আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প জয়পুরহাটের কালাইয়ে পাল্টে দিয়েছে ৬০ জন নারীর ভাগ্য

জেলা শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে কালাই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল আতাহার প্রামানিক পাড়ার এক ভাগ্যজয়ী নারীর নাম মোছা. রোজিনা বেগম(৩৮)। কঠোর পরিশ্রম আর সাধনায় মাত্র তিন বছরেই তিনি দারিদ্রতাকে জয় করে হয়েছেন সফল নারী। সংসারে অভাব যখন কিছুতেই মিটানো যায় না। তখন প্রতিবেশীর মাধ্যমে খবর মিলে বর্তমান সরকারের ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের। অসহায় রোজিনা বেগমসহ আতাহার প্রামানিক পাড়া গ্রাম উন্নয়ন সমিতির ৬০ নারীর ভাগ্য বদলে দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগের একটি ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্প।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, কালাই উপজেলার জিন্দারপুর ইউনিয়নের অধীন আতাহার প্রামানিক পাড়া গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্যা হিসাবে ২০১৭ সালে ভর্তি হন রোজিনা।

কিছু দিন পরেই সঞ্চয়ের সঙ্গে প্রথম গ্রহণ করেন ১০ হাজার টাকা ঋণ। যা বর্তমানে রোজিনা বেগমের ৭ লাখ টাকার সম্পদে পরিনত হয়েছে। এলাকায় পরিচিতি পেয়েছেন আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের সফল নারী হিসেবে। পিতা-মাতার অভাবের সংসারে ৮ম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় রোজিনা বেগমের বিয়ে হয় প্রতিবেশী আত্তাব উদ্দিনের সঙ্গে। স্বামীর সংসারে বাড়ি ভিটা আর সামান্য জমি ছাড়া কিছুই ছিল না। অদম্য সাহসী রোজিনা নিয়তির কাছে হেরে যেতে রাজি নন। অভাবকে মাথায় নিয়ে অন্যের নার্সারি থেকে চারা কিনে ভ্যানে করে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করতেন। এতে যা লাভ হতো তাই দিয়ে কোন মতে খেয়ে- না খেয়ে চলতো সংসার। প্রথম ঋণের ১০ হাজার টাকায় ছোট আকারে নার্সারি গড়ে তোলেন। এখান থেকে লাভ হওয়া ১০ হাজার টাকায় আরও ৩০ শতাংশ জমি বন্ধক নিয়ে গড়ে তোলেন স্বপ্নের নার্সারি। নার্সারিতে বর্তমানে মাল্টা বারি-১ জাত, আম, জাম, লিচু, থাই পেয়ারা, চালতা, কাঁঠাল, জাম্বুরা, নারিকেল, বেদেনাসহ বিভিন্ন ফুল ও ফুলের চারা রয়েছে। চারা বিক্রিতে সহযোগিতা করে থাকেন স্বামী আত্তাব উদ্দিন। এরমধ্যে ঋণের পরিমানও বাড়তে থাকে। বর্তমানে সঞ্চয় রয়েছে ১৬ হাজার। ঋণ চলছে দ্বিতীয় দফায় ২০ হাজার টাকা। নার্সারির পাশাপাশি বাড়িতে রয়েছে তার গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগী । সংসারের আয় দিয়ে এক ছেলে ও এক মেয়ের লেখা পড়ার পাশাপাশি ৩০ শতাংশ জমি পত্তন নিয়ে চাষ করছেন ধান ও শাক সবজি। ঘরে নিয়েছেন বিদ্যুৎ সংযোগ, ঝলমল করছে আলো, কিনেছেন আসবাবপত্রও।

অভাবের সংসারে স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করে উন্নতি দেখে খুশি বলে জানালেন স্বামী আত্তাব উদ্দিন। এ রকম আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের সদস্য হয়ে ভাগ্য বদল করেছেন আতাহার প্রামানিক পাড়া এলাকার নি:স্ব অসহায় থেকে স্বাবলম্বি হয়েছেন রোকেয়া বেগম, মাছুমা বেগম, লতা বিবি, স্বপ্না বেগম সহ সমিতির ৬০ সদস্য। ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের সহায়তায় তাদের সংসারে এখন আর কোন অভাব নেই। কাজের মাধ্যমে সংসারে সফলতা অর্জন করায় সকলের চোখে মুখে হাসি। ৬০ জন সদস্য নিয়ে গঠন করা হয় দামথর গ্রাম উন্নয়ন সমিতি।

আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের সদস্যদের উন্নতি দেখে সদস্য ভুক্তির জন্য অনেকে আবেদন করলেও একটি গ্রামে গঠিত একটি সমিতিতে ৬০ সদস্যের বেশি সদস্য থাকার নিয়ম নাই। আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের কালাই উপজেলা সমন্বয়কারী মিনহাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগের একটি সফল কর্মসূচি হচ্ছে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প।

কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোবারক হোসেন পারভেজ বলেন, গ্রামাঞ্চলে গেলে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের সদস্যদের উন্নতি চোখে পড়ে। পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায় নিশ্চিত করতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্প।

এই প্রকল্পের জেলা সমন্বয়কারী রাকিবুল হাসান বলেন, জেলায় ৩২ ইউনিয়নে ২৮৮ টি গ্রামে ৮৬৩ টি সমিতি গঠন করা হয়েছে। সমিতির সদস্যদের বর্তমান সঞ্চয়ের পরিমান হচ্ছে ৫৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এরমধ্যে সদস্যদের নিজস্ব পুঁজি হচ্ছে ২০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, উৎসাহ বোনাস হিসাবে সরকারের দেয়া ১৫ কোটি ১১ লাখ টাকা। বর্তমানে সদস্যদের মাঝে ঋণ হিসাবে প্রদান করা হয়েছে ৯৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়ন সহ বাঁচার পথ খুঁজে পাওয়ার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসী করেছে। একজন সদস্য ২৫০০ টাকা সঞ্চয় জমার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে প্রদান করা হচ্ছে সম পরিমান বোনাস। ১০ হাজার টাকা ঋণের বিপরীতে ৮০০ টাকা লভ্যাংশ পরিশোধ করতে হচ্ছে এক বছরে। যা দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য অত্যন্ত সহনীয়। এতে করে দেশের প্রতিটি দরিদ্র পরিবারকে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের আওতায় নিয়ে বর্তমান সরকারের ভিশন ও লক্ষ্য অনুযায়ী ২০২২ সালের মধ্যে দেশকে শূন্য দারিদ্র্যে উন্নীত করা সম্ভব হবে আশা প্রকাশ করেন সফল হওয়া নারীরা। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান