আরব আমিরাতের বিপক্ষে ৭ রানের জয় পেলো বাংলাদেশ

সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ঘাম ঝড়িয়ে জিততে হলো সফরকারী বাংলাদেশকে। মাত্র ৭ রানের ব্যবধানে জয়ের স্বাদ পেয়েছে টাইগাররা। এই জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
প্রথমে ব্যাট করে আফিফ হোসেনের দুর্দান্ত হাফ-সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৫৮ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। আফিফ ৫৫ বলে ৭৭ রানে অপরাজিত থাকেন। জবাবে ১৯ দশমিক ৪ ওভারে ১৫১ রানে অলআউট হয় আরব আমিরাত।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচের মত আজও ইনিংস শুরু করেন দুই মেইকশিপ্ট ওপেনার মেহেদি হাসান মিরাজ ও সাব্বির রহমান।
প্রথম ওভার পুরো খেলে ১টি চারে ৭ রান তুলেন মিরাজ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাঁ-হাতি পেসার সাবির আলির করা দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে আউট হওয়া সাব্বির রানের খাতা খুলতেই পারেননি।
উইকেটে গিয়েই মারমুখী হয়ে উঠেন তিন নম্বরে নামা লিটন দাস। ৩টি চারে দারুন শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু তৃতীয় ওভারের পঞ্চম বলে লিটনকে থামান বাঁ-হাতি স্পিনার আয়ান আফজাল খান। ৮ বলে ১৩ রান করেন লিটন।
লিটন ফেরার কিছুক্ষণ পরই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন মিরাজ। আরব আমিরাতের ডান-হাতি পেসার জাওয়ার ফরিদের শিকার হয়ে ১২ রানে আউট হওয়া মিরাজ ১৪ বল খেলে ২টি বাউন্ডারি মারেন।
পাওয়ার-প্লেতে ৩ উইকেটে হারিয়ে ৪২ রান পায় বাংলাদেশ। এরপর ১১ ওভারের মধ্যে মিডল-অর্ডারের দুই ব্যাটারকে হারিয়ে চাপে পড়ে টাইগাররা। ইয়াসির আলি ৪ ও মোসাদ্দেক হোসেন ৩ রানে বিদায় নেন। দু’জনই আউট হন আরব আমিরাতের লেগ-স্পিনার কার্তিক মিয়াপ্পনের ডেলিভারিতে। এমন অবস্থায় ৭৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুকতে থাকে টাইগাররা।
তবে অন্যপ্রান্তে সতীর্থদের যাওয়া আসা দেখলেও এক প্রান্ত আগলে রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন চার নম্বরে নামা আফিফ। এতে ১৫তম ওভারেই শতরানে পৌঁছে যায় বাংলাদেশের স্কোর। ষষ্ঠ উইকেটে আফিফকে দারুণভাবে সঙ্গ দিচ্ছিলেন অধিনায়ক সোহান। আফিফকে স্ট্রাইক দিতেই মনোযোগি ছিলেন সোহান।
১৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ৫০ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান আফিফ। এজন্য ৩৭ বল খেলেন তিনি।
১৭তম ওভারে ১টি করে চার-ছক্কায় ১২ রান তুলেন আফিফ। ১৯তম ওভারের প্রথম বলে আফিফের ছক্কায় ওভার থেকে ১১ রান পায় বাংলাদেশ।
বাউন্ডারি দিয়ে ইনিংসের শেষ ওভার শুরু করেছিলেন আফিফ। আর শেষ বলে সোহানের ছক্কায় ১৩ রান পায় বাংলাদেশ। এতে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৫৮ রান তুলে বাংলাদেশ।
ষষ্ঠ উইকেটে ৫৪ বলে অবিচ্ছিন্ন ৮১ রান তুলেন আফিফ-সোহান। জুটিতে ২৯ বলে ৪২ রান করেন আফিফ। আর ২৫ বলে ৩৫ রান করেন সোহান।
