সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে মাদকের গডফাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি যখন ধরি, ভালো করেই ধরি। মাদকের কোনো গডফাদারই ছাড় পাবে না। সে যে বাহিনীরই হোক না কেন।
প্রধানমন্ত্রীর সম্প্রতি ভারত সফর সম্পর্কে অবহিত করতে বুধবার (৩০ মে) বিকেল চারটায় তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ অভিযানে নিরীহ কেউ হয়রানির শিকার হয়নি। আর এ অভিযান হঠাৎ করে শুরুও হয়নি। দীর্ঘদিন থেকে নজরে রাখা হয়েছে মাদক পাচার ও চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িতের। মূলত তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা কাকে গডফাদার বলছেন সেটা আমি জানি না। যারা জড়িত, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আমাদের গোয়েন্দারা দীর্ঘদিন যাবৎ এটা নিয়ে কাজ করেছে। হঠাৎ করে এ অভিযান শুরু হয়নি। সমাজে কিন্তু এখন শান্তি ফিরে এসেছে।
মাদকের ভয়াবহতা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, মাদকের কারণে সমাজে আজ হাহাকার বইছে। মাদকের কারণে ছেলের হাতে বাবা, মেয়ের হাতে মা খুন হচ্ছেন। মাদক নিয়ে মিডিয়ায়ও তো তোলপাড়। তাহলে আজ অভিযান নিয়ে কেন এমন বিরোধিতা হচ্ছে।
অভিযানে কোনো নিরীহ মানুষ মরছে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মাদকবিরোধী অভিযানে গেলে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। আত্মরক্ষার অধিকার সবারই আছে। এমন পরিস্থিতিতে বন্দুকযুদ্ধে কেউ মারা গেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীরই বা কি করার আছে?
শেখ হাসিনা বলেন, এ অভিযানে এ পর্যন্ত ১০ হাজারের ওপর গ্রেপ্তার হয়েছে। কোন পত্রিকায় কত গ্রেপ্তার হয়, তা বলা হয় না।
শেখ হাসিনা বলেন,‘যখন কোথাও পুলিশ, র্যাব কোথাও অভিযানে যায়, আর সেখানে যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে থাকলে, কোনো নিরীহ ব্যক্তি শিকার হলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব।’
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মিলের প্রসঙ্গে টেনে প্রধনমন্ত্রী বলেন, আমাদের যে জয় বাংলা স্লোগান তা কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা থেকে নেওয়া। নজরুল যেমন কবি ছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও কবি ছিলেন। একজন সাহিত্যের কবি অন্যজন রাজনীতির কবি।
গত শুক্রবার দুই দিনের সরকারি সফরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা যান প্রধানমন্ত্রী। ওই দিনই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন করেন। এ সময় হাসিনা ও মোদির মধ্যে বাংলাদেশ ভবনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগদান করেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রি গ্রহণ করেন।
সাম্প্রতিক সফরে শেখ হাসিনা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। শেখ হাসিনা এই সফরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি এবং কলকাতায় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু জাদুঘর পরিদর্শন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বোন শেখ রেহানাও ছিলেন।
আজকের বাজার/ এমএইচ