কোটি হিসেবে। এখন আদায় হয় লাখ কোটি হিসেবে। কর আদায়ের ক্ষেত্রে একটা বড় পরিবর্তন এসেছে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ৮ বছর ধরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। এ সময়ে সার্বিক সব দিকে পরিবর্তন হয়েছে। আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালে আমাদের স্বপ্ন দেখালেন আমরা ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হব। অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয় যে আমরা ২০১৬ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি। আমাদের ২০২১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধশালী দেশ হবে বলেছেন। আমরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি এবং যেভাবে জনকল্যাণ সরকারের আদর্শ তাতে ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ দেশ হওয়া কঠিন কিছু নয়। হয়ত তার আগেই আমরা সে অবস্থানে পৌঁছে যেতে পারব।

মুহিত বলেন, বিভিন্ন দেশ আমাদের নানা ধরনের সাহায্য দিত, এখনো সাহায্য অব্যাহত আছে। কিন্তু আগে যে রকম সাহায্য নিতাম এখনো সে রকম নেয় না। আমরাও ইতোমধ্যে আমাদের চেয়ে ভাগ্যাহত তাদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। যারা বিপদগ্রস্থ, দুস্থ, যারা পেছনে পড়ে রয়েছে; যারা উন্নত হতে চায়, তাদের আমরা হাত ধরে সামনে নিয়ে যাই। এটাই আমাদের উন্নয়ন মডেল বা মন্ত্র হতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা খুবই গর্ববোধ করি। একদিকে যেমন নিজেদের চেষ্টায় অন্যের সহায়তা নিয়ে চরিত্র পরিবর্তন করছি, আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন করছি। ঠিক একইভাবে যারা এখনো দুর্দশায় আছে তাদের সাহায্য করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছি।

মন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন বৃদ্ধির জন্য কর প্রয়োজন। আমরা ৩ ধরনের কর আহরণ করে থাকি। এছাড়া যে সেবা প্রদান করি তাতে কিছু চার্জ থাকে। এসব করে আমাদের যে বাজেটের জন্য টাকা তার সংস্থান করি। যা এ মুহূর্তে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। আমরা আশা করছি সামনের বছর অন্তত তা সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা বা তার চেয়ে বেশি টাকা এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যে ৫ লাখ কোটি টাকার হবে।

তিনি বলেন, বাজেট বাড়ানোর উদ্দেশ্য হল যাতে আমরা মানুষকে নানা ধরনের সেবা দিতে পারি। আমরা সমাজ সেবামূলক কাজে জাতীয় আয়ের ২ শতাংশ ব্যয় করি। সেটা অনবরত আমরা বাড়িয়ে যাচ্ছি। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশে যাতে গরীব না থাকে। ৭% এর মতো লোক গরীব থাকবে। এরমধ্যে থাকবে প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ, নারী। এ ৭% রাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করবে। এটা হলো আমাদের ভিশন। জাতিসংঘের হিসেবে এ ভিশন ২০৩০ সালে বাস্তবায়ন হবে, কিন্তু আমার হিসেবে হবে ২০২৪ সালে।

করদাতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সবাই সহায়তা না করলে রাষ্ট্র সামনের দিকে এগুবে না। আপনারা যদি রাষ্ট্রের জন্য রসদ সরবরাহ না করেন, কর না দেন, শুল্ক না দেন তাহলে রাষ্ট্র কি করে বিভিন্ন ধরনের সেবা দেবে।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসনসহ সেবা প্রদানের জন্য যেসব অর্থের প্রয়োজন হয় সে অর্থ এ সমাজই সরবরাহ করে। যারা একটু বিত্তশালী তারা কর-শুল্কের মাধ্যমে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিলে, রাষ্ট্রের হাতে কিছু অর্থ দিলে মানুষের সেবা ও উন্নয়নে ব্যবহার করতে পারে।

তিনি বলেন, পুলিশ না হলে বেঁচে থাকা মুশকিল। তারা না থাকলে চুরি চামারি, মারামারিতে দেশ ছেয়ে যেত। এই জিনিসটা যেন আমরা মনে রাখি। তারা না থাকলে শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম না। পুলিশ না থাকলে বেশির ভাগ মানুষ রাস্তাঘাটে নিরবিঘ্নে চলাচল করতে পারতাম না। এই বিষয়টা আমাদের খেয়াল রাখা উচিত। পুলিশ বাহিনী মানুষের সেবায় কাজ করছে।

অনুষ্ঠানে কর অঞ্চল-৩ এর কমিশনার নাহার ফেরদৌস বেগম এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা-১৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, এনবিআর সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) মো. আব্দুর রাজ্জাক।

আজকের বাজার : এলকে/এলকে ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