৫৫ বলে ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৭৭ রানে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন আফিফ। সোহানের অনবদ্য ৩৫ রানের ইনিংসে ২টি করে চার-ছক্কা ছিলো। আরব আমিরাতের মিয়াপ্পন ৩৩ রানে ২ উইকেট নেন।
১৫৯ রানের টার্গেটে শুরুটা ভালো করার চেষ্টা করেছিলো আরব আমিরাতের দুই ওপেনার মোহাম্মদ ওয়াসিম ও চিরাগ সুরি। ২৬ বলে ২৭ রান তুলেন তারা। ১৫ রান তুলে রান ওয়াসিম আউট হলে পঞ্চম ওভারে ভাঙ্গে এ জুটি।
দ্বিতীয় উইকেটে ২২ বলে ৩৯ রান তুলেন সুরি ও আরিয়ান লাকরা। এতে ৮ ওভারে ৬৬ রান পেয়ে যায় আরব আমিরাত। উভয়েই শিকার হন মেহেদি হাসান মিরাজে। সুরি ২৪ বলে ৭টি চারে ৩৯ ও লাকরা ১৯ রান করেন।
এরপর আরব আমিরাতের মিডল-অর্ডারে জোড়া আঘাত হানেন দুই বাঁ-হাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম। অধিনায়ক চুন্দঙ্গাপয়িল রিজওয়ানকে ৫ রানে ফিজ ও বাসিল হামিদকে ২ রানে শিকার করেন শরিফুল। এতে ৯৩ রানে ৫ উইকেট হারায় আরব আমিরাত।
দলীয় ১শ রানের আগে আরব আমিরাতের ষষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটান মিরাজ। চার নম্বরে নামা উইকেটরক্ষক বৃত্তি অরবিন্দকে ১৬ রানে বিদায় করেন মিরাজ। আর ফরিদ ২ রান করে রান আউট হলে, ১০২ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে আরব আমিরাত।
অষ্টম উইকেটে ১৫ বলে ২২ রান তুলে আরব আমিরাতের রানের গতি সচল করেন আয়ান আফজাল খান ও মিয়াপ্পন। মিয়াপ্পন ৯ বলে ১২ রান করে ফিরেন। মিয়াপ্পন যখন ফিরেন তখন জিততে ১৮ বলে ৩৫ রান দরকার পড়ে আরব আমিরাতের।
নবম উইকেটে জুনায়েদ সিদ্দিকিকে নিয়ে আরব আমিরাতকে জয়ের স্বপ্ন দেখান আয়ান। শরিফুলের ১৮তম ওভারে ১৪ রান নেন আয়ান ও জুনায়েদ। এই ওভারে আয়ানের ক্যাচ ফেলেন মোসাদ্দেক।
জয়ের জন্য শেষ ২ ওভারে ২১ রানের সমীকরন- এমন অবস্থায় , মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের করা ১৯তম ওভার থেকে ১০ রান তুলেন দু’জনে। এতে শেষ ওভারে ১১ রানের দরকার পড়ে আরব আমিরাতের।
শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে ৩ রান নেন আয়ান ও জুনায়েদ। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ বলে আরব আমিরাতের শেষ ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন শরিফুল। ২ বল বাকী থাকতে ১৫১ রানে গুটিয়ে যায় আরব আমিরাত। আয়ান ১৭ বলে ২৫ ও জুনায়েদ ১১ রান করেন। বাংলাদেশের শরিফুল ২১ রানে ও মিরাজ ১৭ রানে ৩ উইকেট নেন। ৩১ রানে ২ উইকেট নেন মুস্তাফিজ।
আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর একই ভেন্যুতে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি খেলবে বাংলাদেশ ও আরব আমিরাত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ : ১৫৮/৫, ২০ ওভার (আফিফ ৭৭*, সোহান ৩৫*, মিয়াপ্পন ২/৩৩)।
সংযুক্ত আরব আমিরাত : ১৫১/১০, ১৯.৪ ওভার (সুরি ৩৯, আয়ান ২৫, মিরাজ ৩/১৭)।
ফল : বাংলাদেশ ৭ রানে জয়ী।